somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Ballad of a Soldier : যোদ্ধা কিংবা যুদ্ধের, ভালবাসা কিংবা মানবতার গল্প (মুভি রিভিউ)

১২ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বহু দিন আগে, বেশ ছোট বেলায় কোন এক বিখ্যাত ব্যাক্তির আত্মজীবনী পড়তে গিয়ে আমি প্রথম এই মুভির নামটা জানতে পারি। তিনি লিখেছিলেন যে তার তরুণ বয়সে তিনি এই মুভি হলে গিয়ে অসংখ্যবার দেখেছেন এবং এই মুভি তাঁকে বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত করেছে সারা জীবনের জন্য। এর পর অসংখ্য বার এই মুভির রেফারেন্স দেখেছি বই, পত্রিকা আর ব্লগে। অসংখ্য মানুষ আলোচনা করেছেন এই মুভি নিয়ে,প্রকাশ করেছেন তাঁদের অসামান্য ভালোলাগা। মুভিটার প্রতি আগ্রহ জন্মানোর বহুদিন পরে অতি সম্প্রতি মুভিটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আর এখন, আমি এক নগণ্য ব্লগার, কী-বোর্ডের সামনে বসে ভাবছি মুভিটা নিয়ে আমার একান্ত নিজস্ব মুগ্ধতাবোধ কি করে তুলে আনা যায় প্রিয় পাঠকের সামনে!


Ballad of a Soldier
একটি ট্রাজেডি মুভি। নির্মম বাস্তবতার মুভি। নিষ্ঠুর যুদ্ধের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে অপমৃত্যু হওয়া স্বপ্নের মুভি। এই মুভি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যুদ্ধ মানুষকে, মানব সভ্যতাকে কতটা দিয়েছে - আর কতটা কেড়ে নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে। আমাদের নতুন করে ঘৃণা করতে শেখায় যুদ্ধবাজ ক্ষমতাধরদের যাদের লোভ আর ক্রোধ দুনিয়াকে কখনো কখনো নরকে রুপান্তরিত করে।

মুভির গল্প আবর্তিত হয়েছে এক তরুণ রুশ সৈন্যের সাথে। নাম তাঁর আলিয়োশা, মাত্র ১৯ বছর বয়স। অথছ এরই মধ্যে সে রণাঙ্গনে পার করেছে বেশ কিছুটা সময়!! ঘটনা চক্রে একদিন দুটো জার্মান ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে সে - যতটা না সাহসিকতার জন্য তার চেয়ে বেশী আত্মরক্ষার তাগিদে। তার এই বীরত্বে খুশি হয়ে তার কমান্ডিং অফিসার তাকে পদক দিতে চায়। কিন্তু আলিয়োশা পদকের পরিবর্তে ছুটি চায় - মাকে দেখতে যাবে বলে। কমান্ডিং অফিসার তাকে ৬ দিনের বিরল যুদ্ধকালীন ছুটি মঞ্জুর করে আর আলিয়োশা রওনা দেয় বাড়ির পথে।

যুদ্ধকালীন রাশিয়া। সারা দেশ যেন একটা ধংসস্তুপ। আলিয়োশা তার যাত্রা পথে মুখোমুখি হয় অনেক অনেক অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতার। সে সাহায্য করে এক যুদ্ধাহত রুশ সৈনিক কে - নিজের জীবনের প্রতি যে কিনা একেবারেই বীতশ্রদ্ধ। অন্য এক সৈনিককে প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে তার দেয়া উপহার পৌঁছে দেবে তার ভালবাসার মানুষের কাছে। মুখোমুখি হয় নানান জাত আর পেশার মানুষের সাথে আর অর্জন করে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা।

কিন্তু মুভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে শুরা র সাথে তার পরিচয়। শুরা তার সমবয়সী, কিন্তু শহরের মেয়ে। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এখন যাচ্ছে তার খালার কাছে - আশ্রয়ের সন্ধানে। দীর্ঘ যাত্রা পথে শুরার সাথে আলিয়োশার পরিচয়, ভাললাগা এবং অব্যক্ত ভালবাসা এই মুভির সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে রেখেছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং পরিণাম এই দুজনের সম্পর্কের রসায়নে ফুটে উঠেছে চমৎকার ভাবে।

