গতকাল আড়িপাতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম,রাতেই কুমিল্লা আওয়ামীলীগের এক নেতার কল রেকর্ডিং ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে । সেখানে উনি নিজ দলের সদস্যদের সম্পর্কে যে,বিষাদাগার করেছেন সেটা এখন ভাইরাল । সমালোচনা মানুষের জন্মগত অভ্যাস । নিজের আপনজন সর্ম্পকেও তো আমরা আঘাত পেলে কষ্ট পেলে সমালোচনা করি । তাই বলে সব ফাস হয়ে যেতে হবে ? এখন কথা হচ্ছে এর থেকে বাচার উপায় কি?
যেহেতু মোবাইল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে কথোপকথন রেকর্ডিং হচ্ছে আর মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে তথ্য দিতে বাধ্য সেহেতু এ থেকে পরিত্রাণ নেই । কোন থার্ড পার্টি জ্যামার দিয়ে এটা বন্ধ করা যাবে না । তাহলে কি করা যায় ? কিছু না কিছু উপায় তো আছেই। চলুন সে বিষয়গুলো জেনে নেই ।
প্রথমেই বুঝতে হবে আপনার মোবাইল ট্র্যাপ করে কল রেকর্ডিং করা হচ্ছে কিনা । একটু সর্তক হলে সেটা সহজেই কিন্তু বোঝা যায় । কোন মোবাইল ট্রাপ হলে রোগবালাইয়ের মতো সেটারও কিছু লক্ষণ আছে । লক্ষন দেখে যদি বুঝতে পারেন কল রেকডিং হচ্ছে, তাহলে আপনাকে সর্তক হতে হবে । এবার আসেন আসুন লক্ষনগুলো জেনে নেই । আপনার মোবাইলে অন্য মোবাইল থেকে কল এলে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, মোবাইল ভাইব্রেশনে না থাকলেও রিং হতে মিলি সেকেন্ড সময় নিবে। (এর কারণ যারা আপনার কল ট্রাপ করছে তাদের কাছে সংকেত পাঠাচ্ছে । ) কল রিসিভ করার পরে অপরপ্রান্ত থেকে কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্য কথা বন্ধ হয়ে যাবে । অথাৎ আপনি কিছু শুনতে পাবেন না । তারপর কথাবার্তা শুরু হবে । আপনি যখন নেটওয়ার্ক প্রবলেম মনে করে হ্যালো হ্যালো করতে থাকবেন ঠিক সেই মুহূর্তে রেকর্ডিং চালু হয়ে যাবে ।
আগে রেকর্ডিং শুরু হবার পূর্বে টিং করে একটি শব্দ হতো , এখন আর সেটা হয় না । দু'এক সেকেন্ড সময় নিয়েই কল রেকর্ডিং শুরু হয়ে যায়। কল রেকর্ডিং হচ্ছে, এটা বুঝার আরেকটি উপায় হচ্ছে, কথা শুরু করার মিনিট খানেকের মধ্যে হুট করে কল ড্রপ হয়ে যাবে নতুবা অপর প্রান্ত থেকে আসা কথা শুনতে পাবেন না । আপনি ভাববেন ,নেটওর্য়াক প্রবলেম । আর একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন, যেসব মোবাইল ট্র্যাপিং হচ্ছে, কল এলে মোবাইল এবনরমালের মতো আচরণ করবে । পুরাই মাথা নষ্ট । আপনা থেকে হুট হাট বিভিন্ন অপশনগুলো চালু হবে আবার বন্ধ হবে । ব্লুটুথ ওপেন হবে , টর্চ জ্বলে উঠবে । লোকেশন ওপেন হয়ে যাবে । মোবাইল এর স্কীন কাঁপা কাপি করবে । স্পিকার অন হয়ে যাবে । আবার হঠাৎ করে সাইলেন্ট হয়ে যাবে । সব চেয়ে বড় লক্ষনটি হচ্ছে,নতুন মোবাইল হওয়া সত্বেও দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া। এই সব লক্ষণগুলো থেকে সহজেই বুঝতে পারবেন আপনি ডেঞ্জারাস জোনে আছেন কি নাই ।
এ অবস্থা থেকে বাচার উপায় কি যদি এ প্রশ্ন করেন তাহলে বলবো , বাচার উপায় নেই । সহজে পরিত্রাণ নাই । তবে আপনি যদি ভাল মানুষ হন তাহলে ভয়ের কিছু নাই কিন্তু খারাপ হলে খবর আছে । বিশ্বের কোন দেশের লোক ই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবে না কারণ আপনার কথা রেকর্ডিং হচ্ছে , মোবাইল অপারেটরের সাহায্যে । তারাও অসহায় তাদেরও কিছু করা নাই । কারণ, আইন করে তাদের এ ব্যাপারে সহায়তা করার জন্য বলা হয়েছে । সাহায্য না করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে । রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য আপনি আমি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কিছু করতে পারবো না । কারণ সবার আগে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ।
মোবাইল এপসগুলো কি কল রেকর্ডিং এর অন্তর্ভুক্ত ?
এবার আসি মোবাইল এপস্ এর বিষয়ে । সাধারণত আমরা যেসব এপস্ ব্যবহার করে কথা বলি ও ম্যাসেজ আদান প্রদানের জন্য করি সেগুলো হচ্ছে, ফেসবুক ম্যাসেন্জার,ইমো,হোটস এপস,ভাইভার ইত্যাদি । সাধরণত মোবাইল এপসগুলোতে যখন কথাবার্তা চলে তখন তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে ইনক্রিপ্ট হয়ে যায় । অর্থাৎ কথোপকথোন তালগোল পাকিয়ে জটিল কোন কোডে রুপান্তরিত হয় । তখন তা আর ডিক্রিপ্ট বা ডিকোড না করলে থার্ডপাটি কারো পক্ষে তা আর শোনা সম্ভব হবে না । আর নিয়ম অনুযায়ী কারো কাছেই এপস্ ডেভলোপার কোম্পানিগুলো তা প্রকাশ করে না । তাই এসব এপস্ ব্যবহার করে কথাবার্তা বলা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ । তবে অর্থের বিনিময়ে যদি কোন কোম্পানি থার্ডপাটি কারো হাতে আপনার কথোপকথোনের একসেস তুলে দেয় তাহলে কিছু করার নেই । তবে , এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনিয় যে, প্রতিটি মোবাইলেই এখন কথা রেকর্ড করার অপশন আছে । আপনি যার সাথে কথা বলছেন, সে যদি রেকড করে নেটে ছেড়ে দেয় সে ক্ষেত্রে কাউকে দায়ী করা যাবে না । সাধারণত আইন শৃঙ্খলার সাথে জড়িত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীই এমন কাজ করেন না । তারা তাদের উপর অপিত দ্বায়িত্ব পালন করেন মাত্র । এবং সেটা করেন দেশের নিরাপত্তার জন্য ।
পরিশেষে বলবো, সব খারাপ বা সব অসুবিধার মধ্যেও কিছু ভাল থাকে ।
সমালোচনা বা গীবত করা একটি খারাপ রোগ । যা ইহ জগত ও পর জগত উভয় জগতের জন্যই খারাপ । তাই কল রেকর্ডিং ও তা ফাঁসের ভয়ে অনেকেই এখন সমালোচনা বা গীবত করা থেকে দূরে থাকবে আর পাপ কম হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪৯