১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae উক চায়ে। তিনি আন্তর্জাতিক ট্রেড বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। কোরিয়ার গণমাধ্যমে ট্রেড বিষয়ে তার বক্তব্য প্রকাশ হতে দেখেছি। জাপান তখন ঘোষণা করেছে কোরিয়ার কাছে কোন প্রযুক্তি রপ্তানি করবেনা। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টান টান উত্তেজনা শুরু হয়েছে। আমি ক্লাসে প্রফেসরকে জিজ্ঞাসা করলাম, জাপান এ ধরণের ঘোষণা দিতে পারে কী না? প্রফেসর বলছিলেন, আন্তর্জাতিক ট্রেডে কেউ সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করতে পারেনা। কিছু করতে হলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে করতে হবে। জাপান যেটা করেছে তা শিশুসুলভ উন্নাসিকতা। প্রফেসর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, শিশুসুলভ উন্নাসিকতা স্নব বুঝো? আমি বললাম বুঝবোনা কেন! তিনি বললেন, বাচ্চারা যখন কিছু না বুঝেই হুট করে বড়র ভাব নেয়। প্রফেসরের কথায় পুরা ক্লাস হেসে উঠলো। প্রফেসর বললেন, এটি নিয়ে আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা- ডাব্লিউটিওতে যাবো।
আজ অনেক দিন পর বিষয়টা মনে পড়লো। প্রশাসনের একটা বিষয় আমাকে বড় পীড়া দেয়। সেটি হলো যিনি যে বিষয়ে বিদেশ থেকে পড়াশুনা করে এসেছেন তিনি সে বিষয়ে কাজের খুবই কম সুযোগ পান। আমিও পাইনি। তবে ট্রেড বিষয়টা ফলো করি। বিশেষ করে ভারতের সাথে বাণিজ্যের বিষয়টা অনুসরণ করে এসেছি। কোরিয়ায় থাকার সময় আমার মনে আছে ২০২০ সালের জুন মাসে ভারত বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট দিয়েছিলো। কয়েকদিন আগে থাইল্যান্ডে বিমসটেকের সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই সরকার প্রধানের বৈঠকের কয়েকদিনের মধ্যেই ভারত হঠাৎ করে ওই ট্রানশিপমেন্ট বাতিল করেছে। ভাবলাম এটি নিয়ে একটা একাডেমিক ডিসকাশন করা যায়। সত্যি কথা হলো ভারত যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রফেসরের ভাষায় শিশুসুলভ উন্নাসিকতা ছাড়া কিছুই নয়। আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকুন। দেখবেন আপনিও একমত হবেন।
প্রথম কথা হলো, ভারত একতরফাভাবে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ডাব্লিউটিও'র আইন লঙ্ঘণ করেছে। বাংলাদেশ চাইলে এ বিষয়ে ডাব্লিউটিওতে অভিযোগ দিতে পারবে। কারণ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এ সুবিধার আওতায় ভারতের স্থল বন্দর ব্যবহার করে নেপালে ও ভুটানে রপ্তানীর মালামাল পাঠান। এছাড়াও ভারতের বিমান বন্দর ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন মালামাল প্রেরণ করা হয়। এই বাণিজ্য চলমান প্রক্রিয়া। সব সময়ই প্রচুর মালামাল প্রেরণের বিষয়টি পাইপ লাইনে থাকে। এজন্য এলসি খুলতে হয়। এখানে দুই দেশের ব্যবসায়ী, ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জড়িত। নেপাল ও ভুটানে স্থলপথে সড়কে মালামাল প্রেরণ করা হয়। এতে খরচ কম পড়ে। ভারত ট্রানশিপমেন্ট বন্ধ করে দিলে এসব পণ্য আকাশ পথে প্রেরণ করতে গেলে খরচ বেশি পড়বে। ফলে শুধু বাংলাদেশ নয় নেপাল ও ভুটানের ব্যবসায়ী ও জনগণও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। যারা এলসি খুলেছেন তারাও বিপদে পড়বেন। অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে যেসব গার্মেন্টস