somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম তুই সর্বনাশী…

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মফস্বলের বাড়ীর সামনের গলিটা ধরে একটু এগুলেই মামুনদের বাড়ি। মামুন আমার স্কুল জীবনের শেষের দিকের বন্ধু ছিল। এভাবে বললাম এই জন্য যে মামুনরা থাকতো অন্য কোথাও, ওদের এই বাড়িটা ভাড়া দেওয়া ছিল অনেক দিন। সম্ভবতঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় ওরা নিজেদের বাড়ীতে এলো বসবাস করতে। ওর স্থুল শরীরের কারনে আমরা মাঝে মাঝে মটু বলে ডাকতাম। কিন্তু অত্যন্ত ভাল ছেলে ছিলো। ভদ্র, ন্ম্র। যখন স্কুল ছেড়ে কলেজে উঠলো, কি এক অজ্ঞাত রোগে সে মারা গেল। বাবার একমাত্র ছেলে। ঢাকায় হাসপাতালে ছিল বেশ কিছুদিন। একদিন হঠাৎ শুনলাম ও আর নেই। লাশ এলো ঢাকা থেকে। আমরা সবাই দেখতে গেলাম। তেমনিই আছে। শুয়ে আছে কফিনে। এত রোগশোকের পরও দেখলাম মুখটা তেমনি নির্মল। ঠোঁটের কোণে হাল্কা হাসি লেগে আছে যেন। আমরা বন্ধুরা খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। শুধু আমরা নই, পাড়ার সবাই খুব কষ্ট পেয়েছিল, এমন এক টগবগে তরুণ মরে গেল!

এই মামুনের বড় বোন, ইরানী আপার একদিন বিয়ে হলো ধূমধাম করে। বর মানে আমাদের জামাইবাবু একজন সাংবাদিক, আবার লেখালেখিও করেন। নাম মাহফুজ সিদ্দিকী। যদিও তাদের দাম্পত্ত জীবন সুখের হয়নি। এক সময়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। ইরানী আপারও জীবনের অবসান হয়েছিল কোনও এক অজানা অভিমানে। হয়তো এই দাম্পত্ত জীবনের কারনেই। সে আরেক অধ্যায়।

