সানি আর তাসকিনকে তাদের বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি । সেটি এমন একটি সময় করা হয়েছে, যা কি না যে কোন বড় একটি দলের জন্য বিশাল এক আঘাত হতে পারে । ফর্মে থাকা দু'জন বোলারকে বিশ্বকাপের আসর থেকে বের করে দেওয়া অমানবিক অন্যায়ও বটে । স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের মানুষ,ক্রিকেট প্রেমী যুবক সমাজ ও খেলোয়াড়েরা বিষয়টাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি । নেওয়ার কথা ও নয় । তার উপরে সানি, তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার ক্ষেত্রে আইসিসি যে, কোন নিয়ম নীতির ধারে কাছে দিয়েও হাটেনি সেটি প্রকাশ হবার পর পুরো বিশ্ব আইসিসির বাংলাদেশের প্রতি এ বিমাতা সুলভ আচরণের জন্য ছি ছি করছে । বিগ বি থেকে শুরু করে ইয়েন চ্যাপেল,ওয়াসিম আকরাম সবাই কথা বলেছেন বিষয়টি নিয়ে ।
আইসিসি এক ব্যাখ্যায় বলেছে, আরাফাত সানির বেশির ভাগ ডেলিভারির সময়ই কনুই বেঁকে গেছে ১৫ ডিগ্রির বেশি। আর তাসকিনের কিছু ডেলিভারি বৈধ হলেও কিছু ক্ষেত্রে তাঁর কনুইও ১৫ ডিগ্রির বেশি বেঁকে গেছে। এখন বোলিং অ্যাকশন শুধরে না নেওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরেই থাকতে হবে তাসকিন ও সানিকে। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী ম্যাচগুলোতে আর খেলতে পারবেন না এই দুই বোলার। আইসিসির অনুমোদিত পরীক্ষাগারে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারলেই কেবল তাঁরা ফিরতে পারবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
আইসিসির সঙ্গে বাংলাদেশর বৈরিতা দীর্ঘ দিনের । মুস্তফা কামালকে শ্রীনিবাস বিশ্বকাপের ট্রফি দিতে দেয়নি । আইসিসি থেকে এক প্রকার বের করে দিয়েছে বলা চলে । সেটা নিয়েও সারা বিশ্বে হই হই রব উঠেছিল । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি । সেটা অবশ্য হয়নি মুস্তফা কামালের জন্যই । প্রথমে হুঙ্কার ছেড়ে পরে দেশে এসে তিনি বিড়াল হয়ে গিয়েছিলেন । তখন যদি তিনি আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করতেন তা হলে হয়তো বাংলাদেশীদের আজকের এ দিন দেখতে হতো না । আইসিসির সঙ্গে সেই যুদ্ধ বা ধন্ধটা কিন্তু এখনও চলছে । জন্মু কাশ্মীরের মতো আইসিসিও ভারত দ্ধারা নিয়ন্ত্রিত । জগমোহন ডালমিয়া শ্রীনিবাসকে তার দুনীতি আর অনিয়মের জন্য আইসিসি থেকে বিদায় করেছেন ঠিকই কিন্তু শ্রীনিবাসের দোসরা যে এখনও আইসিসি নিয়ন্ত্রণ করছে তা আইসিসির ব্যবহারেই বেশ বোঝা যাচ্ছে ।
যে কোন খেলোয়াড় তার বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হতেই পারে কিন্তু তাসকিন আর সানির ব্যাপারে আইসিসির লুকোচুরি দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এটি তাদের ষড়যন্ত্রের একটি অংশ । ভারতের আকা নকশাই তারা বাস্তবায়ন করছে । ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতও ভাবে জড়িত বলে আমি মনে করি । নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে খেলতে আসেনি । এ ক্ষেত্রে তারা আইসিসির আইনেরও তোয়াক্কা করেনি । আইসিসি ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে । বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে এসে ভারত নাকানি চুবানি খেয়ে গেছে । মোস্তাফিজের বোলিং তোপে চোখে সর্ষে ফুল দেখেছে তারা । সত্যি বলতে সে পরিস্থিতিতে যেন তাদের আর পরতে না হয়ে সেই ভয়েই ভারত এই নোংরা মনস্তান্তিক গেম খেলছে বাংলাদেশের সঙ্গে । তারা চাইছে মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশকে মানসিক ভাবে পঙ্গু করে দিতে । সেটা করতেই তারা তাসকিন আর সানিকে বেছে নিয়েছে ।
পরিশেষে বলবো, তাসকিন,সানি,মোস্তাফিজরা যখন ছিল না তখনও বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলেছে এখনও খেলছে । খেলতে খেলতেই মোস্তাফিজ,সানিরা বের হয়ে এসেছে । ভুলে গেলে চলবে না, আমরা বাঙালীরা লড়াকু জাতী । আমরা যুদ্ধ করতে জানি । জানি কি করে জয় ছিনিয়ে আনতে হয় । আমাদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না । আইসিসি বোধ হয় জানে না, বাংলাদেশের টিম যেদিন খেলে সেদিন শুধুমাত্র এগারোজন নয় বাংলাদেশের পুরো ষোল কোটি মানুষ খেলে । বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই দু:দিনে জগমোহন ডালমিয়াকে অত্যান্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি । তিনি আজ বেচে থাকলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াতেন । অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচ যদি আমরা জিততে পারি তা হলে, সে জয়টি যেন, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জগমোহন ডালমিয়াকে উৎসর্গ করা হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১৯