somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামাজ বনাম অশ্লীল ও খারাপ কাজ

১১ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন, “নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে (সূরা আনকাবুতঃ ৪৫)”
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।

যেহেতু এটা স্বয়ং আল্লাহ’র বাণী, সেহেতু এর সাথে দ্বিমত পোষণ করার কোনো অবকাশ নাই। আল্লাহর বাণীকে অস্বীকার করলে বা বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করলে ঈমান থাকবে না বরং মুশরিক হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মনের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, আমরা নামাজ আদায় করি, তাহলে নামাজ আমাদের অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারছে না কেন?

আমরা নামাজ পড়ি ঠিকই, আবার নামাজ থেকে বের হয়ে অন্যের নামে দুর্নাম করি। নামাজ থেকে বের হয়ে যিনা-ব্যভিচারের কাজ করি। ফজরের নামাজ পড়ে মাঠে গিয়ে অন্যের জমির আল ঠেলি। নামাজ পড়ে দোকানে গিয়ে ওজনে কম দেই। নামাজ পড়ে ঘরে গিয়ে স্ত্রীর সাথে চিল্লা-চিল্লি করি। নামাজ পড়ি আবার জুয়ার আসরে যাই।

ঢাকা শহরের কথাই ধরুন। একে মসজিদের শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এই শহরের অবস্থা কত ভয়াবহ, কত বীভৎস। পাপ-পঙ্কিলতা ও অশ্লীলতা এখানে স্বাভাবিক বিষয়। যেহেতু এ শহরে মসজিদ বেশি, তাই যৌক্তিকভাবে বিশ্বের যে কোনো শহরের চেয়ে এখানে নামাজির সংখ্যাও বেশি হওয়ারই কথা। নামাজীর সংখ্যা যেহেতু বেশি, সুতরাং এ শহরের মানুষগুলোর হওয়ার কথা ছিলো একেকটা সোনার মানুষ। বাকী বিশ্বের কাছে আদর্শ ।

কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঢাকা যে দেশের রাজধানী। সেই দেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশ, বাংলাদেশ। সেই দেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় কেমনে? অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের আদর্শ ভাবা হয় আরব দেশগুলোকে। অথচ সেসব দেশের অবস্থা কত ভয়াবহ। কাজের মেয়েদের পাশবিক নির্যাতনে সে দেশগুলো বিশ্বে প্রথম কাতারে। বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসিতা ও অপচয়ের দেশ হিসেবে খ্যাত তারা। অথচ এসব দেশের মানুষও নামাজ পড়ে। বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে তারা নামাজে বরং আরো বেশি যত্নবান।

সারা বিশ্বের মুসলমানরা দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় করছে। কিন্তু কোরআনের সেই আয়াতের প্রভাব তাদের নামাজে পড়ছে না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একশ্রেণির লোক আছে, যারা নামাজ পড়ে ঠিকই কিন্তু তারা ধোঁকাবাজী, মিথ্যাবাদীতা, জুলুমবাজী, যাবতীয় পাপচার এবং দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন। তারা অবলীলায় মানুষকে ঠকায়, অন্যায়কারীর সঙ্গে হাত মেলায়। এসব মানুষের নামাজ কি তাহলে কবুল হয় না। যে লোক নামাজ পড়ে কিন্তু অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না, ভেবে নিতে হবে কোরআন-হাদীস অনুযায়ী তার নামাজ হচ্ছে না। সেইসব লোকের নামাজ আল্লাহর কছে কবুল হচ্ছে না।

কেন এমন হচ্ছে। আল্লাহ বলেছেন এক কিন্তু হচ্ছে আরেক। তাহলে উত্তর হতে পারে, আমি সালাত আদায় করি ঠিকই, কিন্তু তা সঠিকভাবে আদায় করি না। আমার সালাত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। আমার/আমাদের সালাত কবুল হয় না।
আমি কি তাহলে সালাত যথাযথভাবে আদায় করি না? সালাতের তারতিল অনুযায়ী সালাত আদায় করিনা? সালাতে তাড়াহুড়ো করি। হাদীসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তুমি এমভাবে নামাজ আদায় করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছো আর সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে মনে করবে আল্লাহ তোমাকে সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন। আমরা কী এরকম করি না। আমরা কি নামাজের সময় দুনিয়ার যতসব আজে-বাজে চিন্তা-ভাবনায় নিজেকে নিবদ্ধ করি। সালাতকে ঝামেলা ও বোঝা মনে করি?

