যুব সমাজের অবক্ষয়ের জন্য দায়ি কে?
আজকের এই যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ কি? প্রশ্নটায় সবাই একবাক্যে উত্তর দেবেন তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার, মূল্যবোধের অভাব কিংবা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আমি আপনাদের মতের বিরোধিতা করছিনা; কেননা ছাদের উপর থেকে পড়ে গেলে ঠ্যাং ভাঙবে একথা তো সবাই জানে, কিন্তু গরল-পিয়ালা পান করেও যে মৃত্যুর বুকে ঢলে পড়া যায় একথা স্বীকার করতে আমরা সচেষ্ট নই। যারা হাজার বক্তব্যে যুব সমাজের অবক্ষয়ের জন্য তথ্য প্রযুক্তিকে দায়ি করছেন তাদের জানা উচিত, ব্লাক মেইলের মাধ্যমে যেমন অশ্লীল ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়; ঠিক তেমনি ব্লাক মেইল না করেও করা যায়। কেননা মানুষ দোষি তার উপকরণে নয়, আচরণে। আমরা তো আধুনিক ছেলেদের ইতিহাসও জানি, হিটলারের ইতিহাসও জানি। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারহীনতা তো হিটলারকে তার জঘন্ন কাজ থেকে এক বিন্দুও পিছপা করতে পারেনি। তবে কি দোষটা প্রযুক্তির না ব্যক্তিমানসের? আমি অনেক বক্তাকে দেখেছি যারা বিভিন্ন সেমিনারে অত্যন্ত যৌক্তিক ভাবে এ কথা বুঝিয়ে দেন যে আজকের তরুণদের বিশেষ করে যুব সমাজের অবক্ষয়ের একমাত্র কারণ আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। সাংস্কৃতির আগ্রাসন অবশ্যই একটি দেশের জন্য হুমকির বার্তা বয়ে আনে, লুফে নেয় তার হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের অমিয় সুধা। কিন্তু যুব সমাজের এই নেতিবাচক প্রভাবের জন্য কি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনই দায়ি? যে দিগি¦জয়ী বক্তারা মঞ্ছে দাঁড়িয়ে সাংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরোধিতা করে বক্তব্য প্রদান করেন তাদেরকেও দেখতে পাই ঘরে বসে একই ছেলের সাথে ভিনদেশী সংস্কৃতির বর্ণিল শোভায় আতœহারা হয়ে আছেন। তবে তার বক্তব্য কি প্রধান অতিথির সম্মান রক্ষার্থে? নাকি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য?
যারা নিজেদের মনের গন্ডি থেকে বের হয়ে সুস্থ মানসে চলতে ভয় পান, তারা কেন সুস্থ মানসের কথা বলেন? কোনদিন আপনার বিবেককে প্রশ্ন করে দেখেছেন কি? আপনি কি বলছেন আর কি করছেন!
এখন হয়তো সবাই বলবেন তবে কি আমি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পক্ষে ওকালতি করছি। অবশ্য না। কেননা কোন স্বাধীন দেশের পক্ষেই তা কাম্য নয়, আমারও ব্যক্তিরও নয়।
আমি শুধু বলতে চাই শুধু শুধু ভিনদেশি সংস্কৃতিকে দোষ না দিয়ে নিজের সংস্কৃতি লালনের মাঝেই আসল মনুষ্যত্বের বিকাশ। কিন্তু আমাদের সবচাইতে বড় দোষ হলো আমরা মাথাব্যথার ওষুধ হিসেবে শুধু মাথা কেটে ফেলাই বুঝি! ইন্টারনেট নিয়ে লিখতে গেলে তো মহাবিপদ!
বস্তুত আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করি শুনে আমার কিছু বন্ধুও আমায় বলল, অবশেষে তুমিও?
এর কারণও অস্পষ্ট নয়। কেননা, বিদ্যুৎ মাত্রেই যে মানব জীবনের হুমকি, এতো সবাই বিশ্বাস করি; কিন্তু বিদ্যুতই যে এক মহা শক্তির আধার-এ সত্য দেখেও আমরা আজীবন না দেখার ভান করে থাকি!
তাই আসুন, বক্তব্যের জন্য নয়, সেমিনারের জন্য নয়, টকশোর জন্য নয়, আপন ব্যক্তিসত্ত্বার বিকাশে আপন সংস্কৃতির চর্চা করিÑ অন্যের সংস্কৃতিতে দোষ দিয়ে চোখ বুঁজে থাকার কোন মানে হয়না।