পৃথিবীতে ধর্ম কতগুলো?
আমি অনেককেই প্রশ্ন করি, পৃথিবীতে ধর্মর সংখ্যা কত? যখন বলি, ৪৩০০টি তখন সাধারণ অনেকেরই চোখ কপালে উঠে। অনেকেই ধর্মকে প্রধান দুইভাবে ভাগ করে- ১) কিতাবীয় মানে ইব্রাহিমীয় ধর্ম বা একেশ্বরবাদী ধর্ম ও ২) দেবদেবীর ধর্ম।
কিতাবীয় ধর্মের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হল খ্রীস্টান, এরপর মুসলিম ও ইহুদী। ইহুদীর সংখ্যা শুধু ঢাকা শহরের মুসলিমদের চেয়ে বেশি নয়। এই ধর্ম তিনটির উৎপত্তির সাথে ইব্রাহিম এর ধারাবাহিকতা বিদ্যমান। অবশ্য ছোট ছোট আরো অনেকগুলো ধর্মই রয়েছে যারা একেশ্বরবাদী আবার খ্রীস্টান বা ইসলাম ধর্মের মধ্যেও বহু মতপার্থক্য রয়েছে। মুসলিমরা মনে করেন তাদের ধর্মের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ হলেও, তারা সৃষ্টির প্রথম পুরুষ আদমকে নবী মানেন বলে এটাই প্রাচীন ধর্ম।
ইউরোপে প্যাগানরাও দেবদেবীর বিশ্বাসী ছিল। এসব ধর্ম যেগুলো এখন প্রচলিত ও শক্তিশালী তাঁর কোনটিই ৫ হাজার বছরের চেয়ে পুরাতন নয়। তবে পৃথিবীতে ধর্মবিশ্বাসের সূচনা হয়েছে আরো বহু আগেই। যারা অগ্নিউপাসক বা সূর্য বা তার আগে পাথর, বড় বৃক্ষ ইত্যাদির পূজা করতো তারাও ধর্মবিশ্বাসীই ছিলেন। সেটা বিবেচনায় নিলে ধর্মবিশ্বাস আরো বহু প্রাচীন অর্থাৎ প্রধান ধর্মগুলোর বহু আগেই। আর বিজ্ঞান যেহেতু বলে, মানুষের আকষ্মিক আগমন ঘটেনি অর্থাৎ স্রস্টা কাউকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠাননি। বিবর্তনের ফলেই মানুষের উৎপত্তি হয়েছে। তাই প্রধান ধর্মগুলোর প্রথম মানুষ আগমনের আগেই যারা ছিলেন তারাও বিজ্ঞানের হিসাবে আদি স'ানীয় ধর্মগুলো ৫ হাজার বছরের আগেও বিদ্যমান ছিল।
ভারতে অনেকগুলো ধর্ম বিদ্যমান রয়েছে। বহু ভারতীয় মতাদর্শ বা ধর্মই বিলুপ্ত হয়েছে। এরমধ্যে প্রধান ধর্ম হিন্দু ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা বৈদিক ধর্ম। হিন্দু ধর্মও বিভিন্ন মতবাদের সমন্বয়ে একটি মতাদর্শ যা আবার ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন রকম। হিন্দুরা এবং আরো অনেক ধর্মবিশেষজ্ঞ দাবী করেন এটিই প্রাচীনতম ধর্ম। এছাড়াও ভারতে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ধর্মও গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম। ভারতে আরো বহু স্থানীয় লৌকিক ধর্ম বিশ্বাস রয়েছে যা হিন্দু ধর্মেরই ভিন্নরূপ বলা যায়। যেমন শাক্ত ধর্ম। তবে একদা চার্বাক দর্শনের অনুসারীও ভারতে ছিল যা বিলুপ্ত বলেই মনে হচ্ছে। ভারতের মতো ইরানেও বহু ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে জরথ্রাস্ট, বাহাই, ইয়াজিদি প্রধান। ইসলামের আগ্রাসনে ইরানের বহুধর্মই বিলুপ্ত হয়েছে।
চীন, জাপান, কোরিয়াতে অধিকাংশ মানুষই নাস্তিক বা ধর্মহীন। তবে ওখানে প্রধান ধর্ম বৌদ্ধ ছাড়াও কনফুসিয়াসসহ স্থানীয় লৌকিক ধর্ম রয়েছে।
গল্পগ্রন্থ ও ধর্মগ্রন্থ
গিলমামেশকে মহাকাব্যই বলা হয়। এটা আনুমানিক ৪১০০ বছর আগে রচিত হয়। বাস্তবিক এটিই সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যকর্ম। পারস্য দেশের গল্প। টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকাতে রাজত্ব করতেন গিলগামেস। সে দেবি আর মানুষের পুত্র। রাজত্ব, বন্ধুত্ব আর অমরত্বের খোঁজ। হোমারের ওডিসি আর ইলিয়াড দেবতা আর মানুষের গল্প। দেবতাদের বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া মানুষদের নিয়েই গল্প। দেবতাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা, লোভ-লালসার বলি হতে হয় মানুষকে। আবার মানুষ ও দেবতা/দেবীর প্রণয়ও ঘটে। ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্য হল রামায়ণ ও মহাভারত। রামায়ণ মহাভারত জুড়েও দেবতা ও মানুষের গল্পই রয়েছে। রামায়ণ ও মহাভারত রচিত হয় খৃস্টপূর্ব তৃতীয়/চতুর্থ শতকে। এ দুটি অবশ্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে। তবে এগুলো আসলে সাহিত্য অর্থাৎ মহাকাব্য হিসাবেই খ্যাত। সম্ভবত রামায়ণ মহাভারতের আগে বা সমসাময়িক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্মকে অনেকে বলেন নাস্তিক্যবাদী ধর্ম। বৌদ্ধ ধর্মের মূল গ্রন্থ ত্রিপিটক। যা সংকলীত হয় গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর। গৌতম বুদ্ধের সম্ভবত হাজার বছর (সাতশ বছরও হতে পারে) পূর্বেই আরবে আবির্ভাব ঘটেছিল মুছা নবীর। তাঁর অনুসারীদের ইহুদী বলা হয়। তাদের ধর্মগ্রন্থ তানাখ বা তাওরাত। মুসলমান ও খৃস্টান সম্প্রদায় এই কিতাবকে স্বীকার করে। প্রচলিত কেতাবী ধর্মগুলোর মধ্যে মুছা নবীর ইহুদী ধর্মই প্রাচীন। মুছাই পৃথিবীর মানুষের কাছে দেবদেবীর পরিবর্তে ঈশ্বরের ধারণা দেন। তিনি ঈশ্বরের ডাক শুনেন এবং ইহুদীদের মাঝে গিয়ে ঘোষণা দেন, তিনি ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ এবং ইহুদীদের রক্ষা করতে এসেছেন। ইহুদীরাও জানতেন তাদের রক্ষা করতে একজন কেউ আসবেন। একই রকমভাবে ইশা বা যিশুও আসেন ঈশ্বর বা আল্লার প্রেরিত পুরুষ হিসাবে। তাঁর ধর্ম খ্রিস্টান এবং ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিন বা বাইবেল। যিশুর ছয় শ বছর পরে আসে ইসলাম ধর্ম। মুসলমানের ধর্মগ্রন্থ কোরআন। মুসলমানরা যদিও দাবী করেন ইসলামই শেষ ধর্ম। তবে বর্তমানে প্রচলিত কয়েকটি ধর্ম এর পরেও এসেছে এবং টিকে রয়েছে।