somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলাসী ফেসবুক সংস্করণ !!!

০৯ ই জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ফ্রেন্ডলিস্টের একটি ছেলের সঙ্গে মাঝে মাঝেই চ্যাট হইত। তাহার নাম ছিল মৃত্যুঞ্জয়। আমার চাইতে সে বয়সে অনেক বড়। প্রোফাইল ইনফোতে দেখিয়াছিলাম, সে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে। কবে সে যে উচ্চমাধ্যমিকে উঠিয়াছিল, এ খবর আমাদের কোনো মিউচুয়াল ফ্রেন্ডই জানিত না, সম্ভবত তাহা প্রত্নতাত্ত্বিকের গবেষণার বিষয়! আমরা কিন্তু তাহার প্রোফাইলে ওই উচ্চমাধ্যমিকই চিরদিন দেখিয়া আসিয়াছি। তাহার মাধ্যমিকে পড়ার তথ্যও কখনো প্রোফাইলে পাই নাই; অনার্সে উঠিবার খবরও কখনো পাই নাই। ফেসবুকে মৃত্যুঞ্জয়ের বাপ-মা, ভাই-বোন কেহই ছিল না, ছিল শুধু এক জনপ্রিয় পেজ, আর তাহার মধ্যে হাজার হাজার লাইকার ফ্যান। আর ফ্রেন্ডলিস্টে ছিল এক আংকেল। আংকেলের কাজ ছিল ভাইপোর নানাবিধ দুর্নাম রটনা করা, সে মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে, সে অনেক ফেক আইডি চালায়, এমনি আরও কত কি! তার আর একটা কাজ ছিল বলিয়া বেড়ানো, ওই পেজের অ্যাডমিন তিনি নিজেও! সে কথা পরে হইবে।
মৃত্যুঞ্জয়কে কখনো কারও ওয়ালে যাচিয়া পোস্ট করিতে দেখি নাই, বরঞ্চ উপযাজক হইয়া তাহাকে ওয়ালপোস্ট করিতাম আমরাই। তাহার প্রধান কারণ ছিল এই যে, কারও স্ট্যাটাসে বিনা মূল্যে লাইক প্রদানে তাহার জুড়ি ছিল না। আর শুধু ছেলেরাই নয়, কত মেয়ে কতবার ফটোগ্রাফি কনটেস্টের কথা বলিয়া, ছবি প্রতিযোগিতার কথা বলিয়া লাইক আদায় করিয়া লইত, তাহা বলিতে পারি না। ফেসবুকে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম।
অনেক দিন ফেসবুকে মৃত্যুঞ্জয়ের স্ট্যাটাস দেখি নাই। একদিন শোনা গেল সে ফেসবুকে আগ্রহ হারাইয়া ফেলিয়াছে। আর একদিন শোনা গেল, সফদর আলীর এক্স গার্লফ্রেন্ড বিলাসী তাহার সাথে চ্যাটিং করিয়া ফেসবুকে তাহার আগ্রহ ফিরাইয়া আনিতেছে।
অনেক দিন তাহার লাইক পাইয়াছি, মনটা কেমন করিতে লাগিল! একদিন সন্ধ্যায় তাহাকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠাইলাম। তাহার প্রোফাইলে প্রাইভেসির বালাই নাই। স্বচ্ছন্দে মেসেজ পৌঁছাইয়া গেল। মৃত্যুঞ্জয় আমাকে চিনিতে পারিয়া রিপ্লাইয়ে বলিল, ‘কে, ন্যাড়া?’
