তুরাগ অথবা বি.আর.টি.সি বাসে চড়তে হয় দীর্ঘ সময় নিয়ে; যখন আপনার কোথাও যাবার নেই কিচ্ছু করার নেই; ও গানওয়ালা আরেকটা গান গাও ধরণের উদাস মুডে থাকবেন; কেবল তখনি তুরাগ অথবা বি.আর.টি.সি বাসে চড়ে বসবেন। এই বাসে উঠলেই মনেহয় যেন পিকনিক পার্টিতে যাচ্ছি, পেপারওয়ালার কাছ থেকে পেপার কিনবেন, মাঝে মাঝে শশা, পানি, জুস, বাদাম দামাদামি করে কিনে খাবেন, পাশের যাত্রীর সাথে দুই একটা মজার কথা বলবেন, মন চাইলে গল্পের আসর বসিয়ে ফেলবেন ব্যাস, ইট উইল বি এ হ্যাপি জার্নি।
ড্রাইভার গাড়ি রাস্তার পাশে থামিয়ে একটু হাওয়া বাতাস খাবে, অগণিত যাত্রী উঠবে নামবে, অথবা কেউ তেমন ওঠানামা করবে না। হেল্পার ফাঁকে বিরি সিগারেট কিনতে গিয়ে হেয়ালি করতে করতে ধীরে সুস্থে আসে কি আসে না; এইদিকে ড্রাইভার সার্জেন্টের হুকুমে বাধ্য হয়ে নিতান্ত অপ্রয়োজনে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে আবার ইঞ্জিন বন্ধ করি ভাব করতে করতে, হেল্পারের অপেক্ষা করবে; হেল্পার আসি আসি করেও আসবে আসবে অবস্থায় থাকবে কমছে কম তিরিশ মিনিট।
নিতান্ত অন্য কোন অপশন হাতে নেই বলে আমি এই দুইটা বাস ট্রাই করি অফিসে আসার জন্য, যেদিন ট্রাই করি সেদিন আমি বিকেলে অফিসে এসে পৌছাই।
গুলশানের চেকপোস্ট পার হয়ে সিএনজী অথবা রিক্সায় গুলশান পৌঁছানো যায়, অবশ্য ঢাকা চাকা বাসের অপশন আছে, কিন্তু সেগুলায় লম্বা লাইন বেঁধে থাকে অফিস টাইমে।
কাজেই অফিসের লেট উপেক্ষা করার জন্য ছয়জনের সাথে সিএঞ্জিতে চড়ে অফিস পৌঁছানো বেটার অপশন।
অনেক অনেকদিন আগে আমার এক মহিলা কলিগ(স্কুলের)আমাকে বলেছিল দেখো ইতি কেউ কাউকে সন্মান দিতে চায় না কিংবা দেয় না, সন্মান তৈরি করে নিতে হয় আদায় করে নিতে হয়।
আমার মতে জামানা অনুযায়ী মরলে পরেও সন্মান মানুষ দেয় না, সন্মান আদায় করার জন্য জীবনের পুরো ইহকাল সাধনা করলেও সন্মান তৈরি কিংবা আদায় করা সম্ভব নাহ বিলিভ মি।
আর যদি কোনভাবে আদায় হয়ও দেখা যাবে নিজের ঘরে তাকে হেনস্থা হতে হচ্ছে, ঘরে সন্মান তাহলে বাইরে সন্মান নাই, ঘরে বাইরে সবখানে সন্মান কিন্তু নিজের সন্তানরা আড়ালে গালি দিচ্ছে, এমনটা হয়ই।
টপিক থেকে সরিনাই---------
সিএনজীতে উঠতে মেয়েদের প্রচুর যুদ্ধ করতে হয় মাঝে মাঝে, ঘটনার দিন সিএনজীতে উঠতে গিয়ে দেখি পেছনে তিনজন সামনে একজন অলরেডি বসে পড়েছে, প্রতিদিনের রুলস অনুযায়ী আরেকজন সামনে বসতে পারেন, কিন্তু যেহেতু আমি মেয়ে যেহেতু আমি সিএনজী ড্রাইভারের সাথে ঠেসে ঠুসে বসতে পারবো না কাজেই পেছনের সাইডের; সিরিয়ালে প্রথমজনকে বললাম আপনি সামনে বসেন।
ওয়েল, সে একজন ৬০ ছুই ছুই শক্ত সামর্থ্য লোক, সে তার সীট ছেড়ে সামনে যেতে চাইলোনা, কিন্তু সময় তো বেশি হাতে নেই, টেনশনে একটু রুড ভয়েসে সরে সামনে বসতে বললাম, সিএনজী ছেড়ে দেয়ার দুই সেকেন্ডের মাথায় বৃদ্ধের আমাকে উদ্দেশ্য করে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে মাশাল্লাহ শুরু করলো গালি, গালি বলতে তুমি একটা বেয়াদব মেয়ে, বেয়াদব কোথাকার, বেয়াদব বেয়াদব, তুমি একটা বেয়াদব; পারলে তুই তোকারি করে এই অবস্থা।
বৃদ্ধের মুখের স্প্রিড খুব ভালো।
দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনে কিছু জোর করতে গেলে সন্মান হারাতে হয়।
আমার পাশে বসে আছে নায়ক সালমান খানের মতন সুদর্শন যুবক, আমাদের দেশের ছেলেরা আজকাল রুপ সচেতন ফিগার সচেতন যথেষ্ট, তার পাশেরজনও একই ধরণের, কিন্তু দুইজনে মিলে বৃদ্ধের পক্ষ নিলেন উনি বুড়া মানুষ উনি বুড়া মানুষ এই সব বলতে থাকলেন।
বৃদ্ধ উইদাউট ফুল স্টপ আমাকে বেয়াদব বলেই যাচ্ছেন। ড্রাইভারকে বললাম আমাকে নামিয়ে দেন সকাল বেলা বেয়াদব বেয়াদব শুনতে ইচ্ছে করছে না।
ড্রাইভারের অল্প সময়ে দুই নাম্বার পৌঁছানোর চেষ্টা। মুখে প্যাঁচানো ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাবার হিজাব খুলে ফেললাম, বৃদ্ধের সাথে এবং পাশে বসা দুই নায়ক যুবকের সাথে ঝগড়া করতে, ঝগড়া এগোলো না।
দুই নাম্বার আমার অফিসের সামনে নেমে ভাড়া দিতে দিতে মনেহল সিকুরিটি পুলিশ গুলারে ডেকে দুই চারটা চোর থাপ্পড় বুড়াকে দেওয়াই।আর কোন মেয়েকে এই রকম হেনস্থা করতে সাহস পাবে না।
কিন্তু সে মা’র খেলে তার মনে এবং শরীরে কেমন আঘাত লাগতে পারে সেই চিন্তা করে মন শান্ত করলাম।
ঘটনার অনেকদিন পর কিছু অধিনস্তদের সাথে সেই বৃদ্ধকে দেখলাম, প্রথম মুহূর্ত সে বসে থাকলেও অধিনস্তদের দাঁড়িয়ে সালাম দিতে দেখে সে আমাকে বিশেষ কিছু ভেবে নিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। এখন দেখলেই আগ বাড়িয়ে সালাম দেয়, কিছু ক্ষমতা আমার আছে ভেবে নিয়ে মাথা নিচু করে থাকেন।
কথা হচ্ছে গিয়ে মানুষ সন্মান শুধু ক্ষমতাবানদের দেয়। ক্ষমতাহীনদের সন্মান দিলেও অশিক্ষিত অযোগ্য ক্ষমতাবানদের সামনে ব্যাপারটা চেপে যায়। তিক্ত বাস্তবতা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০৬