আজ থেকে ১০ বছর আগেও যখন মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হতো তখন মানুষ বলাবলি করতো- অমুকের ছেলে/মেয়েকে তো দেখতাম সারাক্ষণ পড়ালেখা করছে অথচ পরীক্ষায় ফেইল করলো কেমনে? ছেলে-মেয়েদের জন্য তারা আফসোস করতো। যেমন, আমার কয়েকজন মেধাবী কাজিন উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একাধিকবার পরীক্ষা দিয়ে তারপর পাশ করতে পেরেছিলো।
তারপর হঠাৎ করে নতুন এক শিক্ষা ব্যবস্থা আসলো। এখন মানুষ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে বলাবলি করে, অমুকের ছেলে/মেয়েকে তো কোনদিন পড়ালেখা করতে দেখলাম না। অথচ সে নাকি জিপিএ-৫ পাইছে! কেমনে পাইলো? এখন কোনো পাবলিক পরীক্ষায় ছাত্র/ছাত্রীরা ফেইল করলে পরীক্ষককে সমন জারি করা হয়। ফেইলের কারণ দর্শাতে বলা হয়। সুতরাং শিক্ষকগণ ভয়ে ভয়ে খাতা মূল্যায়ন করে সবাইকে মার্কস বণ্টন করে যান। ফলাফল রেজাল্টে বাম্পার ফলন।
ছাত্র-ছাত্রীরা জেনে গেছে তাদের ভালো রেজাল্ট করার জন্য এখন আর পড়ালেখা করতে হবে না। সরকার নিজে থেকেই দায়িত্ব নিয়েছে তাদের ভালো রেজাল্ট করিয়ে জিপিএ-৫ এর বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি- একটা নাম করা প্রতিষ্ঠানে টেস্ট পরীক্ষার পরে ফলাফল মিটিংয়ে বসেছে প্রতিষ্ঠান প্রধান সহ শিক্ষকবৃন্দ। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কয় বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য সুযোগ দেওয়া হবে।
সর্বসম্মতিক্রমে এক, দুই বা তিন বিষয়ে ফেইল করা শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হবে এমন সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান বললেন, আমরা বাকিদের আটকিয়ে কী করবো? বর্তমান ব্যবস্থাতে ৮/৯ বিষয়ে ফেইল করাদের সুযোগ দিলেও দেখা যাবে তারা পাশ করে বের হয়ে যাবে। তার কথাটাই সত্য প্রমাণিত হলো। টেস্ট পরীক্ষায় সব বিষয়ে ফেইল করা শিক্ষার্থীরাও এতো ভালো রেজাল্ট করে বের হলো যে, যেসব শিক্ষকরা তাদের ক্লাসে বলতেন, তোমরা তো পড়াশোনা না করলে ফেইল করবা, সেই সব শিক্ষকরাও লজ্জা পেয়ে গেলেন।
যাহোক, নতুন আরেক শিক্ষা ব্যবস্থা আসতেছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় নাকি খুবই উন্নত। তবে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার খবর শুনে আমার শুধু একটা গল্পের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে- একলোক তার অসুস্থ চাচার ব্যাপারে তার চাচাতো ভাই এর কাছে খোঁজ নিচ্ছিলেন। সে তার ভাইকে জিজ্ঞাসা করছে, চাচার এখন অবস্থা কেমন? তার চাচাতো ভাই উত্তরে বলছে, আগের চেয়ে খুবই ভালো অবস্থা এখন। বাবা আগে বাইরের টয়লেটে গিয়ে পায়খানা করে আসতো আর এখন বিছানার মধ্যেই কাজ সেরে ফেলে!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:০১