জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বরফ পড়ে যেসব জায়গায় তার মধ্যে এই শহর অন্যতম৷ জাপানের এই প্রদেশটা রাশিয়ার কাছাকাছি৷ এখানে শীতকালে আকাশের সাথে জমিনের ব্যবধান থাকেনা৷ কোন খালি ময়দানে তাকালে মনে হয় আকাশ ভাঁজ হয়ে নেমে এখানে তার আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে৷ নাগোইয়া শহরে বরফ নেই৷ হঠাৎ বরফ ছাড়া শহরে এসে ভালো লেগেছিলো৷ বেশি ভালো লেগেছে বিমানবন্দর৷ এই শহরের বিমাবন্দরটা সমূদ্রের মধ্যে৷ ইমিগ্রেশন পার হয়ে বোর্ডিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে একসাথে বিমানের ওঠানামা আর আর সমূদ্রে চলাচলরত বিশাল বিশাল জাহাজ দেখা যায়৷ বিমানবন্দরে রাখা সারি সারি বিমানবহর৷ অন্যদিকে সমূদ্রে শত শত জাহাজ নোঙ্গর করা৷ এই বিমানবন্দরে নামতে গিয়ে অন্য ধরণের অনুভূতি হয়েছিলো৷ মনে হচ্ছিল সমূদ্রের মধ্যে নেমে যাচ্ছে বিমান৷ নিচে টলমল নীল রঙের পানির উচ্ছ্বাস৷ বিমানের প্রপেলারের বাতাসে সমূদ্রের নীলাঞ্জনার আনন্দে নৃত্যের দেখা মেলে৷ বিশ্বের বহুদেশে বিমান থেকে নামার অনুভূতি হয়েছে৷ পানিতে নামার এরকম আনন্দের অনুভূতি কোথাও পাইনি৷ ফেরার পথে আমাদের গ্রুপ থেকে দূরে গিয়ে একটা সোফায় বসে এই অপরূপ দৃশ্য দেখছিলাম৷ এমন সময় ঘোষণা হলো ফ্লাইটে এক ঘন্টা দেরি হবে৷ আমার আনন্দ তখন দেখে কে৷ আরো এক ঘন্টা সমূদ্র দেখতে পাবো৷ সাথে বিমানের ওঠানামা৷ আমার সাথে ডমিনিকান রিপাবলিকের জোমাইরি৷ তার সাথে মেক্সিকোর পেরলা আর তিউনেশিয়ার জাজিয়া৷ এক ঘন্টা হাতে পেয়ে তারাও খুশী৷ কারণ এক ঘন্টা ফ্রি ডিউটি শপে শপিং করতে পারবে৷ এই তিন নারী আমাকে এসে বলেছে তাদের সাথে যেতে৷ আমি বললাম, আমি সমূদ্র দেখবো৷
এবার নাগোইয়া যাওয়ার কারণ বলছি৷ নাগোইয়া হলো টয়োটার হেড কোয়ার্টার৷ এই শহরে টয়োটা গাড়ির ফ্যাক্টরির অবস্থান৷ সেখানে টয়োটার একটা মিউজিয়ামও আছে৷ মিউজিয়ামে তাত শিল্প থেকে গাড়ি শিল্পের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার ইতিবৃত্ত দেখা যায়৷ এছাড়াও টয়োটাকে ঘিরে নাগোইয়া শিল্প এলাকায় তৈরি হয়েছে হাজার হাজার ছোট বড় কারখানা৷ একটা শিল্পকে ঘিরে কীভাবে হাজার শিল্প ফ্যাক্টরি কাজ করে; শিল্প ক্লাস্টার কীভাবে জন্ম নেয়; ক্লাস্টা ভিত্তিক শিল্প হলে কতটা সাশ্রয় হয় তা কাছ থেকে দেখেছি৷ তখনি জানলাম একটা কার তৈরিতে ৩০ হাজার পার্টস ব্যবহার করা হয়৷ চাট্টিখানি কথা নয়৷ টয়োটা বড় জোর দুইশ থেকে আড়াইশ পার্টস তৈরি করে৷ বাকীটা অন্য কোম্পানি তৈরি করে টয়োটার কাছে সরবরাহ করে৷ টয়োটার কারখানায় সেই পার্টসগুলো অ্যাসেম্বল বা জোড়া লাগানো হয়৷ ব্যস তৈরি হয়ে যায় গাড়ি৷ এই যে একটা শিল্পকে ঘিরে একটা প্রডাক্টশন চেইন আর অনেক শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে এটাই ক্লাস্টার৷ একটা শিল্পকে ঘিরে হাজার হাজার ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প স্থাপিত হয়৷ সেগুলো খালি চোখে দেখা যায়না৷ অথচ এই