বর্ণিত প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি যথাযথ না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের সালাত যথাযথভাবে আদায় হচ্ছে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বড় চোর, যে সালাতের মধ্যে চুরি করে (সালাতের নিয়ম-কানুনগুলো সঠিকভাবে আদায় করেনা)”।আমরা বুকে হাত দিয়ে কী বলতে পারি, আমরা এভাবে চুরি করিনা। আমরা কি একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করি? নিশ্চয় আমাদের মধ্যে ত্রুটি রয়েছে। যদি সেরকম হয়, তাহলে এই নামাজ আমাদের কোনো উপকারে আসবে না। অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারবে না।

আমরা যারা নামাজ পড়ি কিন্তু মনযোগের সাথে আদায় করিনা, একই সঙ্গে অন্যায় কাজ করি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, So woe to the worshipers الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর;Who are neglectful of their prayers
নামাজে থাকাবস্থায় একজন নামাজী যেমন আল্লাহর নির্দেশিত নিয়ম-কানুন ছাড়া অন্যদিকে তাকানোর সুযোগ পায় না, ঠিক তেমনি নামাজের বাইরেও আল্লাহর নির্দেশিত কাজটি ছাড়া অন্যসব কাজ তার জন্য হারাম। এভাবে কেউ যখন সর্বক্ষণ নামাজের ধ্যানে থাকবে, কেবল তখনই নামাজ তাকে অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। আর তখনই তার নামাজ সত্যিকারের নামাজ হবে।

অন্যদিকে আমরা দৈনিক লেখা-পড়ার কাজে ৪-৮ ঘণ্টা ব্যয় করি। এক বসাতেই ৩ ঘণ্টার একটি মুভি দেখে শেষ করে ফেলি। একটি ভালো বই একবারেই শেষ করে ফেলি। ফেসবুক বা গেইম খেলে কত সময় নষ্ট করি। ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেই। অথচ নামাজের বেলায় আমাদের যত তাড়াহুড়ো। রকেটের গতিতে নামাজ আদায় করি। মাত্র ১০ মিনিটও নামাজের পেছনে ব্যয় করতে নারাজ।

আবার আমরা আমাদের লেখা-পড়া থেকে শুরু করে সবই বুঝে পড়ি। না বুঝলে বুঝার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। একটি ইংরেজি বাক্য বুঝার জন্য কত প্রাণন্তকর প্রচেষ্টা। কিন্তু নামাজের বেলায় কত অমনযোগী। তোতা পাখির মতো বুলি আওড়াই। নামাজে আল্লাহর কাছে কি চাই নিজেই বুঝি না। না বুঝে চাই। ফলে আমরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি না।

ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হল, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে সালাত। এ কারণে সালাত যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানী করো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন্ স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) -রুহুল মাআনী, ১০/৪৮২

তাই নামাজে একাগ্রতা ও মনযোগ ধরে রাখতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন কা আবশ্যক-
- নামাজে দাঁড়ানো পূর্ব মুহূর্তে জগতের যাবতীয় ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে শুধু আল্লাহর জন্য নামাজ আদায়ে মনকে তৈরি করা।
- নামাজে তাকবীর থেকে শুরু করে সুরা ফাতিহা, সুরা মিলানো, তাহমিদ, তাসবিহ, রুকু, সেজদা এবং তাশাহহুদসহ যাবতীয় আমলগুলো বুঝে অর্থসহ অনুধাবন করে আদায় করা
- নামাজে নিজেকে যত বিনয়ী ও নম্র করা সম্ভব হবে, নামাজে তত একাগ্রতা ও মনযোগ সৃষ্টি হবে।
- নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আশা করা। পরিপূর্ণ সাওয়াব লাভের আশা করা।
- কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থিরভাবে নামাজের রুকু, তাসহিব, তাকবির, তাশাহহুদসহ সকল আরকান-আহকাম আদায় করা।

পরিশেষে বলা যায়, মানুষ যখনই নামাজে মনোযোগী হবে; নামাজে একাগ্রতা তৈরিতে সক্ষম হবে; তখনই বান্দার নামাজ সফলতা পাবে। এ নামাজই মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায়-অশ্লীল কাজ থেকে মুক্ত রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:১৮
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×