somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধানের ঘুরাঘুরির কারণে কেন চৌম্বক বল তৈরি হয়? বায়োট স্যাভার্টের সূত্রের ব্যাখ্যা। ম্যাগনেটিক মনোপোল কি সম্ভব? আসুন কিছুক্ষণ চুম্বক নিয়ে খেলাধুলা করি।

১২ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশ ভাল কিছু শিক্ষক পেয়েছিলাম তার মধ্যে আদনান স্যার একজন । আমার ক্লাসমেটরা উনার প্রতি আমার একনিষ্ঠ ভক্তির কারণে আমাকে বেশ ক্ষ্যাপাত। আমি বেশি কিছু বলব না উনার যেই ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে- সাধারণত শিক্ষকরা ছাত্রদের ফেসবুক পোস্ট এ যেয়ে নিজের মত দিতে চায় না। কিন্তু খুব সহজ সাবলীলভাবে উনি ছাত্রদের পোস্টে মন্তব্য করে চলে আসেন। আদনান স্যারের কথা আসল যেই কারণে- উনি আমাদের ব্যাচের প্রথম কোর্স নিয়েছিলেন ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিজম। আমি ২/১ এ যখন নতুন করে পড়াশুনা করি তখন এত মজা পাইছি যা বলার বাইরে। আজকে আমি যা শিখছি ঐ কোর্সে, তা নিয়ে ভুলভাল বকব।

প্রথমেই আসি সেই ছোটবেলায় পড়াতে। আধান কেন চলমান থাকলে সেইখান থেকে চৌম্বক বল তৈরি হয়? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমি আরেকটা প্রশ্ন নিয়ে কথা বলি পরমাণুতে কিভাবে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়? তো চলুন শুরু করা যাক। প্রথমেই একটি চুম্বক একে নেই। খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটি চুম্বকের উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু থাকবে। চুম্বকের বলরেখা গুলো উত্তর মেরু থেকে বের হয়ে দক্ষিণ মেরু তে প্রবেশ করে।



এখন একটা পরমাণুতে যখন চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হবে তখনও ঠিক একইভাবে একটা চুম্বক তৈরি হবে যার উত্তর মেরু থেকে চুম্বক বলরেখা বের হয়ে দক্ষিণ মেরুতে প্রবেশ করবে। এখন পরমাণুতে এই চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয় ইলেকট্রনের গতির কারণে। এইটা কিন্তু আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল আধানের গতির কারণে কেন চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হবে। আমি আপাতত ধরে নিচ্ছি আমি এই প্রশ্নের উত্তর জানি, যে আধানের গতির কারণেই চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ফলে একটি ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের কারণেই এই চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই যেই প্রশ্ন আসা উচিত ইলেকট্রন যদি ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরতে থাকে তাহলে উত্তর মেরু আর দক্ষিন মেরু সৃষ্টি হচ্ছে কিভাবে? কারণ যারা একটু আধটু পদার্থবিজ্ঞান জানেন, তারা জানেন যে ঘড়ির কাটার দিকে আধান ঘুরতে থাকলে যে তলে আধানটি ঘুরতে থাকে সেই তলে হয় উত্তর মেরু অথবা দক্ষিণ মেরু তৈরি হবে। অর্থাৎ একটি মাত্র মেরু তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু আমি বলছি এইখানে দুইটি মেরু তৈরি হবে। কেমন গোলমেলে একটা ব্যাপার তৈরি হল। আসুন সমাধান করি। ধরেন আমি একটি পরমাণু আলাদা করে ফেলতে পারলাম, এই পরমাণুতে আছে ইলেকট্রন, প্রোটন নিউট্রন। আপাতত আমি শুধু ইলেকট্রন প্রোটন নিয়েই গল্প করি। এখন আমি ইলেকট্রন কে শুন্যে ঝুলায়ে দিলাম। আমি এবং আপনি মুখোমুখি দাঁড়ালাম। এখন বলেন তো আমার ডান হাত বরাবর আপনার কোন হাত থাকবে? অবশ্যই বাম হাত। আর আমার বাম হাত বরাবর হবে আপনার ডান হাত। এখন ইলেকট্রন যখন আমার ডান দিক বরাবর ঘুরছে তখন কিন্তু ইলেকট্রনটা আপনার বাম দিক বরাবর ঘুরছে। ফলে অটোম্যাটিকালি ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের কারণে আমার তলে উত্তর মেরু তৈরি হলে আপনার তলে দক্ষিণ মেরু তৈরি হচ্ছে।



ব্যাপারটা আরেক্টু সহজভাবে বুঝা যায় মুক্তার মালার উদাহরন দিলে। যেমন ধরুন আমি চারটা মুক্তা দিয়ে যদি মালা বানাই তাহলে আমি এবং আপনি মুখোমুখি দাঁড়ানোর সময়, আমার কাছের মুক্তার মালার পর্যায় যথাক্রমে A, B, C, D হলে আপনার কাছে একই মুক্তার মালার পর্যায় হবে A, D, C, B।