শিল্পগুলোই পুরা অর্থনীতির প্রাণ৷ জাপানের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে এই ক্লাস্টার৷ আমাদের এমনই কয়েকটি কারখানায় নিয়ে যাওয়া হলো৷ এসব কোম্পানি টয়োটা গাড়ির পার্টস সরবরাহ করে৷ একটা কোম্পানিতে গেলাম৷ তাদের বার্ষিক টার্ণওভার আমাদের দেশের যে কোন বড় কোম্পানির চেয়েও বেশি৷ অথচ লোকবল হাতে গোনা৷ সিকিউরিটি বাদে পচিশ জনের মতো৷ এদের কাজ হলো হিসাব নিকাশ৷ তাহলে কারখানা চালায় কে! কারখানার ভেতরে গিয়ে তো চোখ চড়াক হয়ে গেছে৷ কোন লোক নেই৷ সুনসান পরিবেশে মেশিনের শব্দ৷ কোথাও লোকজনের দেখা নেই৷ প্রোডাক্ট বের হচ্ছে প্যাকিং হচ্ছে৷ প্যাকিংয়ের পর ওয়ার হাউজে চলে যাচ্ছে৷ সব অটোমেটিক৷ একেক কাজের জন্য একেক ধরণের রোবট৷ মেশিন নষ্ট হলে তা রোবটই মেরামত করে৷ কারখানায় ঢুকানোর আগেই আমাদের বলে দেয়া হয়েছিল ভিডিও করা যাবেনা৷ মোবাইল রেখেই কারখানায় ঢুকতে হয়েছিল৷ জাপানিজরা চায়নিজদের জমের মতো ভয় পায়৷ প্রযুক্তি নকল হওয়ার ভয়৷ তাদের সিকিউরিটি হলো কোনক্রমে যাতে এই প্রযুক্তি বাইরে যেতে না পারে৷ কোন ভিডিও যাতে না হয়৷
জাপানে কোন ধরণের অনুষ্ঠান হলে প্রথম ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে সিকিউরিটি বিষয়ে ব্রিফিং দেয়া হয়৷ তাদের কথা শুনলে মনে হবে এই অনুষ্ঠান চলাকালেই ভূমিকম্প শুরু হবে৷ কারখানা ভিজিটের আগেও প্রথমে বসিয়ে ব্রিফিং৷ কোন জায়গা থেকে বের হতে হবে৷ কোথায় গিয়ে দাড়াতে হবে৷ দুর্যোগ শুরু হলেও বা কী করতে হবে৷ এই সব জানানো হয়৷ তারপর ভিজিট শেষে পুনরায় মতবিনিময় সভা৷ সেই মতবিনিময় সভা শুরুর আগে আরেকবার ব্রিফিং৷ জাপান এখন কর্মী শূন্য কারখানার দিকে ঝুঁকেছে৷ মানব কর্মীরা শুধু হিসাব নিকাশ রাখবে৷ অ্যাকাউন্টস, হিউম্যান রিসোর্স আর মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট৷ এই তিনে মিলে কোম্পানি৷ আগামী পৃথিবীর একটা বার্তা পাওয়া গেল৷ একশ বছর পর শিল্প কারখানায় আর মানুষ কাজ করবেনা বলেই মনে হলো৷ মনে মনে ভাবলাম, তাহলে শ্রমিককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কমিউনিজমের কী হবে! শ্রমিক না থাকলে কমিউনিজম টিকবে কীভাবে! সিদ্ধান্তে আসতে দেরী হলোনা৷ মার্কসবাদও বড়জোর একশ বছর টিকতে পারে৷ যন্ত্র এসে মতবাদ পর্যন্ত খেয়ে ফেলবে৷
এবার টয়োটার কারখানা ভিজিটের কথা বলি৷ আমি সৌভাগ্যবানদের একজন যে কারখানা দেখার সুযোগ পেয়েছে৷ আমাদের অভিনন্দন জানাতে টয়োটার একজন আসলেন ৷ খাটি বাংলায় বললেন, 'স্বাগতম৷ আপনাকে পেয়ে প্রাণটা ঠান্ডা হয়ে গেলো৷' কোথা থেকে শিখেছে কে জানে! এই টয়োটাতে গিয়েই অমূল্য কিছু বিষয় শিখেছি৷ চলুন এর একটা আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক৷ এটা হলো জাস্ট ইন টাইম৷