পণ্য বিদেশে যাচ্ছে ট্রানশিপমেন্ট বাতিল করায় তার উপর খুব একটা প্রভাব পড়বেনা। কারণ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মালদ্বীপের বন্দর ব্যবহার করে গার্মেন্টস পণ্য বিদেশে পাঠাচ্ছে। এছাড়াও চীনা অর্থায়নে তৈরি শ্রীলঙ্কার বন্দর ফাঁকা পড়ে রয়েছে। দেশে অনেক বিমানবন্দর রয়েছে। আমাদের সমস্যাটা কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতায়। এই সক্ষমতা না বাড়িয়ে কেন অর্থ খরচ করে অন্য দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো তা শত চেষ্টা করেও আমার মাথায় ঢুকাতে পারি নি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মাজেজাটাও বুঝতে পারছি না।
সবমিলিয়ে ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তিনটি দেশের ট্রেডে প্রভাব পড়বে। নেপাল ও ভুটানে ওষুধ রপ্তানি করা হয়। সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রভাব পড়বে। ফ্রি মুভমেন্ট অব গুডস বাঁধাপ্রাপ্ত হবে। সর্বোপরি জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ কারণেই এটি ডাব্লিউটিওর বিষয়। এটি নিয়ে ডব্লিউটিওতে যাওয়ার সুযোগ আছে। এখানে আন্তর্জাতিক আইন উল্লেখ করে লোখাটা ভারাক্রান্ত করতে চাইনা। তারপরেও General Agreement on Tariffs and Trade (GATT 1947) এর একটি আর্টিকেল উল্লেখ করছি। গ্যাটের আর্টিকেল ৫(২) এ বলা হয়েছে যে "প্রতিটি চুক্তিকারী পক্ষের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে, আন্তর্জাতিক ট্রানজিটের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক রুটগুলির মাধ্যমে, অন্যান্য চুক্তিকারী পক্ষের ভূখণ্ডে বা সেখান থেকে ট্রানজিটের জন্য ট্রানজিটের স্বাধীনতা" নিশ্চিত করতে হবে।
ট্রানজিট নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি পরিস্কার। যদি এ-দেশ চায় বি-দেশের ওপর দিয়ে সি-দেশে পণ্য পরিবহন করবে, তাহলে বি ট্রানজিট দিতে বাধ্য। অন্যদিকে এ- তার দেশের আরেকটি অংশে বি’র ওপর দিয়ে যেতে গেলে বি ট্রানজিট দিতে বাধ্য নয়। ভারতও এটা জানে। সে কারণে বলেছে নেপালে ও ভুটানে মালামাল পাঠাতে বাংলাদেশকে বেগ পোহাতে হবেনা। যদিও তাদের ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের বিজ্ঞপ্তি ভিন্ন কথা বলে।
২.০
ভারত ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে "বল" বাংলাদেশের কোর্টে ঠেলে দিয়েছে। কীভাবে বলছি। গতকালকের একটি লেখায় বলেছি ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে।
কয়েকদিন আগে মিরপুরের ন্যাশনাল একাডেমি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে একটা প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন পরিচালক ক্লাস নেয়ার সময় একটা গল্প বলছিলেন। ভারতের হাইকমিশনার ও উপহাইকমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন ট্রানজিট চূড়ান্ত করতে। এসময় উপহাইকমিশনার ওই পরিচালকের রুমে বসে কথা বলছিলেন। উপহাইকমিশনার ভদ্রলোক বাঙালি। তিনি ওই পরিচালকের কাছে আফসোস করে বলছিলেন, দাদা, এটা আপনারা কী করছেন! বিনা মাসুলে ট্রানজিট দিয়ে দিচ্ছেন! আমরা তো ভেবেছিলাম আপনারা মাসুল চাইবেন। আমরা সেই বিষয়ে নেগোশিয়েশন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের ট্রানজিট দরকার। আপনারা যা চাইবেন তা দিতেই আমরা রাজি। পরিচালক এর জবাবে বলেছিলেন, আমরা এত ছোট কীভাবে হতে পারি!