রিপ্লাইয়ে বলিলাম, ‘হু।’
মৃত্যুঞ্জয় কহিল, ‘আসো, চ্যাট করি।’
হঠাৎ দেখিলাম মৃত্যুঞ্জয় আমাকে একখানা গ্রুপ মেসেজে অ্যাড করিল। সেখানে যাইয়া দেখি, মৃত্যুঞ্জয় আর বিলাসীর কত শত চ্যাট হিস্টোরি। এই সেই সফদর আলীর এক্স গার্লফ্রেন্ড বিলাসী। প্রোফাইল দেখিয়া তাহার বয়স আঠারো কি আটাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না। কিন্তু তাহার মেসেজগুলোর প্রতি চাহিবামাত্রই টের পাইলাম, বয়স যা-ই হোক, চ্যাটিং করিয়া আর রাত জাগিয়া জাগিয়া ইহার শরীরে আর কিছু নাই। ক্লান্ত হইয়া মেসেজে খালি ইমো দেয়, কথা কয় না।
মৃত্যুঞ্জয় দুই-চারটি মেসেজে যাহা কহিল, তাহার মর্ম এই যে, প্রায় দেড় মাস তার ফেসবুক ভালো লাগে না। স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে লাইক দিয়া বেড়াইতে সে আর আগ্রহবোধ করিতেছে না। আগ্রহ না থাকুক। কিন্তু ছেলেমানুষ হইলেও এটা বুঝিলাম, আজও যাহার ফেসবুকে-আসক্তি নাই, সেই মানুষটাকে এই ইনবক্সে যে মেয়েটি ফেসবুক আসক্ত করিয়া তুলিবার ভার লইয়াছে, সে কত বড় গুরুভার! দিনের পর দিন, রাত্রির পর রাত্রি তাহার কত চ্যাটিং, কত গল্প, কত ধৈর্য, কত রাতজাগা। সে কত বড় ঝামেলার কাজ! কিন্তু যে বস্তুটি এই অসাধ্য সাধন করিয়া তুলিয়াছিল, তাহার পরিচয় যদিও সেদিন পাই নাই, কিন্তু অন্য আর একদিন পাইয়াছিলাম।
বিলাসী আমাকে পার্সোনাল মেসেজ দিল। এতক্ষণ পর্যন্ত গ্রুপ মেসেজে সে একটি কথাও কহে নাই, এইবার পার্সোনাল মেসেজে বলিল, ‘তোমার দাদা তো আর লাইক দেয় না। তোমার স্ট্যাটাসে আমি একখানা লাইক দিয়া আসব কি?’
লাইক বিনে আমার স্ট্যাটাসগুলো খাঁ খাঁ করিতেছিল। বলিলাম, ‘না না, লাগবে না।’
বিলাসী বলিল, ‘লাইক না পাইলে মন খারাপ হবে না তো? লাইক দিয়া আসব?’
মেয়ে হইয়াও জিজ্ঞাসা করে, ‘মন খারাপ হবে না তো!’ সুতরাং মনে যা-ই থাক, প্রত্যুত্তরে শুধু একটা ‘না’ বলিয়া রিপ্লাই দিলাম।
দিন কাটিতে লাগিল। প্রায় মাস দুই মৃত্যুঞ্জয়ের খবর লই নাই। এমনি সময়ে হঠাৎ একদিন ফেসবুকের হোমপেজে দেখিলাম, মৃত্যুঞ্জয়ের সেই পেজের অংশীদার আংকেল তোলপাড় করিয়া বেড়াইতেছেন যে, ‘গেল গেল, ফেসবুকটা এবার রসাতলে গেল! চৌধুরী বংশ বলিয়া সমাজে আর তার মুখ বাহির করিবার জো রহিল না, অকালকুষ্মাণ্ডটা এমন একটা মেয়ের সাথে প্রেম করিতেছে, যে মেয়ের স্ট্যাটাসে কোনো লাইকই পড়ে না! আবার সে কিনা ওই সফদর আলীর এক্স জিএফ!’ আর শুধু প্রেম নয়; তাহারা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস পর্যন্ত আপডেট করিয়াছে! ফেসবুকে যদি ইহার শাসন না থাকে তো টুইটারে গিয়া টুইট টুইট খেলিলেই তো হয়!
তখন ছেলেবুড়ো সকলের স্ট্যাটাসেই ওই একই কথা, ‘অ্যা, এ হইল কী? কলি কি সত্যই উল্টাইতে বসিল!’
আংকেল বলিয়া বেড়াইতে লাগিলেন, এ যে ঘটিবে তিনি অনেক আগেই জানিতেন। তিনি শুধু তামাশা দেখিতেছিলেন; কোন মেয়ের প্রেমে মৃত্যুঞ্জয় হাবুডুবু খায়! নইলে পর নয়, প্রতিবেশী নয়, আপনার ভাইপো। তিনি কি নিজেই মেয়ে খুঁজিয়া দিতে পারিতেন না?