এইখানে কথা প্রসঙ্গে আরেক্টু কথা বলে নেই যেহেতু পরমাণুর ক্ষুদ্রতম কণিকা ইলেকট্রনেই উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরু একসাথে থাকে তাই স্বাভাবিকভাবে উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু আলাদা করা সম্ভব না। এই কারণে চুম্বক হচ্ছে ডাইপোল, অর্থাৎ চুম্বকের দুইটি মেরু থাকবেই। আপনি যেমন ইলেকট্রন আলাদা পাবেন, প্রোটন আলাদা পাবেন ফলে এদের বলা হয় মনোপোল কিন্তু চুম্বকে এই মনোপোল পাবেন না। ঠিক এই ব্যাপারটিকেই ম্যাক্সওয়েল বলেছেন ডাইভারজেন্স অফ ম্যাগনেটিক ফিল্ড ইজ জিরো।

এই কথার ব্যাখ্যা হচ্ছে এতক্ষণ আমি যা বললাম তা, চুম্বকের উত্তর দক্ষিণ মেরু একসাথে থাকবেই। একবার ভাবুন তো এই উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরু না থাকলে হয়ত লিভিংস্টোন এর মত পর্যটকরা দেশ দেশান্তর জাহাজে করে ঘুরে বেড়াতে পারতেন না। ভাইকিংস নামে একটি টিভি সিরিজ আছে চাইলে দেখতে পারেন ওদের এই দুরন্ত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যুদ্ধের একটা আমেজ পেতে। সেইটা ইচ্ছে না করলে আপাতত বাংলা ব্যান্ড ভাইকিংসের ঈশ্বর গানটি শুনতে পারেন।

এইবার আসি প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আধান চলমান থাকলেই কেন সেইখানে চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়, ফলে চুম্বক বল তৈরি হয়। এবং কতটুক বল তৈরি হয় এইটা হিসেবের জন্য বায়োট স্যাভার্টের সূত্র আছে। তো মূল ঝামেলা হচ্ছে এই বল কিভাবে তৈরি হচ্ছে সেইটা বুঝা। তো চলেন একটু বুঝার চেষ্টা করি। কথাবার্তা শুরু করার আগে আমি আইনস্টাইনের একটি কথা বলতে চাই- ম্যাগনেটিক ফিল্ড আসলে কিছুই না, এইটা হচ্ছে ইলেকট্রিক ফিল্ডের আপেক্ষিক গতির ফল। সলিড স্টেট পড়ানোর সময় জাফর ইকবাল স্যার একটা কথা বলেছিলেন- তুমি একটি স্থির ইলেকট্রনের চারপাশে ঘুরতে থাকলে সেইখানে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হবে দেখবা। আমি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই সেইখানে এই ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিজম কোর্স টা নেয়ার সময় ঠিক এই কথাই বলি। যেহেতু আপেক্ষিকতা চলে আসছে তাই আমি আপেক্ষিকতার দৈর্ঘ্য সংকোচন নীতি নিয়ে একটু কথা বলি। যখনই কোন কিছুর একটা বেগ থাকে তখন তার দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়ে যায়। এখন এইটা কিভাবে ব্যবহার করা যায় আমি এইটাই দেখি একটু। প্রথমে ধরে নেই একটা তার যার মধ্যে ইলেকট্রন এবং প্রোটন সমান সংখ্যক আছে। এখন ধরে নিচ্ছি ইলেকট্রন চলমান আর প্রোটন স্থির। এখন আমি একটি পরীক্ষা করার জন্য একটি ধনাত্মক আধান যদি তারের বাইরে রাখি এবং ইলেকট্রন যেই বেগে যে দিকে চলছে ঠিক একই বেগে একই দিকে ছেড়ে দেই তাহলে কি হবে একটু দেখি।



পরীক্ষা করার জন্য ধনাত্মক আধান অর্থাৎ পরখ আধানের গতি এবং ইলেকট্রনের গতি একই হওয়ার কারণে তাদের দুইজনের মধ্যে আপেক্ষিক বেগ শূন্য হবে। কিন্তু পরখ আধান আর প্রোটনের মধ্যে একটি বেগ তৈরি হবে, এই বেগ হবে পরখ আধান আর ইলেকট্রনের গতির বিপরীত দিকে।



এখন এই যে প্রোটন একটা আপেক্ষিক বেগ পেল এর ফলে তারের দৈর্ঘ্য সংকোচন হবে। দেখেন প্রোটনের সংখ্যা একই আছে কিন্তু দৈর্ঘ্য কমে যাওয়ায় চার্জ ঘনত্ব বেড়ে যাবে। এই চার্জ ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেই পরখ আধান আগে যেই পরিমাণ বিকর্ষন বল অনুভব করত এখন তার চেয়ে বেশি করবে। তার মানে পরখ আধানের গতির কারণে একটি বল তৈরি হচ্ছে এই বলটার নামই হচ্ছে চৌম্বক বল। এই বলের মান বায়োট স্যাভার্টের সূত্র দিয়ে হিসাব করা সম্ভব। আর ম্যাগনেটিক মনোপোল কিভাবে কৃত্রিমভাবে বানানো সম্ভব তা নিয়ে এই লিঙ্কটি ঘুরে আসতে পারেন। আমি ট্রিসডাকশন ফোরামে এই ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলেছিলাম। আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। বহুত লিখে ফেলছি এই কয়েকদিনে, এখন সময় গুহাবাসী হওয়ার।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:১১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×