একথা বলার পেছনেও প্রেক্ষাপট রয়েছে। ট্রানজিট সংশ্লিষ্ট জুনিয়র কর্মকর্তারা সিনিয়রদের সাথে চাপাচাপি করছেন যে ট্রানজিটে মাসুল চাইতে হবে। তখন তাদের ওই কথাটা বলেই থামিয়ে দেয়া হয়েছিলো। আমরা এত ছোটলোক না যে চলাচলের কারণে প্রতিবেশির কাছ থেকে মাসুল নিতে হবে।
আমি তখন কোরিয়া থেকে দেশে ফিরেছি। খুলনায় যাচ্ছিলাম ট্রেনে। ঈশ্বরদীতে আমাদের ট্রেনটাকে ঘন্টার পর ঘন্টা থামিয়ে কয়েকটা ট্রেন পার করা হলো। দেখলাম ট্রেনের ওপরে হিন্দী ভাষায় লেখা ভারতীয় রেল। অনেক ভারতীয় ট্রেন ওই জংশনে থেমেও রয়েছে। রেলওয়ের এক কর্মীকে জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কোথায় যাবে! তিনি জানালেন, আখাউড়া যাবে। সেখান থেকে ট্রাকে করে ভারতে ঢুকবে। বাণিজ্য দেখে নিজের ভালো লেগেছিলো। তখনো জানা ছিলনা এগুলোতে কোনো মাসুল নেয়া হচ্ছেনা।
যাই হোক, ট্রানজিটে কতটুকু সুবিধা ভারতকে দেয়া হচ্ছে তা জেনে নেই। ভারত বর্তমানে বাংলাদেশের সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ ব্যবহার করছে। একই সাথে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করছে। ভারত বাংলাদেশকে ২০২০ সাল থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিলেও বাংলাদেশ ২০১০ সাল থেকে ভারতকে মাল্টিমোডাল বা বহুমাত্রিক সুবিধা যেমন ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট দিয়ে আসছে। ২০১৬ সাল থেকে নৌ প্রটোকলের আওতায় কলকাতা বন্দর থেকে আশুগঞ্জে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জাহাজ। পরে আখাউড়া থেকে সড়ক পথে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। এছাড়াও ২০১৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে ভারত চট্টগ্রাম ও মোংলা সমূদ্র বন্দর ব্যবহার করে সেভেন সিস্টার্সে মালামাল আনা-নেয়া করছে।
ভারত বাংলাদেশকে কী দিয়েছে তা জেনে নেয়া যাক।২০১০ সালে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে বাংলাদেশ সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছর ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে ট্রানজিটসহ অন্য কয়েকটি বিষয়ে যৌথ ইশতেহার সই হয়। ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথ উন্নয়নে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার উচ্চ সুদের ঋণও মঞ্জুর করে ভারত। উচ্চ সুদের এ ঋণ ব্যবহৃত সড়ক-রেলপথ উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়। তবে এর ৮০-৮৫ ভাগ ব্যবহৃত হয়েছে ভারতের পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে। ট্রানজিট বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার একটি কোর কমিটি গঠন করেছিলো। কমিটি প্রাথমিক সমীক্ষা করে। প্রথম সমীক্ষায় দেখা যায় ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে রেলপথ নির্মাণ ও সম্প্রসারণে ব্যয় হবে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ করেছে। তবে তা ব্যবহার করেছে ভারত। এজন্য প্রাপ্য অর্থ পায়নি বাংলাদেশ।
