শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ সভায় বাবাকে স্মরণ করতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই মেজ মেয়ে শীলা আহমেদ বললেন, ‘শহীদ মিনারে বাবার কফিনের পাশে যখন আমরা সব ভাই-বোন দাঁড়িয়েছিলাম, তখন দেখলাম কত কত মানুষ বাবার প্রিয় কদম ফুলসহ নানা কিছু নিয়ে বাবাকে শেষ দেখা দেখতে এসেছেন। তাঁদের সবাই বাবার কফিনে হাত ছুঁয়েছেন। হাজার-লক্ষ মানুষের নিখাদ ভালোবাসার এ দৃশ্য দেখে আমাদের বুক গর্বে ভরে ওঠে।
সেদিন বুঝলাম, লেখকের মেয়ে হওয়াটা অনেক সুখের ও গর্বের। কিন্তু আফসোস, আমাদের সেই অনুভূতিটুকু বাবা আর জেনে যেতে পারলেন না…।’
সোমবার সকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আবেগ-ভালোবাসা-শোক-শ্রদ্ধায় প্রয়াত জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে এভাবেই স্মরণ করলেন আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও লেখক-সাহিত্যিকেরা।
সোমবার সকাল ১১টায় শোকসঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া চার ঘণ্টার এ স্মরণসভায় হুমায়ূন-অনুরাগী অনেক তরুণ মিলনায়তনে ঠাঁই না পেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে প্রয়াত এই লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. সালেহ উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রয়াতের ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস। আমন্ত্রিত আলোচকের বক্তব্য দেন লেখক-সাংবাদিক আনিসুল হক।
দর্শক সারিতে বসে কাঁদলেন হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ, সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন খান, বড় মেয়ে বিপাশা আহমেদ, হুমায়ূন আহমেদের তিন বোন, হুমায়ূন আহমেদের খালাসহ পরিবারের সদস্যরা ।
বড় ভাইয়ের জীবনের নানা ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘দাদাভাই (হুমায়ূন আহমেদ) জনপ্রিয় ছিলেন জানতাম। কিন্তু মানুষের এতটা ভালোবাসা তিনি অর্জন করেছেন, সেটা জানতাম না।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, হুমায়ূন আহমেদ শুধুমাত্র নাটক-সিনেমায় চরিত্র সৃষ্টি করেননি, দেশের অনেক প্রতিভাবান শিল্পী তার হাত ধরে বিখ্যাত হয়েছেন।
আনিসুল হক বলেন, হুমায়ূন আহমেদ বর্ণহীন জীবনকে রঙিন করেছেন, নিরানন্দ জীবনকে আনন্দময় করেছেন। খ্যাতি-সফলতার চূঁড়ায় উঠে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। হুমায়ূন আজ মানুষের আত্মার অংশে পরিণত হয়েছেন, যার জন্য দেশের মানুষ আজ কাঁদছে।
গত ১৯ জুলাই রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হুমায়ূন আহমেদ।