somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

পরিণতি ৭ম পর্ব, একটি মনস্তান্ত্রিক রহস্য উপন্যাস

৩১ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।) ( গল্পের ধারা বজায় রাখায় জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু সংলাপ ও মুহূর্ত উঠে এসেছে । সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )

সপ্তম পর্ব

ঢের হয়েছে আর না । ফাইলের স্তূপ দূরে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম । উত্তরা থেকে গুলশান দূরত্ব খুব একটা বেশি না। হেলে দুলে গেলেও ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় লাগার কথা না। কিন্তু রাস্তায় নেমে চমকে উঠলাম । রাস্তায় কোন যানবাহন নেই । চারপাশ দেখে মনে হচ্ছে দেশে হরতাল,অবরোধ চলছে । কিন্তু সে রকম কিছু তো শুনি নাই । হাত ঘড়ি দেখলাম পৌনে ১১টা বাজে।

অফিস বিল্ডিং থেকে নিচে নেমে আসার পর টের পেলাম বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে ৷ তার উপরে কুয়াশা জমতে শুরু করেছে ৷ দশ হাত দূরের বস্তুও ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না ।

অফিস বিল্ডিঙের সামনেই সচরাচর যানবাহন পাওয়া যায় ৷ এখান থেকে বাস,টেম্পো বাড্ডা, বনানী হয়ে গুলিস্তান যায় ৷ কিন্তু আজকের চিত্র একেবারে ভিন্ন ।  বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করার পরেও একটা বাস কিংবা টেম্পো এলো না। অজ্ঞতা বাধ্য হয়ে হাটতে হাটতে মেইন রোডে এসে দাঁড়ালাম।

শুনশান রাত্রির নির্জনতায় নিয়ন বাতির ঘোলাটে আলোয় দু লেনের বিশাল রাস্তাটা যেন পুরোপুরি ভুতুড়ে হয়ে আছে ৷ এ রোডটি সোজা চলে গেছে, গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল। তাই রাত দিন সব সময় মারাত্মক ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আজ যানবাহন চলাচল নেই বললেই চলে । শুধু একটু পরপর বিকট শব্দ করে দু একটা দানব আকৃতির ট্রাক সাই সাই করে চলে যাচ্ছে ।  হঠাৎ করে এভাবে যানবাহন বন্ধ হয়ে যাবার কারণটা বুঝতে পারছি না। তা না হলে এমনটা হবার কথা নয়। ১১ টা, ১২ টা ঢাকা শহরে তেমন একটা বেশি রাত্রি নয় যে গাড়ি ঘোড়া চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে ৷ নিশ্চয়ই কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে ।

অনুরাধার জন্য ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠেছি । উপায় অন্ত না দেখে একসময় মেইন রোড ধরে হাটতে লাগলাম । এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে পারলে কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে । একেবারে কিছু না পেলে যা থাকে কপালে,প্রয়োজনে হেটেই চলে যাবো।

কিন্তু কয়েক কদম হাটতেই পেছন থেকে একটা মাইক্রো এসে থামলো আমার ঠিক পেছনে । ড্রাইভারের আসন থেকে একজন মাথা বের করে জিজ্ঞাস করলো,  কই যাবেন ভাই ?

মাইক্রোটা দেখে আমি খুশি হয়ে উঠলেও সামনে গিয়ে মাইক্রো বাসের পেছনে বসা লোকগুলো দেখে খুশিটা সাথে সাথে দূর হয়ে গেলো । জনা পাঁচেক লোক ঘাপটি মেরে বসে আছে পেছনের সিটে । তাদের দেখে আর যাই মনে হোক না কেন সুবিধার বলে মনে হলো না । একটা চক্র এই ভাবে রাস্তা থেকে যাত্রী তুলে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ছিনতাই করে আসছে। এদের দেখে সেই রকমই মনে হলো। 

আমি বললাম, "কোথাও যাবো না ভাই । এমনিই রাস্তায় হাটছি ।"
এবার লোকটা জানালা দিয়ে মাথা বের করে বলল, আমরা মহাখালী যাচ্ছি ভাই । চলেন আপনারেও নিয়া যাই। ভাড়া বেশি নেবো না, ৫০ টাকা দিলেই চলবে ।

তাদের মতলব বুঝতে আমার বেগ পেতে হলো না৷ এমন সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের কথা প্রায়শই পত্রিকায় ছাপা হয়।
আমি তাই বেশ দৃঢ়তার সাথে বললাম, "আমি কোথাও যাবো না । হাটতে বের হয়েছি । বন্ধু গেছে সিগারেট আনতে।" আমার কথায় লোকটা যেন উৎসাহ হারিয়ে ফেললো। আশে পাশে তাকিয়ে আমার কাল্পনিক বন্ধুকে খোঁজার চেষ্টা করলো।

লোকটা বিরক্ত হয়ে গালি জাতীয় কিছু একটা বলে মাইক্রোটা সাই করে টান দিয়ে চলে গেলো। এসব গালি গায়ে মাখতে নেই। এইতো সেদিন পড়লাম এক পুলিশ কর্মকর্তা এমন ছিনতাইকারীদের পাল্লায় পড়ে জীবন হারিয়েছেন। কয়েকদিন খুব ধর পাকর হয়েছে তারপর যে কে সেই৷ মানুষের জীবনের এখন ফুটো কড়িও মূল্য নেই। তাই নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে,বিচার বুদ্ধি করে চলা। তাতে অন্তত আফসোস থাকে না৷