ট্রানজিট সুবিধায় ভারতের পরিবহন বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করেছে। ট্রানজিট এভাবেই হয়। আর ট্রানশিপমেন্টে অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারে। নিজেদের পরিবহন চলাচল করতে পারেনা। অর্থাৎ বাংলাদেশের কোন পরিবহন ভারতে মালামাল পরিবহন করতে পারেনি। ভারতকে শুধু ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা দিলেও বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের মালামাল পরিবহন খরচটা বাংলাদেশ পেতো। সেটাও হয়নি।
৩.০
আগেই বলেছিলাম। বল এখন বাংলাদেশের কোর্টে। বাংলাদেশ চাইলে ভারতের ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট বাতিল করে দিতে পারে। আর বাতিল করলে ভারত ডব্লিউটিওতেও যেতে পারবেনা। কারণ ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে অন্য দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে তৃতীয় কোন দেশে তারা মালামাল পাঠাচ্ছেনা। নিজের দেশেরই আরেকটি অংশে পাঠাচ্ছে। প্রশ্ন উঠবে, তাহলে ভারত কেন বাংলাদেশকে দেয়া ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো। আমার মনে হয় দুটো কারণে।
কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোশিয়েশনের বার্ষিক সম্মিলনে মাননীয় প্রধান উপদেস্টার বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বাংলাদেশ, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, নেপাল ও ভুটান নিয়ে একসাথে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কথা বলছিলেন। সবগুলো দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলছিলেন। বাংলাদেশের সামূদ্রিক বন্দরকে কেন্দ্র করেই এই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বা বাণিজ্য হবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। থাইল্যান্ডে গিয়েও তিনি একই কথা বলেছিলেন। কী সুন্দর প্রস্তাব।
বাংলাদেশ চায় ভারতের ভেতর দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে ট্রানজিট। বিনিময়ে সেভেন সিস্টার্সকেও একই সুবিধা দেয়া হবে। তবে মাসুল দিতে হবে। এতে সবার লাভ হবে। অথচ ভারত প্রতিক্রিয়া জানালো। সেভেন সিস্টার্সকে ল্যান্ড লক বলায় তারা আপত্তি তুলেছে। আসলে দরকষাকষিতে অপরের দুর্বলতা তুলে ধরতে হয়। প্রতিপক্ষকে দুর্বল করলেই সুবিধা পাওয়া যায়। ভারত ভাবছে বাংলাদেশ তাদের ট্রানজিট বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে। অফেন্স ইজ দ্য গ্রেট ডিফেন্স। তারা অফেন্সিভ খেলছে। তারা দুর্বলতা প্রকাশ করতে রাজি নয়। নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়েছে। ভাবছে, বাংলাদেশকে এখন নেপাল ও ভুটানে মালামাল পাঠাতে তাদের কাছে ধর্ণা দিতে হবে। ট্রানশিপমেন্ট নিয়ে দরকষাকষি করতে আসবে।
দুই নম্বর কারণ হলো- তাদের কাছে আরেকটা অস্ত্র রয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ শুল্ক সুবিধা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ট্রানজিট বাতিল করলে তারা ওখানে হাত দিতে পারবে। বিষয়টা হাস্যকর। কারণ ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমদানীর। রপ্তানি খুব কমই করা হয়। শুল্কছাড় দিলেই কী বা না দিলেই কী। যদিও বাণিজ্যে এভরি পেনি কাউন্টস। আমদানীর জন্যও বাংলাদেশ এখন বিকল্প বাজার খুজছে।
৪.০