আলিয়োশা কে ছুটি দেয়া হয়েছিল ৬ দিনের। কিন্তু নানা বাধা - বিপত্তি পেরিয়ে মায়ের কাছে পৌঁছার জন্য এই সময় খুবই কম মনে হতে থাকে মুভির এক পর্যায়ে! আলিয়োশা তার মায়ের সাথে দেখা করতে পারবে কি না তা না হয় মুভিটি দেখেই জানুন। শুধু এটুকু বলতে পারি মুভির শ্রেষ্ঠ দৃশ্যটি আপনি দেখতে পাবেন এই প্রশ্নের উত্তর জানতে গিয়ে!!

মুভির কিছু বিষয় আলাদা করে না বললেই নয়। প্রথমেই আসে অসাধারণ কিছু দৃশ্যের কথা। আপনি মুগ্ধ হয়ে এই বিশেষ সিকোয়েন্স গুলোর ক্যামেরার কাজ (শট সিলেকশন, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, ব্যাকগ্রাউন্ড) দেখবেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। মুভির প্রথম আর শেষের দৃশ্য দুটি সহ আরো বেশ কিছ দৃশ্য তো আমার সারাজীবন মনে থাকবে। মনে থাকবে পুরোটা মুভি জুড়ে দেখানো আকাশ আর প্রকৃতির কথা - মুভির থিমের সাথে একেবারে খাপে খাপে মিলে গেছে যা! যুদ্ধবিদ্ধস্ত রাশিয়াকে এতটাই নিখুঁত ভাবে মুভিতে তুলে ধরে হয়েছে যে এক কথায় অসাধারণ!
মুভির কিছু অসাধারণ দৃশ্য দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ






মুভির মিউজিক চমৎকার। মূল ভূমিকায় অভিনয় করা Vladimir Ivashov (আলিয়োশা), Zhanna Prokhorenko (শুরা) দুজনেরই প্রথম মুভি এটা এবং তাঁদের দুজনেরই তখন বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর!! তাদের অভিনয় সহ পুরো মুভির সব কলাকুশলীর অভিনয় চোখে লেগে থাকার মত অসাধারণ এবং চমৎকার।

মুভিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৯ সালে। এটাই সম্ভবত প্রথম সোভিয়েত মুভি যেটা সোভিয়েত মুভি হিসেবে তৎকালীন মহা বৈরী পুজিবাদী ব্লকের দেশ গুলোয় মুক্তি পেয়েছিল মহাসমারোহে! সারা দুনিয়ার ফিল্ম ক্রিটিকরা প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন মুভিটাকে। পেয়েছিল ক্যানেস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্পেশাল জুরী ক্যাটাগরীতে পুরষ্কার, বাফটা এবং লেলিন স্টেট প্রাইজ সহ এক গাদা পুরষ্কার! ক্রেমলিনের গেস্ট রুমে এই মুভিটা সব সময় রাখা হত বিদেশী অতিথিদের দেখানোর জন্যে!!

এক কথায় মাস্ট সি মুভি। না দেখে থাকলে দেখে ফেলুন এখনি আর হয়ে যান সিনে ইতিহাসের এক অনন্যসাধারণ মুভি দেখে ফেলার বিরল মুগ্ধতার অংশীদার!!

আমার রেটিং : 9.5/10
ডাউনলোড লিঙ্কঃ ব্যালাড অফ অ্যা সোলজার
পার্ট ১
পার্ট ২
পার্ট ৩
পার্ট ৪
পার্ট ৫
পাসওয়ার্ডঃ 1giay.net

ডাউনলোড লিঙ্ক কার্টেসীঃ অসম্ভব প্রিয় ব্লগার নাফিজ মুনতাসির ভাই ।

পোস্ট আপডেটঃ যার লেখা পড়ে উৎসাহিত হয়ে আমার মুভি রিভিউ লেখার শুরু, সেই অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্লগার কাউসার রুশো ভাই এই মুভি নিয়ে অসাধারণ একটি রিভিউ লিখেছিলেন। প্রিয় পাঠকের জন্যে চমৎকার ঐ লেখাটার লিঙ্ক দিয়ে দিলাম নিচে -
আমার প্রিয় সিনেমা: ব্যালাড অফ এ সোলজার
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৪০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×