রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নারীদের মাঝে কয়েকটা মেয়ের পোষাক দেখে মনে হল এরা হয়ত বেশ উচ্চবিত্ত পরিবারের কিংবা আধুনিক মনস্কা টাইপের, অর্থাৎ প্রাকটিসিং মুসলিম মনে হয়নি। যেটা বলতে চাচ্ছি, বার্মা সেনাবাহিনী বোধহয় কে প্রাকটিসিং মুসলিম আর কে মুক্তমনা তা বিচার করছেনা, অনেক হিন্দুরাও রেহাই পাচ্ছেনা। ইরাকের একটি দৈনিকের সম্পাদকের সাক্ষাতকার পড়ছিলাম, যিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, যে পত্রিকা অফিসে বসে আমেরিকার পক্ষে লিখতাম, আমেরিকার পক্ষে কথা বলতাম, আমেরিকা সেই অফিসটাকেও বোমা মেরে উড়িয়ে দিল। আসলে সাম্রাজ্যবাদী বা দখলদাররা ব্যক্তি পর্যায়ে ডান- বাম হিসেবটা খুব কমই করে।
সমকালীন সময়ে সম্ভবত রাষ্ট্রকেন্দ্রীক জাতিয়তাবোধের বিকাশ ঘটছে। রাষ্ট্রসত্তাগুলো স্বকীয়তার শীর্ষে যেতে মরিয়া হয়ে উঠছে। কেউ পরাশক্তি হতে, কেউ পরাশক্তির সহযোগী হতে প্রতিযোগীতা করছে। ভারত সম্প্রতি "বালি ঘোষণাপত্রে" সাক্ষর করেনি, কারন ওখানে মায়ানমারের "সহিংসতা"র কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের এ ভূমিকা দু'টি অর্থ বহন করে, রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা বা মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছেনা, অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও তা মানবউন্নয়নের জন্য কোন বাধা নয়। ভারতের এ অবস্থান নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে, অন্যকথায় রাষ্ট্রকেন্দ্রীক জাতিয়তাবোধের স্বার্থে।
এই জায়গাটায় আমরা সম্ভবত খুব দূর্বল, সবসময়ই অনৈক্যের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ। অথচ আমাদের বড় অংশেরই রয়েছে নৃতাত্তিক ও ভাষাগত মিলবন্ধন, বাকিরাও রয়েছে মূলধারার সুযোগ সুবিধার বলয়ে। দু'একটা রাজনৈতিক ইন্ধনে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া আমরা ধর্মীয় ক্ষেত্রেও অসাম্প্রদায়িক। শুধু সাধারন মতাদর্শিক মতপার্থক্যের মানদন্ডে ভিন্নভিন্ন চিন্তা করি, বিভিন্ন মেরুতে বিভক্ত হয়ে যাই। রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় পরিচয়ে সাহায্য করব নাকি মানবিক দিক থেকে সাহায্য করব সেটা নিয়ে বিভক্ত। তুরস্ক সুলতান হতে এগিয়ে আসল নাকি শুধু মায়াকান্না দেখাতে আসল সেটা নিয়ে টেনশন। এগুলোতে তখনও আমরা বিভক্ত যখন মিয়ানমার বারবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করছিল, সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পেতে নীতিমালা লঙ্ঘন করেছিল। আমাদেরতো অন্তত একটা জায়গায় একমত হওয়া উচিত যে এটা আমাদের রাষ্ট্রসত্তার সাথে জড়িত। মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে আমাদের পলিসি ম্যাকারদের সজাগ করার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা কি খুব বেশি? সাম্রাজ্যবাদীদের রনাঙ্গন হওয়ার আগেই আমাদের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক সমাধানের দাবি তোলাটাই জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪০