somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভোরের কুয়াশায় আমাদের ক্যাম্পাস

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

....বন্ধু রাশেদের লেখা।
এইতো সেদিনের কথা, কলেজের প্রথম দিন। আমরা একই স্কুলের প্রায় বিশ জন ছাত্র একসাথে ভর্তি হই। আমার কলেজ জীবনের প্রথম দিন বলে কথা! পূর্ব থেকে শারীরিক ও মানসিক অনেক প্রস্তুতি। তাছাড়া কিছু কিছু বাংলা ছায়াছবিতে কলেজ জীবনকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছে তা দেখে জল্পনা-কল্পনা আরো বেড়ে গিয়েছিল। কি হবে, কলেজের প্রথম দিনে!
যথা সময়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলাম। স্কুলের ঐ বন্ধু গুলো সহ ক্লাসে গিয়ে একসাথে বসলাম। আমাদের প্রথম ক্লাসটি ছিল বাংলা প্রথম পত্র। ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে অধ্যক্ষ সহ অন্যান্য শিক্ষকরা এসে নিজেদের পরিচয় দিলেন। আমাদের ক্লাসের শব্দ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুবই বাজে ছিল। শ্রেণি কক্ষের তিন সারির মধ্যে-মধ্যের সারির শেষের দিকে বসেছিলাম আমরা। শিক্ষকরা কিছু বলছিল অনুমান করলাম কিন্তু কথাগুলো বুঝতে পারিনি। যাই হোক, তারপর যা দেখেছি তা অবর্ণনীয়- টেবিলের উপর টেবিল, তার উপর ভাঙা টেবিল! ছেলেরা দৌড় দিচ্ছে, মেয়েরা পাশে চিৎকার করছে। কেউ কেউ দলা পাকিয়ে একে অন্যকে আঘাত করছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই অন্যদের মতো আমিও ক্লাস থেকে বের হয়ে দৌড়...

এবার কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম। তেমন কোন কারণ নেই। নেতাদের ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে এই রকম অনর্থ ঘটানো হয়েছে। সত্যি বলতে যারা এই অকর্মটি করেছে তারা আমাদের কলেজের ছাত্র ছিলনা। অবশ্য সেই দৌড় অনেককে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এভাবে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কলেজের প্রথম দিন শেষ করেছি।

আমাদের কলেজে শুরুর দিকে আর তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। আমরা বন্ধুরা শ্রেণিকক্ষের মাঝামাঝি অবস্থানে বসতাম। কিছুদিন পর আমাদের বন্ধুদের সংখ্যা বাড়তে লাগল। কিভাবে যেন একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল, ততক্ষণে প্রথম দিকের বেঞ্চে বসা শুরু করে দিয়েছি আমরা। আস্তে আস্তে প্রথম সারির কতগুলো মেয়ের সাথেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। শ্রেণিকক্ষের প্রথমদিকে থাকায় শিক্ষকদের সাথে ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল। আমরা আমাদের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার কাছাকাছি। পড়াশুনা যেমন করেছি তেমন পরীক্ষাও দিয়েছি।
তাই ফলাফলও হয়েছে সেইই..ই..ই..ই রকম !

শীতকালীন অবকাশ শেষে চিন্তা করলাম ফলাফলের যা অবস্থা, এর ভবিষ্যত অমাবশ্যার চাঁদের মতোই উজ্জ্বল। কলেজ স্বাভাবিক নিয়মে চলছিল। আমাদের অনেকের বাসা কলেজের আশেপাশে থাকায় বিকেল বেলা একসাথে ঘুরতে বের হতাম। নিয়মিত প্রায় দু-তিন কিলোমিটার হাঁটতে হাঁটতে আড্ডা দিতাম। অনেক মজা হতো।

সত্যিই এখন মনে হয় এতো মজা জীবনে আর কখনো করতে পারবো না। কিছু বড় ভাই এবং শিক্ষকরা মিলে বনভোজনে যাওয়ার আয়োজন করল। বনভোজন সফলও হল। এ বিষয়ে কিছু লিখছি না। কেননা বড়ভাইদের ¯েœহশীল আচরণে আমাদের ক্লাসের বিরাট একটা অংশ বনভোজন বর্জন করল।
কিছু বড়ভাই ক্লাসে গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নাম ঘোষনা করল। শিক্ষকরা বলতো লেখাপড়া না করলে রাজনীতির কোন দাম নেই। আমার পক্ষে দুটি একসাথে করা সম্ভব ছিলনা, তাই এ পথে যাইনি।

কলেজের প্রথম বর্ষ প্রায় শেষের দিকে। আমার কিছু বন্ধু প্রেমরোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে। শুনেছি রোগটা নাকি ছোঁয়াচে। আমার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বন্ধুরা বলতো, “প্রেম করলে কষ্ট পেতে হয় , না করলে জীবন অপূর্ণ থেকে যায়।” তাই আমিও একজনকে পছন্দ করতাম। বন্ধুরা তাকে গোস্ট বলে ডাকতো । সত্যিই সে ছিল ভূতুড়ে কিউট! যাইহোক একদিন সে ভূতের মতোই অদৃশ্য হয়ে গেল।



মাথায় বাজ পড়ল। আমাদের ণবধৎ ঋরহধষ পরীক্ষা সন্নিকটে। যেরকম পড়াশুনা করেছি, ভালো ফল আশা করা নিরর্থক।
পরীক্ষা শেষে বুঝতে পেরেছি যাই করি পড়াশুনা করা উচিৎ। প্রায় সকল শিক্ষক বলতো, জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছি আমরা। আমাদের ভবিষ্যত আমরাই নির্ধারণ করবো এখন। আমার এক বন্ধু বলেছিল, “একটি মেয়ে একটি ছেলের জীবনে সাফল্য আনতে পারে আবার নাও আনতে পারে। অথচ একটি সাফল্য অবশ্যই একটি ছেলের জীবনের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।” তাই আমিও পাল্টে গেলাম।

আমাদের শ্রেণিকক্ষের প্রচুর সমস্যা ছিল । আমরা আন্দোলন করেছি সেই সমস্যা গুলো সমাধান করার জন্য। কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কারণে যথাযথভাবে সমস্যা সমাধান হয়নি। আমাদের মতো, বাংলাদেশের আর কোন কলেজে একসাথে ৬০০ এর অধিক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস হয় কিনা জানিনা। কেউ আমাদের সাথে অবিচার করছে না তো? বলতে পারবো না।

কলেজ তার নিজস্ব গতিতে চলছে। প্রাক্ নির্বাচনি পরীক্ষা সন্নিকটে। পূর্বের প্রস্তুতির ন্যায়ই এবারের প্রস্তুতি। আমার নানুর একটা কথা মনে পড়ল, “যার বুদ্ধি হয়না নয় বছরে, তার নব্বই বছরেও হয়না। ” আমার অবস্থা ওরকমই। আমাদের টেস্ট পরীক্ষার শেষে পড়াশুনার চাপ খুবই বাড়তে লাগল। বড় ভাইদের কাছে শুনেছি তারা নাকি টেস্ট পরীক্ষার পর বিছানার সাথে পিঠ লাগাতো না। আমরা তো পিঠই উঠাই না! জীবনের এই গুরত্বপূর্ণ সময়ের সঠিক মূল্য দিচ্ছিনা আমরা। আমাদের কিছু বন্ধু প্রথম থেকেই পড়াশুনার প্রতি গুরত্ব দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ৫০ নম্বর নাকি ঐঝঈ পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে। সুতরাং হেলা করার কোন কারণ নেই।

সত্যিই, একটা ভালো ফলাফল সকল দুর্নামকে সুনামে পরিণত করতে পারে। অপরদিকে একটি হতাশাব্যাঞ্জক ফলাফলও সকল সুনামকে দুর্নামে পরিণত করতে পারে।

আজ বুঝতে পারছি কেন শিক্ষকরা বলেছিল, কলেজ জীবনটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। ঠিক যেন ভোরের কুয়াশার মতো,। যা স্বল্প সময়ের জন্য এসে রোদের আলোয় মিলিয়ে যায়।
এটিই রূঢ় বাস্তবতা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×