জাস্ট ইন টাইম জিনিসটা আসলে কী! টয়োটা বছরে ১০ মিলিয়ন গাড়ি উৎপাদন করে৷ মানে এক কোটি গাড়ি৷ এই এক কোটি গাড়ির দশ হাজার গাড়ি রাখার জন্যও তাদের ওয়ার হাউজ নেই৷ তাহলে গাড়িগুলো যায় কোথায়? গাড়ি উৎপাদনের পর সরাসরি জাহাজে ওঠে যায়৷ সেই জাহাজই তাদের প্রাথমিক ওয়ার হাউজের কাজ করে৷ জাহাজে করে সারা পৃথিবীতে গাড়ি চলে যায়৷ বিশ্বব্যাপী টয়োটা গাড়ি বিক্রতাদের শো রুম আর তাদের ওয়ার হাউজই টয়োটার গাড়ি রাখার স্থান৷ চাহিদার সাথে যোগানের কোন গ্যাপ নেই৷ এ কারণে গাড়ি উৎপাদিত হলেও তা ওয়ার হাউজে রাখার দরকার পড়েনা৷ এটা তো গেলো গাড়ি তৈরির পরের ধাপের কথা৷ গাড়ি তৈরির যে পার্টসগুলো লাগে তাও স্টোর করে রাখা হয়না৷ যতগুলো পার্টস যেদিন লাগবে সেদিনই চলে আসে৷ এটাই জাস্ট ইন টাইম৷ জাপানী কায়দা যতই দেখেছি বিস্ময়ের সীমা কাটাতে পারিনি৷
সেই জাস্ট ইন টাইমের দেশে ফ্লাইট এক ঘন্টা দেরী৷ ভাবা যায়! কোম্পানিটাও জাপানের বিখ্যাত এয়ারলাইন্স৷ অল নিপ্পন এয়ার ওয়েজ সংক্ষেপে এনা৷ আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন জাপানি নারী রিকা ইয়ামাজাকি৷ আমরা তাকে ডাকি রিকা সান৷ ফ্লাইট লেট শুনে হন্তদন্ত হয়ে কাছে এলেন রিকা সান৷ দুঃখ প্রকাশ করলেন জাপানি কায়দায়৷ বললেন, টেনশন করার কিছু নেই৷ এক ঘন্টা মানে এক ঘন্টা৷ তারপরেই আমরা হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো চলে যাবো৷ সাপ্পোরো আওয়ার সুইট হোম৷ রিকা সান এতগুলো মানুষের মধ্যে আমার প্রতি খেয়াল রাখেন৷ কোন কিছু বলতে না বলতেই তা হাজির৷ কোন খাবারে পর্ক আছে কী না তা খুব সতর্কভাবে যাচাই করেন৷ তারপর খেতে বলেন৷ রিকা সানই বলতেন, তোমার চেহারা কেমন জানো? আমি বলি- কেমন? তিনি জবাব দেন, জাপানি মেয়েদের খুব টানবে৷ আমি হাসতে হাসতে বলতাম, তাহলে জাপানেই থেকে যাই কী বলেন৷ জাপান থেকে যেদিন চলে আসি তার আগের রাতে পার্টি ছিল৷ পার্টি শেষ হয়ে গেছে৷ রুমে ফেরত যাবো৷ এসময় রিকা সান দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন৷ বললেন, আমার ভাইটা চলে যাচ্ছে৷ কষ্ট হচ্ছে৷ জাপানিদেরও মায়া আছে! কষ্ট পায়৷ মানুষের মায়া, ভালোবাসা অদ্ভুত৷ এ ভালোবাসার কারণেই সাপ্পোরোকে রিকা সানের সাথে আমারো সুইট হোম মনে হচ্ছিল৷ রিকা সান আমার ফেসবুকেই যুক্ত ছিলেন৷ কিছু দিন আগে শুনলাম তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন৷ মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগেও ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়েছিল। স্বজন হারানোর শোক পেয়েছিলাম৷ আমি তার পরিবারের কাছে সমবেদনার ম্যাসেজ পাঠিয়েছি৷ সেটা তার পরিবারের লোকজনকে পড়িয়ে শুনানো হয়েছে৷ হয়তো সাপ্পোরো আবরো যাওয়া হবে৷ তবে রিকা সানের সাথে দেখা হবেনা৷ এটা ভাবতেই আনমনা হয়ে যাই৷
যাই হোক, অপেক্ষা না কী অনেক কঠিন বিষয়৷ আরবীতে একটা প্রবাদ আছে আল ইন্তেজারু আসাদ্দু মিনাল মওতি৷ অপেক্ষা মৃত্যূর চেয়েও কঠিন৷ এবার আমি এটা মানতে পারলাম না৷ চোখের নিমিষেই এক ঘন্টা পার হয়ে গেলো৷ বিমান বন্দরের সুসজ্জিত লাউঞ্জে বসে সমূদ্র, জাহাজ, বিমান ও বিমানের ওঠানামা দেখা৷ কী অভূতপূর্ব দৃশ্য৷ বিমান নামছে৷ মনে হচ্ছে পানিতে পড়ে গেলো৷ মনে হচ্ছে পানিতে নেমেই আবার পানির ওপর দিয়ে চলছে৷ আমাদের কক্সবাজারে এমনি একটা বিমাবন্দর হতে যাচ্ছে৷ গর্বে সিনা টানটান হয়ে যায়৷ শত হলেও তো নিজের দেশ৷
