somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিন্ধু সভ্যতাঃ এক অপার বিস্ময়-২

২১ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব-১

সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে বললে ভুলই বলা হবে। আসলে বিভিন্ন নগরগুলো পরিত্যাক্ত হয়েছে বললেই সঠিক বলা হবে। সেচব্যবস্থা ধ্বংসের পর কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেতে শুরু করে এবং নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তনসহ কিছু নদী ও খালের মৃত্যু এ অঞ্চলে ক্রমাগত মরুকরণ শুরু হয় যা কৃষি উৎপাদনকে চরমভাবে ব্যহত করে। এছাড়া নগরগুলোয় খুব বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। উৎপাদন হ্রাসের সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যচাহিদা খুব চরম পর্যায়ে পৌঁছে। এরকম অবস্থায় নগরগুলো পরিত্যাগ করে বিভিন্নদিকে ছড়িয়ে পড়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না।

ঋগ্বেদের বহু ঋকেই আমরা যে যুদ্ধের বিবরণ পাই সে যুদ্ধ খুব বড় ধরণের যুদ্ধ যে নয় তা সহজেই বোঝা যায়। পরিত্যক্ত সভ্যতাটিতে তেমন কোন যুদ্ধাস্ত্র পাওয়া যায় নি। আমাদের এটাও বুঝতে হবে যে সিন্ধু সভ্যতাটি একটি সাম্যবাদী সভ্যতা ছিল যেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহবিমুখ একটি সভ্যতাই বিকাশ লাভ করেছিল। পূর্বের ইতিহাসবিদরা এই যুদ্ধকে যদিও আর্য এবং অনার্যদের যুদ্ধ বলে ব্যাখ্যা করেছেন আসলে এই যুদ্ধকে বৈদিক ও অবৈদিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধ বলা যায়। বাঁধ ধ্বংসের এই যুদ্ধে বৈদিক সম্প্রদায় জয়লাভ করে। পর্ব-১ এ পারস্য আবেস্তা গ্রন্থের কথা বলা হয়েছে। সম্ভবত অবৈদিক সম্প্রদায়ের যে অংশ বৈদিক সম্প্রদায়ের ধর্ম সংস্কারকে মেনে নিতে পারেনি তারা দেশত্যাগ করেছিল এবং তাদেরই একাংশ ইরানে আবাস গড়ে।

যুদ্ধ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয়ের অবতারণা করতেই হচ্ছে। উপমহাদেশের অন্যতম মহাকাব্য রামায়নেও আমরা রাম ও রাবনের এক বিশাল যুদ্ধ দেখতে পাই। আসলেই কি সে এক বৃহৎ যুদ্ধ ছিল? রামায়নের রাম ও রাবনের যুদ্ধ হয়েছিল সীতা নামক একটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। রাবন সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় যার জন্য রাম হনুমান ও সুগ্রীবের সহায়তায় রাবনের লংকা আক্রমণ করে এবং সীতাকে উদ্ধার করে। রাবন যে সীতাকে অপহরণ করে এর পিছনের কারণ হল রাম কর্তৃক রাবনের বোন শূর্পণখা বধ। এখন দেখা যাক এই চরিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে কী পাওয়া যায়।

সম্ভবত রামায়নের কাহিনীর এই মিথটির জন্ম হয় প্রকৃতি নির্ভরশীল জীবনযাপন থেকে মানুষ যখন কৃষিকাজে অভ্যস্ত হয় তখন। লাঙলের আবিস্কার নি:সন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার। সম্ভবত সভ্যতার এ আবিস্কারটিই মাতৃতান্ত্রিক সমাজকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দিকে ঠেলে দেয়। কারণ লাঙল টানতে যে শক্তি প্রয়োজন তা নারীদের তুলনায় পুরুষদের ভাল অবস্থান তৈরি করে। সীতা কোন মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া মানবী নয়। লাঙলের ফলায় উঠে আসা মানবী। লাঙলের ফলা থেকে উঠে আসে শস্য। সে শস্যই সীতা নামের চরিত্র হয়ে যায় পার্সোনিফিকেশনের বদৌলতে। প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল রাবনরা রামদের লাঙল দিয়ে চাষ করা এ শস্য/সীতাকে অপহরণ/ডাকাতি করে নিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং রামের সাথে রাবণের সাথে যুদ্ধ হবে এটাও স্বাভাবিক। সে যুদ্ধে রামকে সহযোগীতা করে বানর ও ভালুক নামক দুটি টোটেমের সদস্যরা। রাজা ব্যাপারটা আসলে গোত্রপ্রধান বৈ কিছু নয়।

এখানে শূর্পনখা চরিত্রটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। রাজা রাম বা এরকম কোন সমাজ কর্তৃক নারীতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মৃত্যুকেই শূর্পণখার মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করা যায়। রাবন/নারীতান্ত্রিক সমাজের সাথে রাম/পূরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ছোটখাট কোন যুদ্ধই কালে কালে পরিবর্তিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত রামায়ন নামক এক বিশাল মহাকাব্যে লিপিবদ্ধ হয়। কোন ছোটখাট ঘটনাই মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হতে হতে মিথে রূপান্তরিত হয়। কবিরা সবসময়ই কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে রূপকের আশ্রয় নেন। কালের পরিবর্তনে তাদের রূপকগুলোই বাস্তবতার গন্ধ ছড়ায়। আমাদের রামায়ন-মহাভারতও দুটি মিথ। কবির কল্পনায় বিকশিত চরিত্র ও রূপকের সাথে মিথের মিশ্রন এবং আমাদের সমাজের ধর্মান্ধতা এ দুটি গ্রন্থকে আজ দিয়েছে ধর্মপুস্তকের মর্যাদা। ভাবতে অবাকই লাগে।

রামায়নের গল্পের বাস্তবতা যে হুবহু এরকম তা হয়তো নয়। তবুও মিথকে সত্য না ভেবে একে বাস্তবতার আলোকে বিচার করা উচিত।

(চলবে)

পর্ব-৩
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১১ রাত ১১:৩২
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×