কিন্তু তাই বলিয়া তো আর চুপ করিয়া থাকা যায় না। এ যে চৌধুরী বংশের নাম ডুবিয়া যায়। ফেসবুকের যে মুখ পোড়ে! তখন আমরা ফেসবুকের সবাই মিলিয়া যে কাজটা করিলাম, তাহা মনে করিলে আমি আজও লজ্জায় মরিয়া যাই। আংকেল চলিলেন চৌধুরী বংশের অভিভাবক হইয়া, আর আমরা দশ-বারোজন সঙ্গে চলিলাম ফেসবুকের বদন দগ্ধ না হয়—এই জন্য।
বিলাসীর প্রোফাইলে গিয়া যখন উপস্থিত হইলাম তখন সবেমাত্র সে একখানা স্ট্যাটাস দিয়াছে। স্ট্যাটাসখানা এরূপ ছিল, ‘পোলা তো নয় সে যে আগুনেরই গোলা! আগুনেরই গোলা! মৃত্যুঞ্জয়, আই লাবিউ!’
আমরা সবাই মিলিয়া সেই স্ট্যাটাসে আজেবাজে আক্রমণাত্মক কমেন্ট করা শুরু করিলাম। অকস্মাৎ গালিগালাজে ভরপুর এতগুলো কমেন্ট স্ট্যাটাস দেখিয়া বিলাসী একটা ভয়ের ইমো পোস্ট করিল!
এদিকে মৃত্যুঞ্জয় যেন ফেসবুকে আসিয়া বিলাসীকে রক্ষা করিতে না পারে, তাই তাহার ইন্টারনেট মডেমখানা চুরি করিয়া আনা হইল!
তাহার পর আংকেল মহাশয় ভয়ে মৃতপ্রায় মেয়েটিকে বিশেষ কিছু শব্দগুচ্ছ দ্বারা সম্ভাষণ শুরু করিলেন। বলা বাহুল্য, জগতের কোনো আংকেল কোনো কালে বোধ করি ভাইপোর প্রেমিকাকে ওরূপ সম্ভাষণ করেন নাই। সে এমনি গালাগালি যে মেয়েটি সফদর আলীর এক্স গার্লফ্রেন্ড হইয়াও তাহা সহিতে পারিল না, চোখ কপালে তুলিবার ইমো দিয়া কমেন্ট করিল, ‘উই আর ইন আ রিলেশনশিপ, ডোন্ট ইউ নো?’
আংকেল কমেন্ট করিলেন, ‘তবে রে!’
এবং সঙ্গে সঙ্গেই দশ-বারোজন বীরদর্পে পুনরায় গালাগালিময় কমেন্ট পোস্ট করিতে লাগিল।
মেয়েটি প্রথমে সেই যা একবার কমেন্ট করিয়াছিল, তারপর একেবারে চুপ করিয়া গেল। কিন্তু আমরা যখন তাহার নামে জাকারবার্গের নিকট রিপোর্ট করিতে উদ্যত হইলাম, তখন সে মিনতি করিয়া বলিতে লাগিল, ‘বাবুরা, আমাকে একটিবার ছেড়ে দাও। আমি তাহার সাথে একটু চ্যাটিং করিয়া আসি। ফেক মেয়ে আইডিগুলো তাহাকে জ্বালাইয়া মারিবে। একা মানুষ, সমস্ত রাত চ্যাটিং করিতে পারিবে না।’
মৃত্যুঞ্জয় ইন্টারনেটবিহীন অবস্থায় পাগলের মতো মাথা কুটিতে লাগিল, কম্পিউটারে পদাঘাত করিতে লাগিল এবং শ্রাব্য-অশ্রাব্য বহুবিধ ভাষা প্রয়োগ করিতে লাগিল।
অবশেষে, বিলাসী সেই স্ট্যাটাসখানা ডিলিট করিতে বাধ্য হইল। আমরাও সে যাত্রায় ক্ষান্ত দিলাম।
আসলে, এই মৃত্যুঞ্জয়টাই যদি তাহার সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়া অমার্জনীয় অপরাধ না করিত, তাহা হইলে তো আমাদের এত রাগ হইত না। আর চৌধুরী বংশের ছেলের সাথে সফদর আলীর এক্স গার্লফ্রেন্ডের প্রেম, এ তো একটা হাসিয়া উড়াইয়া দেওয়ার মতো কথা। কিন্তু কাল হইল ওই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়া। হোক না সে বিয়ের বয়সী ছেলে, হোক না সে একাকী, কিন্তু তাই বলিয়া রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস! ডেটিং নহে, মুভি দেখতে যাওয়া নহে, একসাথে ফুচকা খাওয়াও নহে। একেবারে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেওয়া যে মহাপাপ!
