আজকাল খুব বেশি বলতে নেই। বেশি কিছু শোনার লোকও খুঁজে পাবেন না। লেখালেখি করবেন একেবারে শর্টকাট। পাঁচ টাকার কলম পেয়ে গেলেন বলে লম্বা লেখে লিখবেন সেটা ভুলে যান। পড়ার সময় নেই কারো আর পড়ে বুঝবার ক্ষমতাও নেই কারো। যত পড়া তত মাথা নষ্ট। দেখেন না আজকাল পরিক্ষায় সব অবজেক্টিভ কোশ্চন... ইয়েস/নো! ব্যস্, জি-৫। বেশি লিখেছেন কি আপনি বাতিলের খাতায় নাম লেখালেন, আপনার ওজনটাও কমে যাবে। ‘পাগল’ খেতাব জুটে যেতে পারে কপালে।
খুব ছোট ছোট..সংক্ষিপ্তাকারে যা বলবার বলে ফেলবেন। আর হ্যাঁ, যা বলবার দ্রুত বলবেন। দেরি করলেন কি মিস্ করলেন। প্রসঙ্গ বদলে যাবে, আপনার কথাগুলো সব হারিয়ে যাবে। কোথায় হারিয়ে যাবে তার ইয়ত্তা পাবেন না। একেবারে কাট্টি ঘুড়ি হয়ে যাবেন। শর্টকাট লিখলেন কি জায়গা পেয়ে গেলেন...আপনি কেউ একজন, এ যুগের। আজকাল হালকা জিনিসের দাম বেশি। কি বললেন! অনুভূতি প্রকাশের জন্য বড় লেখা দরকার! আপনি পাগল হয়েছেন? কোথায় বাস করছেন আপনি? অনুভূতি আজকাল আছে নাকি কারো মধ্যে? হ্যাঁ, ডিকশনারীতে পাবেন বটে, কিন্তু খুলে দেখবেন ঐ পাতায় ধুলোবালি জমে গেছে। ঐ শব্দটা তো মনের সঙ্গে সম্পর্ক মশাই। মনই যেখানে ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে গেছে, সেখানে এই অনুভূতিকে ঝেরেপুছে কি হবে! সময় এখন খুব দ্রুত চলে, আর কিছুদিন পর দ্রুততম পর্যায়ে চলে যাবে। বড় কিছু লিখতে গেলে আপনার সব লেখা ডাস্টবিন-এ চলে যাবে। কেন মিছেমিছি নিজেকে এতটা ছোট করবেন!
‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’...এই ভেবে কোন কফি হাউজে বসে আপনার মনের মানুষটির সঙ্গে প্যাঁচালের দিন শেষ। কফি হাউজে ভিড়-বাট্টা দেখবেন বটে কিন্তু ঐ শর্টকাটের ব্যাপার-স্যাপার...অগভীর বাতচিত। জীবনে অনেক বলেছেন যদি মনে করে থাকেন তাহলে তো বেশ ভাল। আর যদি নতুন কিছু বলার থাকে তাহলে আপনার সব কথাগুলো পুরনো নিউজ পেপার দিয়ে পেঁচিয়ে রেখে দিন। ওটা আর কাজে আসবে না। হ্যাঁ, নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলতে পারেন, যত্তো পারেন। আপনার চেয়ে আপন আর কে আছে বলুন!
