somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের বাঙালির পহেলা বৈশাখ উদযাপন

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১১ তারিখ একটি অনুষ্ঠান থাকার কারণে পহেলা বৈশাখ কোনো অনুষ্ঠান রাখা হয়নি। শুধু সন্ধ্যায় এক বড় ভাইয়ের বাসায় সবাইকে আসতে বলা হয়েছে পহেলা বৈশাখে বাঙালি খাবার খাওয়ার জন্য। আমি একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত। তাই সংগঠনের সবাই বড় ভাইয়ের বাসায় আসবে, আড্ডা হবে, গান বাজনা হবে ভালোই লাগবে এই জন্যই বাসা থেকে বের হওয়া। সহধর্মীনিকে বলেছিলাম তুমি কি যাবে? সে বললো না যাব না। আমি গেলে তোমার যে টাকাটা খরচ হতো মানে সিএনজি ভাড়া, টুকটাক বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা সেই টাকাটা আমাকে দিয়ে যাও তাহলেই হবে। আমি ভাবলাম তবুও ভালো ৫০০ টাকা দিয়ে রেহাই পাওয়া যাবে। কারণ সবাইকে নিয়ে বের হলে আমার আরো বেশি খরচ হতো তারচেয়েও বড় কথা ঝামেলা বেশি। অবশ্য আমার ছেলের বয়স আড়াই মাস, মেয়ের প্রায় আড়াই বছর। এই জন্য ছেলেকে নিয়ে দিনের বেলা প্রচণ্ড রোদে বের হওয়ার কোনো ইচ্ছেই হলো না। ৫০০ টাকায় দফারফা করে একাই বের হলাম। বাস কাউন্টারে এসে দেখলাম বাস খুবই কম। দুএকটা যা আসে তাতে পা রাখার জায়গা নেই। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ভাবলাম হেটে সামনের দিকে যাই, সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় আলপনা আঁকা হয়েছে সেটা দেখেই যাই। কলেজ গেট থেকে হাটা শুরু করলাম। গণভবনের সামনে থেকেই জ্যাম শুরু। চন্দ্রিমা উদ্যানের পুরো রাস্তা বন্ধ, লোকে লোকারণ্য। ওদিকে গেলাম না। আসাদ গেট হয়ে সংসদ ভবনের সামনে আলপনা আঁকা দেখতে দেখতে হাটছি। এখানেও রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে সেল ফোন দিয়ে ছবি তুলছি। হাটতে ভালোই লাগছে। অনেক মানুষ। বিভিন্ন রঙের পোশাক। বিভিন্ন বয়সের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা। ওদের আনন্দ দেখেই বেশি আনন্দ লাগছে। তখন আমার মেয়ের কথা মনে হলো। মন খরাপ করে ভাবছি নিয়ে আসলে পারতাম। কিন্তু আমার ফিরতে অনেক রাত হবে। আর রাস্তাঘাটের যে অবস্থা শিল্পকলা পর্যন্ত যেতে হলে হাটা ছাড়া অন্য কোন উপায় মনে হচ্ছে নেই।
এভাবেই ফার্মগেট আসলাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা। প্রচুর মানুষ। সবাই হাটছে। আমি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আবার হাটা শুরু করলাম। কাওরান বাজার এসে দেখি জ্যাম। মনে মনে ভাবছি ভালোই হয়েছে দাড়িয়ে থাকলেও কোনো লাভ হতো না। প্রচুর মানুষ হাটছে তাই আমারও হাটতে খারাপ লাগছে না। পৌছে গেলাম বাংলামোটর। বাংলামোটর থেকে রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হেটে ঢুকতে গেলাম পুলিশ বাধা দিয়ে বললো যাওয়া যাবে না। আমি অবাক। যাওয়া যাবে না মানে, আমি কি হেটেও যেতে পারবো না। পুলিশ বললো না। অন্য কোন রাস্তা আছে। আমাকে ডান দিক দেখিয়ে বললো ওদিক দিয়ে যান। আমার জানা মতে মগবাজার ছাড়া ওদিকে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। এতোটা পথ হেটে এমনিতেই ক্লান্ত তারপর এই ব্যাপার দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে ফুটপাথের পাশে দিয়ে ঢুকে পড়লাম।