ভারত ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। তাহলে বাংলাদেশ এখন কী করবে! ভারতকে দেয়া ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করবে? এটা বলার আগে একটা কৌতুক বলি। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রচলিত কৌতুক।
এক পরিবারে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো নয়। স্বামী তার স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রায়ই প্রতিবেশীদের ডাকেন। তাদের সামনে স্ত্রীর দোষ তুলে ধরে তাকে ছেড়ে দেবেন বলে ঘোষণা দেন। এমনিভাবে চলছিলো। হঠাৎ একদিন স্ত্রীকে তার প্রেমিকের সাথে বিছানায় হাতেনাতে ধরলেন ওই স্বামী। এবারও যথারীতি প্রতিবেশিদের ডাকলেন। প্রতিবেশীরা এবার নিশ্চিত যে এবার আর সংসার টিকছেনা। এবার ঘর ভাঙ্গবেই। স্বামী তার স্ত্রীকে আর ঘরে রাখবেন না।
পরদিন দেখা গেলো, স্বামী তার স্ত্রীকে পঞ্চাশ নম্বর সতর্কতা নোটিশ দিয়েছেন। বলেছেন, এরপরে যদি কোনো দিন ওই প্রেমিকের সাথে হাতেনাতে ধরা পড়ে তাহলে তাকে নিশ্চিত ডিভোর্স দেবেন।
এটা চীনা মডেল বলে আমেরিকানরা হাসাহাসি করে। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ওই স্বামীর ভূমিকায় যারা খেলেন তারাই ম্যারিউরড। কেউ আঘাত করলে পাল্টা আঘাত করাটা শিশু সুলভ উন্নাসিকতা। বাংলাদেশ যথেস্ট ম্যাচিউরড একটা দেশ। পৃথীবির সবচেয়ে ঘনবসতির একটি দেশের এরকম না হয়েও উপায় নেই।
দরকষাকষির মুলধন হলো বেস্ট অল্টারনেটিভ টু অ্যা নেগোশিয়েটেড অ্যাগ্রিমেন্ট BATNA বাটনা। মিয়ানমার বারবার সীমানা লঙ্ঘণ করেছিলো। চেয়েছিলো একটা গুলি করুক। বাংলাদেশ তা করে নি। যতবার তারা সীমানা লঙ্ঘণ করেছিলো ততবার তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে প্রতিবাদপত্র ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ মিয়ানমারের সাথে আমাদের স্ট্রং কোনো বাটনা নেই। মানে তারা আমাদের কাছে কোনো কিছুতে ধরা নেই। তবে তারা চীনের কাছে ধরা। একারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যার্পনের বিষয়ে চীনকে মুরুব্বী মেনে অ্যানগেজড করা হয়েছে।
তবে ভারত বাংলাদেশের কাছে ঠিকই ধরা আছে। ভারত ট্রানশিপমেন্ট বাতিল করার পর বাংলাদেশের কাছে স্ট্রং বাটনা রয়েছে। বাটনা হলো, তাদেরকে সহজে কম খরচে সেভেন সিস্টার্সে যেতে হলে বাংলাদেশের বন্দর ও ভূমি ব্যবহার করতে হবে। বাটনা স্ট্রং হলে আলোচনার টেবিলে যেতে হয়। তাতে লাভের পাল্লা ভারী হয়। বাংলাদেশ ভারতের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তাদের ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট বাতিল করলে সেটা বউ তালাকের মতো সিদ্ধান্ত হবে।
৫.০
আমার বাবা ব্যবসায়ী ছিলেন। একদিন একজন পাওনাদারের কাছে টাকা চাইতে গেলেন। সাথে নিয়ে গেলেন আমাকে। আমি তখন ছোট। আমার লজ্জা লাগছিলো। এখনো পাওনা টাকা চাইতে পারি না। আমার লজ্জা দেখে আব্বা বলছিলেন, ব্যবসা বাণিজ্যে লজ্জা থাকতে নেই। উন্নাসিকতা বা নাক উঁচু স্বভাবও থাকতে নেই। তাহলে বাণিজ্য করা যায়না। ট্রেড পলিসি পড়ে দেখলাম- আসলে এটাই শেষ কথা। বাণিজ্যে রাগ বিরাগ নেই। ছলে কলে কৌশলে লাভ আদায় করতে হয়।
Kazi Saemuzzaman
১২ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