ফ্লাইটে ওঠার জন্য সবাই লাইনে দাড়িয়ে৷ করোনার আগের পৃথিবী৷ মানুষের মধ্যে কতটা উচ্ছ্বাস কতটা আনন্দ৷ বিমাবন্দরগুলোতে নানা দেশের নানা জাতির সম্মিলন৷ করোনার মধ্যেও ভ্রমণ করেছি৷ সব যেন কোথায় উবে গেছে৷ এখন মানুষের হাসি নেই৷ স্বজনদের বুকে জড়িয়ে ধরা নেই৷ হ্যান্ডশেক নেই৷ জাপানিরা পাবলিক প্লেসে হৈ চৈ করেনা৷ তবে আমাদের গ্রুপে এগারো জন মানুষ৷ দেশের সীমানা পেরিয়ে কখন যে এক হয়ে গেছে টেরও পাইনি৷ হৈ চৈয়ের শিরোমণি হলাম আমি৷ আমাদের দেশটা যে কত মজার তা যারা আমার সাথে মিশেছে তারা সারা জীবন মনে করবে৷ একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমাদের দেশে কী সরকারি কর্মকর্তাদের এসিআর বা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন দেয়া হয়৷ তারা বলে অবশ্যই৷ আমি জানতে চাইলাম কে কাকে দেয়৷ তারা জানালেন, বছরে একবার সিনিয়র অফিসার জুনিয়ার অফিসারকে দেয়৷ এর ভিত্তিতেই প্রমোশন হয়৷ এবার আমি বললাম, আমাদের দেশেও এসিআর আছে৷ তবে তা রেসিপ্রোকাল৷ জুনিয়র অফিসার প্রতিদিন সিনিয়রকে দেয়৷ আর সিনিয়র অফিসার তার বিনিময়ে বছরে একবার জুনিয়রকে এসিআর দিয়ে থাকে৷ সবাই হাসতে হাসতে শেষ৷ কারণ সব দেশেই জুনিয়র সিনিয়রকে তেল দেন৷ গল্পের মধ্যেই সময় কাটছে৷ ফ্লাইটে ওঠার সময়ও আমাদের মাঝে সেই উচ্ছ্বাস৷ একসময় আমার বোর্ডিং পাস বের করতে বলা হলো৷ আমি বোর্ডিং পাস দিলাম৷ ফ্লাইটের কর্মীরা বোর্ডিং পাসের অর্ধেক ছিড়ে বাকীটা হাতে দিলেন৷ সাথে একটা খাম৷ খাম দেখে তো অবাক৷ এটা আবার কী! খুলে দেখি তার ভেতর এক হাজার ইয়েন৷ আর জাপানি ভাষায় কী যেন লেখা একটা কাগজ৷ রিকা সানকে জিজ্ঞাসা করলাম, কাগজে কী লিখেছে৷ ইয়েন দিলো কেন? রিকা সান জানালেন, এক ঘন্টা বিলম্বের জন্য ক্ষমা চেয়েছে৷ আর এক ঘন্টার ক্ষতিপূরণের এক হাজার ইয়েন দিয়েছে৷ এটা ইন্সুরেন্সের টাকা৷ মনে মনে ভাবলাম, তবে আরো কয়েকটা ঘন্টা কেন বিলম্ব হলোনা৷ টাকাও পেতাম বিমানবন্দরে বসে সমূদ্রও দেখতাম৷
ভাবলাম ব্যাপারটা এখানেই শেষ৷ কিন্তু তা নয়৷ ফেরার পথে আকাশে ক্রুরা সবাই ফ্লাইটের সামনের অংশে জড়ো হলো৷ মাথা নুইয়ে এক ঘন্টা বিলম্বের জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা৷ জীবনে আর কত কী দেখার বাকী আছে৷ পাইলটকে কয়েকবার ক্ষমা চাইতে শুনলাম৷ জানালেন, সাপ্পোরোর আবহাওয়া খারাপ থাকায় তারা ফ্লাইট ছাড়তে পারেননি৷ পুরা পথে খাতির যত্ন বেড়ে যায়৷ খাবারের পর খাবার৷ একটা শেষ না করতেই আরেকটা হাজির৷ যথারীতি বিমান সাপ্পোরোতে পৌঁছে যায়৷ যখন ফ্লাইট থেকে নামছিলাম তখনো ক্রুরা দড়জায় দাড়িয়ে৷ একইভাবে মাথা নুইয়ে ক্ষমা প্রার্থনা৷ জাপানিরা এমনই৷ আমি ওদের দিকে তাকাইনি৷ নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিলো৷ আমার মনে হতে থাকলো আমরা কেন এমন হলাম না৷