এই অবস্থা দেখে আমি আমার এক বন্ধুকে ফোন করলাম। বন্ধুটা ফ্যামিলিসহ আসবে বলেছে। ওকে ফোন করে অবস্থা জানাবো। ফোন ধরে সে বললো আমিও বাংলামোটর। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ভালোমতো কথাও বলা গেলো না। আমি ওকে খুজে না পেয়ে আবার হাটা শুরু করলাম। রূপসী বাংলা পার হয়ে আমি বন্ধুটিকে পেয়ে গেলাম। সে পুরো ফ্যামিলি নিয়ে এসেছে সাথে ঘরের কাজের মেয়েটাও আছে। দুজনে দুই বাচ্চা নিয়ে হাটছে। ওদের সাথে আমিও যুক্ত হলাম। শাহবাগ পার হয়ে হেটে যাওয়াই মুশকিল। ধাক্কাধাক্কি চলছে। ভাবলাম সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে যাবো। মাঠে হয়তো এতো ভিড় হবে না। গেটে গিয়ে দেখলাম গেট বন্ধ। পুলিশ ৬টা পরে পার্কে ঢোকার গেট বন্ধ করে দিয়েছে। অবাক হলাম নিরাপত্তার জন্য প্রোগ্রাম বন্ধ করেছে কিন্তু পার্কে ঢোকার গেট বন্ধ করার কারণ কি? গেলাম চারুকলায়। ভিতরে কোনো অনুষ্ঠান না থাকার কারণে লোকজন কম। ওখানে বন্ধুর মেয়েটা নাগরদোলায় উঠলো। সে খুব মজা পেয়েছে। কিছুক্ষণ থেকে বের হলাম টিএসসিতে যাবার জন্য। পাবলিক লাইব্রেরি পার হয়ে নাটমন্ডলের কাছাকাছি যাওয়ার পর কিছু ছেলে বললো ওদিকে যাবেন না প্রচণ্ড ভিড় সমস্যা হতে পারে। সঙ্গে ফ্যামিলি আছে তাই বন্ধুটি বললো চল ফেরা যাক। ফিরবো এর মধ্যেই হঠাত্ করে একটা জটলা তৈরী হলো মোটামুটি ধাক্কাধাক্কাকি করে ফুটপাতে উঠে গেলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ভিড়ের মধ্যে দুটো মেয়ের বাজে অবস্থা। চিত্কার চেচামেচি কোনোরকমে বেঁচে ফিরলাম। কি অবস্থা কোনো কারণ ছাড়াই কিছু ছেলে অসত্ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজগুলো করে যাচ্ছে। এখানে বলার কিছু নেই বলতে গেলে আবার উত্তম মধ্যম খেতে হতে পারে। তাড়াতাড়ি বের হলাম। এর মধ্যে আমি বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি। নজরুল ইসলামের সমাধির সামনে গিয়ে আবার বন্ধুটিকে পেলাম। ওরা কোনো ঝামেলায় পড়েনি। দুই বন্ধু আলাপ করছি এই অবস্থা ১লা বৈশাখের। বিগত বৈশাখে সন্ধ্যার পর অনেক অনুষ্ঠান থাকতো লোকজনও বেশি থাকতো। কিন্তু এইরকম বাজে পরিস্থিতিতে পরতে হয়নি। মানুষের মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলেতো কদিন পরে নিরাপত্তার কথা বলে ১লা বৈশাখের সকল অনুষ্ঠানই বন্ধ করে দেবে প্রশাসন। মনে মনে ভাবছি ফ্যামিলি না এনে কি ভালোই না করেছি। আর ভবিষ্যতে আসবো কিনা সন্দেহ আছে। এই অবস্থা দেখে আমার একটি কথাই মনে পড়েছে হে ঈশ্বর এদের তুমি ক্ষমা করে দিয়ো এরা জানেনা এরা কি করছে। বাঙালিদের মনুষত্ব ও মূল্যবোধ নষ্ট করে ফেলছে। ভবিষ্যত্ প্রজন্ম নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি। সামনে আরো কতো কিনা দেখতে হয় কে জানে। বুকের ভেতরে একটা চাপা কষ্ট নিয়ে বের হয়ে এলাম। বন্ধুও তার ফ্যামিলিকে সিএনজিতে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা দুজন বড় ভাইয়ের বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম।
বড় ভাইয়ের বাসা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে বের হয়ে দেখলাম লোকজন কমে গেছে। মেলা সাঙ্গ হলো। রাস্তাঘাটে অনেক কাগজ, চিপয়ের খালি প্যাকেট সংসদ ভবনের সামনের আলপনা গাড়ির চাকায় অনেক জায়গায় লেপটে গেছে। দেখতে দেখতে বাসায় চলে এলাম। মনে মনে কষ্টটা থেকেই গেলো। পহেলা বৈশাখ। শুভ হোক।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×