somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডারউইন কে মোল্লা-পাদ্রিরা কেন এত ভয় পায়?

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সলিড স্টেট কোর্সে "সেমাইকন্ডাক্টর" পড়ানোর ফাঁকে জাফর ইকবাল স্যার একটা সায়েন্টিফিক জরিপের কথা বললেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় থিওরি কোনটা? স্যার আশা করে বেসেছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় থিওরি হবে আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি কিন্তু তা হল না। সবচেয়ে জনপ্রিয় থিওরি হিসেবে উঠে এলো ডারউইনের থিওরি। স্যার সাধারণত ক্লাসে ম্যাথ অলিম্পিয়াডে পিচ্ছিদের বলা গল্প আমাদের বলেন না। ক্লাস শেষে আমরা ধরে নিলাম স্যারের কাছে মনে হয় কোন উড়ো চিঠি আসছে, এই জন্য আজ এই গল্প বলল। ডারউইন আসলে কি বলছে এইটা বুঝার জন্য আমি অরিজিন অফ স্পেসিস বইটা কিনলাম। এত বোরিং বই যে আশি-নব্বই পেজের মত পড়ার পর আর পড়ার আগ্রহ তৈরি হল। অথচ মানুষজন নাকি প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ বুঝে উল্টায়ে ফালায়। ঐ বইয়ের ভূমিকা একটা লাইন ছিল এমন "আমার মনে হয় প্রকৃতি ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়াই তৈরি হয়েছে"। এই লাইন পড়েই প্যারাডক্সিকাল সাজিদ বিক্রেতা আরিফ আজাদ জ্ঞান ঝেড়ে দিল আর বাংলার মুসলমানরা এইটা গিলল। আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি ডারউইনের এই তত্বটা আস্তিকরা কেন যেন গিলতে পারে না। কেন গিলতে পারে না? এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম ইউভাল নোয়াহ হারারির হোমো ডিউস এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টুমরো বইটা পড়ে।
ডারউইনের এই থিওরি নিয়ে মুসলিম ক্রিস্টিয়ানদের কেন এত আপত্তি? আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি বা শ্রদিঞ্জারের, হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে কিন্তু কারো কোন আপত্তি নাই। কারণ আপনি যদি বিবর্তন মেনে নেন তাহলে আপনাকে এইটা মেনে নিতে হবে যে soul বা আত্মা বলে কিছু নাই। কিন্তু ধর্ম বলে মানবজীবন একটা চিরন্তন বস্তু ধারণ করে যেমন পাপ করলে আত্মা কলুষিত হয়, পুণ্য সেই কলুষিত আত্মার পাপ মোচন হয়। ডারউইন ধর্মের এই আত্মাকেই অস্বীকার করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কেন ডারউইনের থিওরি অনুযায়ী আত্মা বলে কিছু নাই?
