somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদীর রক্তের রঙ কালো

১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক'দিন ধরেই, বিশেষ করে রোজার পর থেকে বাড়ি থেকে হাতিরঝিল গুলশান হয়ে অফিসে আসছি জ্যামজট এড়ানোর জন্য। লাভ যা হচ্ছে তা তেমন উল্লেখ করার মত নয়। এদিক দিয়েও মাঝে মাঝে ভালই আটকে যাই।
গুলশান লেক-এর পাশ দিয়েই আসতে হয়। বলা যায় উপর দিয়েই আসতে হয়। ব্রিজটা পার হয়ে বনানীর ১১ নাম্বার রাস্তা ধরতে হয় যে। প্রতিদিনই লেকটাকে দেখি আর মনটা খারাপ হয়ে যায়। লেকের পানি কালো হয়ে গেছে। সুন্দর লেক তার জল কালো!

আমাদের ঢাকা শহরটা হাওয়ায় ভেসে আছে। উপরের দিকে তাকিয়ে বলতে হয় মেগাসিটি। নিচের দিকে তাকালে ঘেন্না লাগে! এই শহরের মানুষেরাও হাওয়ায় হেঁটে চলে, মাটিতে পা রাখে বলে মনে হয় না। নইলে শহরটাকে বাঁচাতে চাইতো। একে মেগাসিটি বলার কারণটা বুঝতে বাকি থাকে না। ঐ যে উঁচু উঁচু অট্টালিকা আর বাহারী বড় বড় গাড়ী! অট্টালিকা যেমন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি গাড়িও দাঁড়িয়েই থাকে। রাস্তা নেই, নিয়ম নেই, কানুন নেই, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে হাঁটা যায়না। তবুও মেগাসিটি! আসলে বুক চিতিয়ে বলা-কওয়ার আনন্দই আলাদা। শুনে পুলকিত হই।

আমার এক বন্ধু ছিল। পাড়ার বন্ধু। ছাত্র হিসেবে একেবারেই ভাল ছিল না। যে কারনে আমাদের স্কুলে চান্স ছিল না। খারাপ ছাত্র অথবা যারা লেখাপড়া করতে চাইতো না তাদের জন্য অন্য স্কুল ছিল। মেট্রিক পাশ দেওয়ার পর শুনলাম ব্যবসা করছে। একদিন দেখি সে পেটটাকে সামনের দিকে বাড়িয়ে একটু পিছনে হেলে হাঁটছে। ভুঁড়ি হয় নি, কিন্তু ভুঁড়িওয়ালার ভাব করছে। কেন? ঐ যে বুক চিতিয়ে বলতে-কইতে চাইছে, আমি ব্যবসায়ী বড়লোক! ভুঁড়ি যার আছে তার টাকা আছে, এমন একটা ধারনা আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। ওর অবস্থা দেখে হাসি পেতো, দু;খও লাগতো বেচারার জন্য। কিন্তু ঢাকার অবস্থা দেখে তো দুঃখ করতে পারিনা, এযে আমারও শহর! আদি ঢাকাইয়া না হলেও বসত গড়েছি যে হেথায়! বড় বড় অট্টালিকা পেট উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে সানগ্লাসের মত রিফ্লেক্টিভ গ্লাস। ওদিকে নিচে নোংরা বিষ্ঠাময় পদযুগল। এই শহরের মানদণ্ড হিসাব করা হয় উপরের দিকে তাকিয়ে। কতগুলো সুউচ্চ দালানকোঠা হয়েছে তার উপর। বাসযোগ্য কিনা সেটা অবশ্যই বিবেচ্য নয়। তবে সত্যি কথা এই যে আমরা সবাই কংক্রিটের বস্তিতে বসবাস করছি। অগাধ টাকাপয়সার মালিক যারা তারাও খুব একটা সুখে নেই, সেটা বনানী-গুলশান দেখলেই বুঝা যায়। সেখানেও নর্দমার পানি উপচে পড়ে। মহানগরের বনেদী পাড়ার এই অবস্থা!

গুলশান লেকের পানি কালো, ওদিকে হাতিরঝিলের পশ্চিম দিকটায়, যেখানে সোনারগাঁও পাঁচতারা হোটেল, তার পাদদেশের পানির দিকে তাকানো যায় না, বমনের উদ্রেক হয়। দুর্গন্ধে মাথা ব্যথা করে। তবু ওটা আমাদের গর্বের লেক। ওর আশে পাশে সবই আছে। বসতবাড়ি, কিছু দোকানপাট এবং সেই পাঁচতারা হোটেল। বুক চিতিয়ে বলি, আমাদের হাতির ঝিল!

পানি আমাদের সহ্য হয় না বোধ হয়। নদীমাতৃক দেশ, অনেক শুনেছি আর কত! কি হবে নদী-জল দিয়ে। মাটি চাই, শুধুই মাটি। টিক্কা-ইয়াহিয়াও বলেছিল 'মাটি চাই'। মানুষ গণ্য নয় মোটেই। এখন আমরাও তাই বলি। মাটি চাই আমার অট্টালিকার জন্য, আমার ব্যবসার জন্য, আমার বসতভিটার জন্য। আর তাই বোধ হয় আমরা নদী-পুকুর-লেক হননে ব্যস্ত। বুড়িগঙ্গাকে মেরেই ফেলেছি বলা যায়। বলাৎকার করতে করতে বেচারীর শরীরের কিছু রাখা হয় নি। শীর্ণ হয়ে গেছে। এখন রক্তক্ষরণ চলছে। আচ্ছা নদীর রক্তের রঙ কি কালো? কালোই বোধ হয়। নইলে সব মৃতপ্রায় জলাধারের রং কালো কেন? আমাদের এই মেগাসিটির সকলের মল-মুত্র আর বর্জ্যের আধার হচ্ছে এইসব নদী-লেক। আমরা কালো দেখছি চারিদিক...পুতিগন্ধময় কালো।

কিন্তু কালোর আরেক নাম যে অন্ধকার। নয় কি?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×