আজকাল সব চ্যাটিং, ফিটিং, ডেটিং...এসবের দিন। এখন শুধু টুকরো টুকরো আনন্দ করবার সময়। ছোট ছোট কথায় মজার ঠোকাঠুকি। এই সব মজা আর আনন্দ কেউ মনের ভিতরে মজিয়েও রাখে না আজকাল। কারন পরদিন আবার নতুন জোয়ার শুরু হবে আরেকটি ভাটার টান আসবে বলে। জোয়ার-ভাটার নিত্য জীবন।
সময় পাল্টে গেছে, বদলে গেছে সব। দিনগুলো প্রচন্ড রকম ছোট হয়ে গেছে। আর তাই তো এখন সব ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ আর ডিজিটাল কথাবার্তা। চ্যাটিং (চ্যাটিং-এর বাংলা কি?) আর ক্ষুদেবার্তা মানে sms-এর তুমুল ব্যবহারে আমাদের ভোকাবুলারির অবস্থা কাহিল। ক-এর সঙ্গে খ আর ট-এর সঙ্গে ঠ...মুখের বিকৃতি, চেহারা পাংশু। 'সাধু' বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। 'চলতি' বাবু আছেন বেঁচে কোন রকমে যক্ষার খক্খকানি নিয়ে। ডায়ালেক্টের অত্যাচার আর অপব্যবহারে তিনি না মরলেও বেঁচে থাকবেন মরমর হয়ে। এতসব অল্পস্বল্প রঙ দিয়ে কি জীবনের ক্যানভাস তৈরী করা যায়? কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে গেছে সব কিছুর, সস্তা হয়ে গেছে চায়নিজ মালের মতো। আর তাই তো এখন জীবনের সব রঙ পাল্টে হয়েছে ধুসর নিকষ! যারা রঙ-রঙিলা দেখেনি তারা এতেই খুশি। খুশিই বা কোথায়! রঙের নেশায় রঙের খোঁজে ছাড়াছাড়ি, ফের ছোটাছুটি।
ছোট্ট দিনটাকে বড় করতে এখন মধ্যরাত পেরিয়ে আরও কিছুদুর, যদ্দুর পারা যায়, ফেসবুক-এ লেখালেখি, চ্যাটিং-ফ্যাটিং...তারপর ঝুলে যাও। মানে হ্যাংওভার। পরদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে মধ্য দুপুর। নাস্তা আর লাঞ্চের অক্ষরেখা বদলে গিয়ে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে পরস্পর।
কিছু শব্দ শিখতে হবে আপনাকে...যেমন OMG, lolz, এই সব । অনুভূতি প্রকাশের অভিনব পন্থা। ইলেকট্রনিক যুগে ইলেকট্রনিক অনুভূতি! হৃদয়ের গায়ে লেগে ঠং ঠং করে বেজে ফিরে আসে। যেন রমণীর খিল্খিল্ হাসি কিন্তু শেষ হয় বাঁকা হাসি দিয়ে। কোনও চান্স নেই হৃদয় সিক্ত হওয়ার।
মশাই, আজকাল টিকে থাকতে হলে এইসব জানতে হবে। যুগটা হচ্ছে “survival of the fittest”. অস্তিত্বের প্রশ্নে না হলেও তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকার জন্য তো বটেই। তবে কঠিন, যথেষ্টই কঠিন! পাঁচ ইঞ্চি দেয়ালের উপর দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার মতই। যতটুকু যেতে পারবেন ততটুকুই আপনি ভাগ্যবান। না হলে প্রপাত ধরণীতল, তারপর জড়োসড়ো...দিনগুলির কোনও রকম পারাপার।
তার চেয়ে মশাই আপনি নদীর ধারে হাঁটুন, চাই কি প্রতিদিন। নদীরা বদলায়নি। চাইলে কোন তৃণপূর্ণ মাঠে চিত হয়ে শুয়ে গভীর শ্বাস নিয়ে আকাশকে দেখুন। দেখবেন আকাশটা বদলায়নি। তাও যদি না পারেন তা’হলে নাইট ক্লাব আছে না! ওখানে যেতে পারেন, এক কোণে বসে দু’পেগ মেরে বসে থাকুন। বেশি নেবেন না। নইলে কেমন ছ্যাঁচড়ের মতো লাগবে অথবা সব হারানোদের মতো বিধ্বস্ত মনে হবে, শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’-এর মত, এ যুগে অচল। অল্পস্বল্প মেরে রাজসিক হয়ে বসে থাকুন। আর তাও যদি কুলোতে না পারেন তাহলে মশাই হাই কোর্টের ধারে চলে যান। দিনমান অহিফেন সেবনে মদমত্ত...ভুলিয়ে দিন নিজেকে, অন্যরকম বেঁচে থাকার একটা লাইন পেয়ে যাবেন।
এই সব কোন কিছুই যদি আপনার না পোষায় তা’হলে আমি যাচ্ছি আমার জায়গায়। যাবেন নাকি? আমি ভাই জীবনটাকে চানাচুর মনে করি। সময় মত ঝাঁকিয়ে নিই...পেয়াজ-কাঁচা লঙ্কায়। তারপর মুড়মুড় করে চিবিয়ে খাও, মনের আনন্দে। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে......।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