এরপর বৎসর খানেক গত হইয়াছে। কাহারও কোনো খোঁজ নাই।
ফেক আইডির জ্বালা সহ্য করিতে না পারিয়া আমি তখন রোমিওগিরিতে ইস্তফা দিয়া ফেসবুকে অলস ঘোরাফেরা করিতেছি। একদিন দুপুরবেলা দেখিলাম, জনৈক ব্যক্তির স্ট্যাটাসে মৃত্যুঞ্জয় খুব তর্ক করিতেছে। তাহার কমেন্ট খুব তীক্ষ, আক্রমণাত্মক! কে বলিবে এই আমাদের সেই মৃত্যুঞ্জয়! আগে মানুষের স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে বিনা মূল্যে লাইক দিয়া বেড়াইত। আর এখন কিনা সে লাইক না দিয়া তর্ক করিতেছে।
তাহাকে মেসেজ দিলাম। সে আমাকে খাতির করিয়া রিপ্লাই দিল, ‘আসো, চ্যাট করি।’ বলিয়া সে আমাকে তাহাদের গ্রুপ মেসেজে অ্যাড করিল। বিলাসী বার্গার কিনিতে গিয়াছিল, ফিরিবার পর গ্রুপ মেসেজে আমাকে দেখিয়া সেও ভারি খুশি হইল। রিপ্লাইয়ে বলিল, ‘তুমি না আগলালে সেদিন তো তারা আমার আইডিটা খাইয়াই ফেলিত!’
কথায় কথায় জানিলাম, পরদিনই তাহারা ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে সবাইকে বিদায় করিয়াছিল। তার পর থেকে কড়া প্রাইভেসি দিয়া তাহারা এখন মনের সুখে চ্যাট করিতেছে। সুখে আছে—এ কথা আমাকে বলার প্রয়োজন ছিল না, শুধু তাহাদের চ্যাট হিস্টোরির জান, বেবি, সুইটু ইত্যাদি শব্দ দেখিয়াই আমি তাহা বুঝিয়াছিলাম!
বিলাসীর সহিত অমনটি হইবার পর প্রতিশোধপরায়ণ হইয়া মৃত্যুঞ্জয় সব স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে তর্ক করিয়া বেড়াইত। এখন সে বিখ্যাত তর্কবিদ হইয়া উঠিয়াছে। আস্তিক-নাস্তিক, আওয়ামী লীগ-বিএনপি, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কোনো তর্কই সে বাদ রাখে না। আজও নাকি ফেসবুকে একখানা তর্কযুদ্ধ হইবে। শুনিয়া আমি লাফাইয়া উঠিলাম। ছেলেবেলা হইতে দুইটা জিনিসের উপর আমার প্রবল শখ ছিল। এক ছিল প্রেম করা, আর ছিল ফেসবুকে কমেন্টে কমেন্টে তর্ক করা!
তর্ক করিবার জায়গা খুঁজিয়া বাহির করিতে পারিতাম না। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়কে ওস্তাদ লাভ করিবার আশায় আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠিলাম। কিন্তু শক্ত কাজ এবং ভয়ের কারণ আছে বলিয়া প্রথমে তাহারা উভয়ই আপত্তি করিল। কিন্তু আমি এমনই নাছোড়বান্দা হইয়া উঠিলাম যে দুই দিনের মাথায় সে আমাকে সাগরেদ করিয়া নিল। তর্ক করিবার উপায় সে আমাকে শিখাইয়া দিল। মাঝে মাঝে আমাদের গুরু শিষ্যের সহিত বিলাসী তর্ক করিত। তর্কবাজদের সবচেয়ে সুবিধার কাজ হইল, যখন তর্কে হারিয়া যাওয়ার উপক্রম, তখন এই কথা বলা, ‘উফ! কারেন্ট চলিয়া গেল, তাই আজ বিদায় নিতে হইতেছে, না হইলে দেখিয়া লইতাম! ভুলিয়া যাইবেন না, আমার গুরু শাকিব খান!’