মাইক্রোটা চলে যেতে মনে হলো, মস্ত একটা বিপদ থেকে বাঁচলাম। এরা নির্ঘাত ছিনতাইকারী। পুলিশ কেন যে এদের খুঁজে পায় না তা আল্লাহ মালুম। আর পেলেও বা লাভ কি?  হয় টাকা জোড়ে থানা থেকেই বের হয়ে যায় না হয় কোটে চালান দিলে জামিনে বের হয়ে এসেই আবার সেই একই কাজে লেগে পরে। তাই উচিত এদের জন্য জামিন অযোগ্য কোন আইন করা।

এই যে, প্রতিদিন এতো এতো নারী, শিশু ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। বিচার হয়। ধর্ষকেরা জেলে যায় কিন্তু তাতে ধর্ষণ কি বন্ধ হয়?  হয় না। যদি ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি হতো মৃত্যুদন্ড। সেই সাথে যদি ধর্ষকের সকল সম্পদ ক্রোক করে ধর্ষিতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে আর একটাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না। আমি বুঝি না। যে আইন করে, অপরাধ কমানো যায় না সেই আইন করে লাভ কি?

শুণশান রাস্তা ধরে হাটতে খারাপ লাগছে না। মৃদুমন্দ হাওয়ায় বইছে৷ ধুলো বানি নেই৷ যানবাহনের যন্ত্রণা নেই। এমন থাকলে হাটতে হাটতে বাসায় পর্যন্ত ও চলে যেতে পারবো। যদিও তাতে পায়ের অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে।

ছোট বেলায় আব্বাকে দেখতাম সাইকেলে চালিয়ে প্রতিদিন সাত,আট কিলোমিটার দূরে অফিসে যাতায়াত করতেন। মাঝে মাঝে ভাবি একটা  সাইকেল কিনি ৷ তবে এমন ব্যস্ত রোড দিয়ে সাইকেল চালালে বাসের নিচে যেতে হবে। তবে একটা মোটর সাইকেল কিনলে মন্ধ হয় না। দেখি অনু রাজি হলে একটা মোটর সাইকেল কিনে ফেলবো। তার আগে অবশ্য,চালানো শিকতে হবে। বন্ধুদের অনেকেই মোটর সাইকেল আছে যে কাউকে বললে শিখিয়ে দেবে৷ তবে আমার কেন যেন,মোটর সাইকেল একদম পছন্দ নয়। তবে ভেসপা ভালো লাগে। আমার নানা বাড়ির প্রায় সবাই ভেসপা চালায়। মোটরসাইকেলের চেয়ে ভেসপা অনেক জেন্টেল ও নিরাপদ মনে হয়।

হাটতে হাটতে রাজলক্ষ্মীর কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেলাম একটা সিএনজি রাস্তার পাশে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগেও সিএনজিটা দেখতে পাইনি ।  হুট করে যেন উদয় হলো কোথা থেকে ? যেখান থেকেই আসুক এতকিছু ভাবার সময় নেই । আমি প্রায় দৌড়ে সিএনজিটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম । ভেতরে তাকিয়ে দেখি পুরো মুখমণ্ডল মাফলারে পেঁচিয়ে চালকের আসনে মধ্যবয়স্ক একজন বসে আছে ।

আমি সিএনজির দরজার সিক ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, "মামা গুলশান যাবেন ?"
লোকটা যেন আমার কথা শুনেও শুনলো না । চুপ করে বসে রইলো। একবার মনে হলো লোকটা বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছে। এবার তাই সিএনজির পেছনে মেসেঞ্জার বসায় জায়গাটাতে তাকালাম। অন্ধকারে ভেতরটা পরিস্কার দেখা না গেলেও বুঝতে পারলাম ভেতরে কেউ নেই । সিএনজিটা খালি দেখে,মনের ভেতর আশার আলো জ্বলে উঠলো। ভাড়ায় গেলেও যেতে পারে।

এভার আর একটু জোড়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "মামা গুলশান যাবেন ?

এবার লোকটা আমার দিকে তাকালো । সিএনজির বাহিরে আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখতে পেয়ে মাফলারে ঢাকা লোকটার কুতকুতে চোখ দু'টো যেন কয়েক মূর্হুতের জন্য  জ্বলে উঠলো । আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করলাম, মামা যাবেন ?

লোকটা এবার আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সিএনজি স্টাষ্ট দিয়ে পেছনের দরজা খুলে দিয়ে বলল, বসুন । আমি আশ্চর্য হলাম এই ভেবে যে লোকটা একবারের জন্য ও জানতে চাইলো না গুলশানের কোথায় যাবো ?

আমি বললাম, কত দিতে হবে ?

লোকটা বলল, উঠে বসুন; যা ইচ্ছে দিয়েন।

আর কথা বাড়ালাম না । সিএনজি পেয়েছি এই যথেষ্ট । উঠে বসতে বসতে মনে মনে ভাবলাম, কত আর নেবে ? এতো ভাবলে চলে না ।

আমি উঠে বসতেই সিএনজিটা চলতে শুরু করলো । সিএনজির ভেতরে ক্যামন পঁচা, ভোঁটকা একটা গন্ধ । মাছ  না মাংস পচা গন্ধ ঠিক বুঝতে পারলাম । এখন বুঝতে পারছি লোকটা নিজের নাক মুখ কেন মাফলার দিয়ে ঢেকে রেখেছে ।

আমি বললাম, "মামা এতো গন্ধ কিসের? নাড়িভুঁড়ি যে বের হয়ে আসতে চাইছে।"


চলবে

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×