এই বইটির নাম মনে পড়লো আজকাল আমাদের সমাজে প্রেম-প্রণয়ের নামে জিঘাংসা আর বর্বরতা দেখে। কি হচ্ছে এসব! প্রেম যেন সত্যিই এখন সর্বনাশী! খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে খুন করেছে। আসলে প্রেমিক-প্রেমিকা তো নয়, একজন পুরুষ বা একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালবাসতে চেয়েছে, হয়তো আকারে ইংগিতে বুঝিয়েছে, হতে পারে প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু মেয়েটি তাকে ভালবাসতে রাজি নয়। তার অর্থ কি তাকে মেরে ফেলবো রাজি হলো না বলে? প্রেমের প্রস্তাব করে তুমি যদি বছরের পর বছর অপেক্ষাই না করতে পারলে তাহলে কিসের প্রেম, কিসের ভালবাসা! আর তুমি যদি মেয়েটির মন ভুলানোর জন্য বা তোমাকে আকর্ষণীয় করার জন্য তার কাছে তোমার সকল গুনাগুন তুলে ধরতে না পারো, সেটা কি তার দোষ! এ কেমন ভালবাসা, যাকে ভালবাসতে চাই তাকেই আবার নিজ হাতে মেরে ফেলি! জোর করে ভালবাসা! প্রস্তাব দিয়েও ভালবাসা হয় বলে তো মনে হয় না। এতো এক ধরনের রসায়ন। ক্রিয়া-বিক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন মন থেকেই ডাক আসে, আসে ভাল লাগা। আজকাল চেংড়া ছেলেপেলেরা সবাই নিজেকে নায়ক মনে করে, তো নায়িকা না পাওয়ার তো কারন নেই। এরা ধরেই নেয় যে তাদের জন্য নায়িকা মানে চুটকি। এতসব গুনবান নায়কের জন্য নায়িকাদের লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কথা! সম্ভবতঃ এই রকম ভাবনা থেকেই কারও প্রত্যাখ্যানে মাথা তেতিয়ে ওঠে। অতঃপর জিঘাংসায় হত্যা অথবা ধর্ষণ। কারও অন্তরে যদি বিন্দুমাত্রও প্রেম-ভালবাসা জেগে ওঠে, সে কখনো হত্যা বা ধর্ষণ করতে পারে না। হ্যাঁ পারে, অনেক নজির আছে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করেছে…আত্মহত্যা! যদিও সেটা অপরাধ এবং কাপুরুষের কাজ। অথবা একটা অন্তর্গত অভিমান নিয়ে নিজেকে নিঃশেষ করেছে দিনের পর দিন। অথবা দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকে থেকে থেকে...অবশেষে একদিন দেখা মিললো দুজনার চোখে চোখে, হৃদয়ে হৃদয়ে, মনের টানে। আবার কখনও প্রেমিক তার ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে তার পছন্দের মানুষটির মঙ্গল কামনা করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে, এমনও আছে। সেই তো ভালবাসা যা প্রেমিককে অভিমানী করে তুলে, সেই তো ভালবাসা যা উৎসর্গে আরও মহীয়ান করে তুলে। যেই প্রেমের ব্যর্থতায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় না, অথবা যেই প্রেমের জন্য দুঃখ আর কষ্টের বিলাস নিয়ে বেঁচে থাকার সাহস থাকে না, অথবা যেই ভালবাসা ত্যাগী বা যোগী হতে শেখায় না, সে কি আর ভালবাসা, সে কি আর প্রেম! অথচ আজ সমাজে যাদের দেখি এরা কারা? নায়ক কোথায় এখন! এরা তো খলনায়ক। এরা আর কিছুই নয় শুধু শরীরকেই দেখেছে। মন আর মগজে এক ধরনের বিকৃত রুচি ধারন করে কামুক লালসা চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে এইসব হত্যাকাণ্ডের মতো বর্বরতা চালাচ্ছে প্রতিদিন। এরা absolutely perverted element. প্রেমিক নয় মোটেও। ভাবতেও অবাক লাগে আমাদের দেশের রিপোর্টাররা শিরোনাম লেখে ‘প্রেমে ব্যর্থ হয়ে......।‘ এদের সরাসরি দুর্বৃত্ত এবং সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া উচিত, অন্য কোনও বিশেষণ নয়। কিছুদিন আগে সিলেটে খাদিজাকে যেমন নৃশংস ভাবে কুপিয়ে মৃতপ্রায় করেছিল, একটা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। ভাবা যায় যাকে ভালবাসছে তাকেই এমন ভয়ংকর ভাবে কোপাচ্ছে! প্রায় প্রতিদিন এসব দেখতে পারছি।

কিছুদিন আগে দেখলাম ইন্দোনেশিয়ায় ধর্ষকদের রুখতে আইন করছে যে, ধর্ষক প্রমানিত হলে তাকে শাস্তি হিসেবে ইঞ্জেকশান দিয়ে নপুংশক করা হবে। এর চেয়ে ভাল আইডিয়া তো আর হয় না। সারা জীবনের জন্য শখ মিটে যাবে। আমাদের দেশেও ধর্ষক এবং এই রকম হত্যাকারীদেরও অন্য শাস্তির পাশাপাশি নপুংশক করার ব্যবস্থা করা উচিত, অতিসত্বর।

বলতে দ্বিধা নেই, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার এই সব অপরাধের প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু আধুনিক প্রযুক্তিকে এড়িয়ে চলার উপায় নেই, তাই দেশে কিছু কঠিন আইন তৈরি করতে হবে যত শীঘ্র সম্ভব এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তিটা যেহেতু অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিতদের এবং কুপ্রবৃত্তদের কাছে সহজলভ্য হয়ে গেছে, সেহেতু নতুন আইনের প্রয়োজন খুব বেশী করে দেখা দিয়েছে। অন্ততঃ এই সমাজের আব্রুকে বাঁচানোর জন্য।

আমি অভিশাপ দেই তাদের যারা প্রেম বা ভালবাসার নামে সর্বনাশ ডেকে আনে। আমি অভিশাপ দেই সেই সব পুরুষদের যারা নারীদের নিরন্তর দেখতে ভুল করে।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×