এই কাজটার বিরুদ্ধে বিলাসী ভয়ানক আপত্তি করিয়া মৃত্যুঞ্জয়কে মেসেজে বলিত, ‘দেখো, এমন করে মানুষ ঠকায়ো না।’
মৃত্যুঞ্জয় রিপ্লাইয়ে কহিত, ‘সবাই করে, এতে দোষ কী?’
বিলাসী বলিত, ‘করুক গে সবাই! আমাদের তো কারেন্টের অভাব নাই, বাসায় আইপিএস, ইউপিএস সবই আছে, আমরা কেন মিছিমিছি লোক ঠকাইতে যাই!’
আর একটা জিনিস আমি বারবার লক্ষ করিয়াছি। তর্ক করিবার সময় আসিলেই বিলাসী নানা প্রকারে বাধা দিবার চেষ্টা করিত। বলিত, ‘অ্যাই, আসো না, আমরা একটু পোক পোক খেলি! অ্যাই, চলো না আমরা ওয়াল টু ওয়াল প্রেম চালাচালি করি!’ এমন কত কি!
আমরা প্রায়ই স্ট্যাটাসে তর্ক করিতে লাগিলাম। তাহা দেখিয়া বিলাসী ভয় পাইয়া বলিত, ‘তর্ক করিতে যাইয়া যদি কোনো শত্রু তৈরি হয়? শত্রু যদি আইডি হ্যাক করিয়া লয়?’
তো সেদিন এক তর্কে বাস্তবিকই বিলাসীর কথা ফলিল এবং মর্মান্তিকভাবেই। এক বদমাইশ হ্যাক করিয়া ফেলিল মৃত্যুঞ্জয়ের আইডি। আইডি হ্যাক করার পর মৃত্যুঞ্জয়ের আইডি দিয়া নানা রকম আজেবাজে স্ট্যাটাস পোস্ট করিতে লাগিল সেই বদমাইশ। আজেবাজে স্ট্যাটাস দেখিয়া আমরা বুঝিলাম, সময় শেষ। এইভাবেই মৃত্যুঞ্জয়ের আইডি মৃত্যুবরণ করিল। পরে একদিন ফেসবুকে যাইয়া শুনিলাম, ডিঅ্যাক্টিভেট করিবার বাটনের তো অভাব ছিল না। তাই প্রেমিকের শোকে বিলাসী নিজের আইডিখানা অচল করিয়া দিয়াছে।
এভাবে সমাপ্তি ঘটিল এক অমর ফেসবুক প্রেম কাহিনির!
আর অন্যদিকে আংকেল তার ভাইপোর অবর্তমানে মনের সুখে ফেসবুকীয় অপকর্ম করিয়া যাইতে লাগিলেন...

আমার মনে হয়, যে দেশে নর-নারীর মধ্যে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়া প্রেম করিবার রীতি নাই, বরঞ্চ তাহা নিন্দার বিষয়, যে দেশে নর-নারী চ্যাট করিবার সৌভাগ্য, পোক করিবার ভয়ংকর আনন্দ হইতে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত, যাহাদের প্রেমের গর্ব, ছ্যাকা খাওয়ার ব্যথা কোনোটাই জীবনে একটিবারও বহন করিতে হয় না, যাহাদের ভালোবাসার মানুষটির রিপ্লাই না পাওয়ার দুঃখ, আর রিপ্লাই পাওয়ার আত্মপ্রসাদ কিছুই বালাই নাই, যাহাদের অভিভাবক সমাজ আজীবন কেবল ভালোটি হইয়াই থাকিবার ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন, তাই প্রেম ব্যাপারটা যাহাদের নিকট শুধু নিছক কন্ট্রাক্ট, তা সে যতই গিফট-সামগ্রী দিয়া পাকাপোক্ত করা হোক, সে দেশের লোকের সাধ্যই নাই মৃত্যুঞ্জয় আর বিলাসীর ফেসবুক ত্যাগের কারণ বোঝে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×