somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Machinist : অনুশোচনার আত্মপীড়ন (মুভি রিভিউ)

২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকাল আমরা একটা কাজ খুব ভালো ভাবে করতে শিখেছি। সেটা হচ্ছে অন্যের দোষ খুঁজে বের করা। নিজেদের দিকে আমাদের নজর খুবই কম যায়। পরীক্ষায় কম মার্কস পেলে শিক্ষককে দোষারোপ করি। পান থেকে চুন খসলে প্রিয় বন্ধুর মুন্ডুপাত করি। দৈনন্দিন জীবনধারায় কোন ছন্দপতন হলে কর্তৃপক্ষকে কষে গালমন্দ করি। যখন নিজের ভুলে, নিজের অলসতায়, নিজের ঔদাসিন্যে নিজের কাছে হেরে যাই - সেটা স্বীকার করতে আমাদের খুব বাঁধে। আমরা তখন ব্যাবহার করি সবচেয়ে সহজে ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দেবার অব্যর্থ ফর্মুলা - সব দায় দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া। তাতে নিজের কোন ক্ষতি বৃদ্ধি না হোক, সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার বেশ একটা সাময়িক আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।

কিন্তু একটা জিনিস আমরা ভুলে যাই বা সচেতন ভাবে ভুলে থাকার চেস্টা করি যে, এই সাময়িক সমাধান আখেরে কোন মঙ্গল বয়ে আনে না। একটা ভুল, একটা অন্যায় অথবা একটা পাপ কখনোই লুকিয়ে রাখা যায় না। ভুলের প্রতিফল আর পাপের শাস্তি অবধারিত। শাস্তি পাওনা হয় সমাজের কাছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে আর অতি অবশ্যই নিজের বিবেকের কাছে। পাপী ব্যাক্তি যখন অনুতপ্ত হয় সেটা কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত শাস্তিরই একটা রুপ মাত্র। বিবেকের কাছে যে শাস্তি অপরাধী ব্যাক্তি পায় সেটাই শাস্তির সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ। অনুতাপের অনল অপরাধীকে দগ্ধ করে খাঁটি মানুষটাকে বের করে নিয়ে আসে।

প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কতটুকু অনুতপ্ত হতে পারে তার কৃতকর্মের জন্যে?? কতটুকু দগ্ধ হতে পারে আপন পাপের অনলে? আর বুঝে, না বুঝে - সজ্ঞানে অথবা নিজের অজ্ঞাতসারে একটা অন্যায় যদি করেই ফেলে তাহলে তার কি প্রতিকার?? কি সমাধান??

উপরের প্রশ্নগুলোরে উত্তর জানতে চাইলে দেখতে পারেন

The Machinist
মুভিটি। অনুশোচনা আর তীব্র পাপবোধ একটা মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা এই মুভিতে এত অসাধারণ ভাবে ফুটয়ে তোলা হয়েছে যে মুগ্ধ দর্শক হিসেবে আপনি আপ্লুত হতে বাধ্য। এই মুভি দেখার পর কোন অন্যায় কাজ করার আগে আপনি দু'চার বার ভাববেন এবং আপনার ভিতরের মানবীয় সত্তা আপনাকে একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে যাবে।

আসুন দেখি কি আছে এই মুভিতে।
ট্রেভর রেজনিক (ক্রিশ্চিয়ান বেল) একজন মেশিন অপারেটর। মাঝারী একটা কারখানায় কাজ করে সে। তার এই মূহুর্তের প্রধাণ সমস্যা হচ্ছে বিগত এক বছর ধরে ঘুমাতে পারছে না সে!!! ঘুমের অভাবে দিনকে দিন শুকিয়ে কাঠি হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমনি ভয়াবহ যে নিজের শীর্ণতা নিয়ে চারপাশের মানুষ জনের নানান কিসিমের মন্তব্য তাকে প্রতিনিয়ত হজম করতে হচ্ছে। কেউ তাকে বলছে যে এভাবে যদি শুকাতে থাকে তাহলে নাকি সে স্রেফ বাতাসে উবে যাবে। কারু আবার মতামত যে তাকে হুবুহু জিন্দা লাশের মত দেখায়!! আসলে মতামতের কিছু নেই, অসম্ভব শুকিয়ে যাওয়া এই অস্থিচর্মসার ব্যক্তি যে কিভাবে টিকে আছে এখনো আর কারখানায় কাজ করছে নিয়মিত এটাই একটা বিশাল প্রশ্ন।