According to the theory of evolution, all biological entities from elephants and oak tress to cells and DNA molecules are composed of smaller and smaller parts that ceaselessly combine and separate. এই কথাটার অনুবাদ হচ্ছে- বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী যেকোনো জৈবিক উপাদানের সেইটা বিশাল বড় বড় হাতি বা ওক গাছ হোক অথবা জীব গঠনের উপাদান কোষ অথবা ডিএনএ এইসব কিছুই ছোট ছোট পৃথক পৃথক ক্ষুদ্রাংশ দিয়ে তৈরি বলেই এদের বিবর্তন সম্ভব। এইবার যদি ব্যাখ্যা করি তাহলে পুরো ব্যাপার দাড়ায় বিবর্তন তখনই সম্ভব যখন কোন কিছুকে আলাদা করা সম্ভব। এখন কাকে আলাদা বা সেপারেট করবেন? যেমন ধরুন কোষে মিউটেশন হবে কারণ কোষ নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডিস, ক্লোরোপ্লাস্ট এইরকম আরও অনেক কিছু দিয়ে গঠিত। এখন মাইটকন্ড্রিয়াল ডিএনএ নামে একটা ডিএনএ আছে যেইটা মাইটোকন্ড্রিয়াতে থাকে, এই মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তে সামান্য একটা পরিবর্তন হলে পুরো মাইটোকন্ড্রিয়াতে পরিবর্তন হবে, ফলে কোষে পরিবর্তন হবে, মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ কোষে শক্তি যোগান দেয়া, এই শক্তি যোগানের চক্রে পরিবর্তন হবে। এইটাই বিবর্তন। এইটা কেন হল? শুধু মাত্র কোষের একটা ছোট্ট উপাদান মাইটোকন্ড্রিয়াতে পরিবর্তনের কারণে, পুরো শ্বসন চক্র পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আসলে বিবর্তন অনুযায়ী পুরো কোষের পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, কোষের ছোট্ট একটা অংশে পরিবর্তন লক্ষ বছর পর পুরো কোষে বিশাল পরিবর্তন আনবে।
বিবর্তন তত্ত্বে একটা বড় বিতর্ক তৈরি হয় চোখের বিবর্তন নিয়ে। আমরা এই হোমো সেপিয়েন্সদের চোখ কিন্ত এক মিলিয়ন বছর আগের হোমো ইরেক্টাসদের চোখ থেকে আলাদা। এই চোখের বিবর্তন কেন সম্ভব হল কারণ চোখ বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন অংশ- কর্নিয়া, রেটিনা, আইরিশ, লেন্স এইসব দিয়ে তৈরি। এখন আমাদের চোখের লেন্সের গঠন উত্তল- এক মিলিয়ন বছর আগে এমন ছিল না। দেখুন পুরো চোখের অন্য অংশে কিন্তু কোন পরিবর্তন হয় নি, শুধু মাত্র লেন্সে পরিবর্তন হওয়ায় চোখের বিবর্তন সম্ভব হইসে। আসলে প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ বলে একটা জৈবিক উপাদানের বিবর্তন ধাপে ধাপে হয়, এবং বিবর্তনের প্রতিটা ধাপ চিহ্নিত করা সম্ভব এবং প্রতিটা ধাপে এই জৈবিক উপাদানের সেপারেট একটা অংশে পরিবর্তন হয়।
এখন আত্মা নিয়ে একটু কথা বলি। আত্মা কে যদি একটা জৈবিক উপাদান ধরি তাহলে এইটা কি কি দিয়ে তৈরি এইটা কিন্তু কোন ধর্মগ্রন্থেও লেখা নাই। ফলে এই আত্মা ভিন্ন ভিন্ন কোন উপাদান দিয়ে গঠিত না হওয়ায় এর কিন্তু বিবর্তন সম্ভব না। যেমন প্রায় সব ধর্মেই বলা হইছে এই পাপের কারণে এই নরকে আত্মাকে এই শাস্তি দেয়া হবে। এইখানে আত্মা বলতে কিন্তু কোন individual কোন আত্মাকে বুঝানো হয় নাই পুরো whole কে বুঝানো হইছে। আর individual মানে হল something that can’t be divided, যেখানে আপনাকে ডিভাইড করতে পারছেন না সেইখানে তো বিবর্তন সম্ভব না। শুধু মাত্র আত্মা individual আর জৈবিক উপাদান segregated হওয়ার কারণে ডারউইন পুরো ধর্মের বিশ্বাস কে নাড়া দিতে পেরেছেন। বায়োলজিক্যাল প্রসেসে আমার ব্যাখ্যা করতে পারি পিতা মাতা থেকে সন্তানের চোখ কেন একটু বাঁকা- একটা ছোট্ট জিন মিউটেশন এর জন্য দায়ী কিন্তু আমরা মোটেও পিতা মাতা থেকে আত্মা কিভাবে সন্তানে আসল এইটা বায়োলজি দিয়ে ব্যাখ্যা করি না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:২৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×