somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল হয়ে ওঠেছিল৷

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বলে নিচ্ছি৷ ইসরায়েলের নেসেটে নেতানিয়াহুর আরামদায়ক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে৷ এর সুবাদে দুটি আইন পাস করে নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রীর পদকে সুরক্ষিত করেছিলেন৷ নিজের চেয়ারকে নিরাপদ করার যত কৌশল রয়েছে সবই সম্পন্ন করেছেন নেতানিয়াহু।

তিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে নেসেটে একটা আইন পাস করেন৷ আইনটির বিষয়বস্তু হলো, সংসদ থেকে যেসব আইন পাস করা হবে তা সুপ্রীম কোর্ট বাতিল বা সংস্কার করতে পারবেনা৷ এতে ফুসে উঠেছিল বিরোধীরা৷ সুধী সমাজ থেকে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলো। আদালতের ক্ষমতা কমানো হয়েছে বলে সংক্ষুব্ধ হয়েছিল খোদ সুপ্রীম কোর্ট৷ এরপর সুপ্রীম কোর্ট এই আইনটি স্বউদ্যোগে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ সুপ্রীম কোর্টের ১৫ জন বিচারপতি আইনটি চ্যালেঞ্জ করে শুনানি শুরু করে৷

আগে সুপ্রীম কোর্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করতে পারতো। নেতানিয়াহু আরেকটি আইন পাস করে সেই ক্ষমতাও বাতিল করেছিলেন। এর মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্ট ইসরায়েলের কোনো প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের ক্ষমতা হারায়৷ আদালত এই আইনটিও পর্যালোচনা শুরু করেছিলো।

তবে সুপ্রীম কোর্ট ওই আইন দুটি বাতিল করলে নেতানিয়াহুর বিশাল পরাজয় হতো। তার পদত্যাগ ছাড়া কোন উপায় ছিলনা৷ কারণ এই আন্দোলনে নেতানিয়াহুর বিরোধিরা যেমন রয়েছেন তেমনি ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিভাগে সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা, সাবেক প্রধান বিচারপতি, আইনজীবী ও শীর্ষ ব্যববসায়ীরাও ছিলেন৷ এক পর্যায়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শত শত সামরিক ও এয়ারফোর্সের পাইলট আন্দোলনে যোগ দেন। তারা নিজেদের সার্ভিসের বিষয়ে সরকারের কাছে রিপোর্ট দেবেন না বলে হুমকিও দেন৷

ঠিক এ মুহূর্তে হামাস ইসরায়েলের ওপর আক্রমন করে৷ সাথে সাথে নেতানিয়াহু যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে গাজার ওপর ঝাপিয়ে পড়েছেন। এই হামলা ব্যক্তি নেতানিয়াহুর জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে এসেছে৷ এতে তিনি বিরোধীসহ সবার অকাট্য সমর্থন পেয়েছেন৷ সংকট উত্তোরণে সবাই একযোগে মনযোগ দিয়েছেন৷ সামরিক কর্মকর্তারা আন্দোলন ছেড়ে যুদ্ধে ফিরে গেছেন। আইন সংস্কারের আন্দোলন সাথে সাথেই চাপা পড়ে গেছে৷

এছাড়াও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির পৃথক মামলা চলছে। মামলা নম্বর ১০০০, ২০০০ ও ৪০০০। ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা নম্বর ১০০০ এবং ২০০০-এ জালিয়াতি এবং বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও মামলা নম্বর ৪০০০ এ জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
এসব মামলায় নেতানিয়াহুকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার এসব মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি পিছিয়ে গেছে। যুদ্ধ নেতানিয়াহুকে দুর্নীতির মামলার ঝামেলা থেকে নির্ভার করে দিয়েছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার পদত্যাগের আন্দোলন বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো। তখন জিম্মিদের ফেরত আনার ইস্যুটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই আন্দোলনেই ইসরাইলের রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছে। তার পদত্যাগের বিষয়টি অনেকে ভুলতে বসেছিলেন। তবে বিরোধীরাও কম যায়না। তারা আবার নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তবে যুদ্ধ চলাবস্থায় এ আন্দোলন সুবিধা করতে পারবেনা বলেই মনে হচ্ছে।

একটা বিষয় খেয়াল করে দেখেছি, নেতানিয়াহু রাজনৈতিকভাবে যখনি বিপদে পড়ে হামাস তখনি ইসরায়েলে হামলা করে৷ এবার হামাসের হামলা নেতানিয়াহুকে পুনর্জন্ম দিয়েছে। নেতানিয়াহু ছাড়া লিবারেল অন্যরা যখন ইসরাইলে ক্ষমতায় থাকে তখন কোন হামলা হয়না৷ এই সূত্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই প্রয়োগ করা যায়৷ এমনকি ভারত পাকিস্তানে যখনি রাজনৈতিক সংকট লাগে; তখনি যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে৷

অনেকে বলতে পারেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। এতে তিনি বিপদে পড়বেন। তবে এসব তিনি থোড়াই পরোয়া করেন। আন্তর্জাতিক আদালত সামলানোর দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে তিনি যুদ্ধে মনোনিবেশ করেছেন। বিশ্বজনমত ও আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে গাজার রাফায় হামলা চালাচ্ছেন। যুদ্ধই তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। যুদ্ধই তাকে আগামি দিনগুলোতে রক্ষা করবে। একারণে গাজার যুদ্ধ তিনি সহজে শেষ করবেন বলে মনে হয়না। এই যুদ্ধ তার ক্ষমতার চাবিকাঠি; প্রাণভোমরা। তিনি এটিকে জিইয়ে রাখবেন। এ কারণে তিনি গাজায় হামাসের সাথে ইঁদুর বিড়াল খেলছেন। সময় পার করছেন। গাজার বেসরকারি আবাসিক ভবনগুলো মাটিতে মিশিয়ে দিতেই তার আগ্রহ। দু চারজন সেনা সদস্যের মৃত্যু তার বড় পুঁজি। সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে যতদিন নেতানিয়াহুর চেয়ার টেকসই না হবে: ততদিন গাজার যুদ্ধ চলবে। ততদিন সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জীবন দিয়ে যেতে হবে।

নেতানিয়াহু ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মৃত্যু ব্যবসায়ী।

#All eyes on Rafa
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×