ভয়াবহ ইনসমনিয়াক এই লোকের আবার সম্প্রতি কাজ কর্মে খুব সমস্যা হচ্ছে। নানান আশ্চর্য ব্যাপার ঘটছে তার আশে পাশে। মাঝে মাঝেই ইভান নামের এক অপরিচিত ব্যাক্তির সাথে তার দেখা হয়। ঐ লোক তাকে রহস্যময় সব বয়ান দেয় আর তারো বেশী রহস্যময় সব ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে ইভান নিজেকে ঐ কারখানার একজন কর্মী দাবী করলেও একমাত্র রেজনিক ছাড়া আর কেউ ইভানকে চেনে না!! রেজনিকের সাথে ইভানের সাথে প্রথম মোলাকাতের পরই রেজনিক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জড়িয়ে যায়। তার অসচেতন ভুলে মেশিন চালু হয়ে হাত কাটা পড়ে তারই এক সহকর্মীর। এই ঘটনার পর পর রেজনিক হন্যে হয়ে খোঁজা শুরু করে ইভানকে ঐ দুর্ঘটনার একটা ব্যাখ্যা পাবার জন্যে। কিন্তু সে ব্যাখ্যা পাবার জন্য যতই ইভানের পিছু ধাওয়া করে ততই আরো জটীল সব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়!

কারখানার কাজ শেষে রেজনিক প্রতিদিন একটা নির্দিস্ট রেস্তরাঁয় খেতে যায়। কিছু খাক বা না খাক ঐ রেস্তরাঁর ওয়েট্রেস মারিয়াকে সে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টিপস দেয়। মারিয়া আর তার ছেলে নিকোলাসের জন্যে রেজনিকের আগ্রহভরা মমতা দেখা যায়। তাদের নিয়ে সে বেড়াতে যায় একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্কে যেখানে আবার ঘটে বেশ অনাকাঙ্খিত কিছু দুর্ঘটনা।

উপরের ঘটনাগুলোর পাশাপাশি নিজের ফ্ল্যাটেও বেশ কিছু অদ্ভুত ব্যাপারের মুখোমুখি হয় রেজনিক। তার রেফ্রিজারেটরের উপরে প্রতিদিন একটা করে চিরকুট পায় সে। সেখানে একটা অসমাপ্ত সিম্বল আর লেখা থাকে। প্রতিদিন একটু একটু করে পূর্ণতা পায় ঐ অসমাপ্ত লেখা আর সিম্বল। কি বুঝাতে চাচ্ছে এই চিরকুট? কে রেখে যায় ওটা??

ইভান কে?? কেন সে রেজনিককে ফেলে দিচ্ছে একের পর এক ধাঁধায়?? মারিয়া আর তার ছেলের প্রতি রেজনিকের এত আগ্রহ এবং মমতার কারণ কি?? নিজের চার পাশের এই আপাত রহস্যময় ঘটনা প্রবাহেরই বা কি ব্যাখ্যা??

উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন মুভিতে। :) :);)

অসাধারণ অভিনয় করেছেন ক্রিশ্চিয়ান বেল। শুধুমাত্র তার অভিনয় দেখার জন্য মুভিটা দেখতে পারেন। সেই সাথে বোনাস পাবেন শক্তিশালী সংলাপ।

শেষ করছি মুভির কিছু ফ্যাক্টস দিয়েঃ

১। মুভিতে অভিনয়ের জন্য ক্রিশ্চিয়ান বেল
৬২ পাউন্ড (২৮ কেজি) র উপরে ওজন কমিয়েছিলেন। (সাধে কি আর কঙ্কালের মত দেখায়!!) :|

২। পুরো মুভিতে রাশান লেখক দস্তয়ভস্কির প্রভাব স্পষ্ট। রেজনিক এই লেখকের লেখা বই 'দ্য ইডিয়ট' পড়ে। রেজনিক চরিত্রটা এই লেখকের লেখা বই 'ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট' এর সাথে মিলে যায়। মুভিতে বইটির নাম দেখানো হয়। এবং ইভান চরিত্রটির নামকরণ আরেকটি বিখ্যাত বই 'ব্রাদার্স কারামাজোভ' এর একই নামের চরিত্রের অবলম্বনে করা হয়েছে।

৩। মুভিতে রেজনিক বলে "Nobody has ever died from insomnia." । ঠিক এই সংলাপ 'ফাইট ক্লাব' মুভিতেও ব্যাবহার করা হয়!!

৪। মুভির পরিচালক ব্রাড অ্যান্ডারসন শূটিং চলাকালে পিঠে আঘাত পান। তাই তাকে প্রায় পুরো মুভি পরিচালনা করতে হয় শুয়ে শুয়ে!!

৫। ট্রেভর রেজনিক নামটা নেওয়া হয়েছে 'ট্রেন্ট রেজনর' নাম থেকে। যিনি কিনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রক ব্যান্ড Nine Inch Nails এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

ডাউনলোড লিঙ্কঃ মিডিয়াফায়ার

পার্ট ১
পার্ট ২
পার্ট ৩

Password: mediafiremovieaz

আমার রেটিংঃ 8.5/10
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×