somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ বেনুবালা

০৫ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি-গুগুল


শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম । পড়ন্ত বিকেলের লাল সূর্যের মত জীবনের শেষ সূর্য হেলে পড়েছিল আমার। আর কোনদিন নতুন করে সূর্য উঠবে কিনা জানতাম না। চারপাশ আমার আঁধার ঘিরে ফেলেছিল। গিলে ফেলেছিল আঁধার আমার সবকিছুই।


বারান্দায় দাড়িয়ে আছি। শীতল হাওয়ায় মনটা একদম শীতল হয়ে যাচ্ছে। বাহিরে বাতাসের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি নামবে বুঝি এখনি। এই শীতল হাওয়ায় মন যেন কোথায় হারিয়ে যায় আমার। এক দুঃস্বপ্নের অতল তলে চলে যায় এই মন।

মনে পড়ে ঠিক এমনি এক রাত ছিল সেদিন। বাহিরে প্রচন্ড ঝড় বইতেছিল। বউ সেজে বসে ছিলাম এক পিশাচের ঘরে। বাসর রাত কি জিনিস কিছুই বুঝতাম না। কতই আর বয়স চৌদ্দ কি পনের। আর সেই লোকটার বয়স ছিল আমার দ্বিগুন । ভয়ে আমি জড়সড় হয়ে বসে ছিলাম। লোকটা মাতাল হয়ে ঢুকেছিল ঘরে। ভয়ার্ত চোখে আমি দেখছিলাম তাকে। মনে হচ্ছিল আমাকে এখনি গিলে খাবে সে। কি ভয়ানক ছিল সেই মানুষটি , কচি একটা মেয়ের সাথে সে ভয়ানক খেলায় মেতেছিল। মেতেছিল আমার শরীর নিয়ে, উফ! ভাবতে পারিনা। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে মন এখনোও। সিগারেটের আগুনে শরীর ঝলসে দিয়েছিল, আর ঝলসিয়ে সে ভীষণ মজা পেয়েছিিল! কুকুরের মত কামড়ে দিয়েছিল আমার দেহ। বুকের একপাশে এখনো সেই রাক্ষসের আঁচড় রয়ে গেছে। মুছে যায়নি সেই দাগ। যা আমাকে মাঝে মাঝে ভীষণ কষ্ট দেয়।

সেই রাতের পরই আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। কতদূর দৌড়ে গিয়েছিলাম মনে পড়ে না। তবে প্রাণপণ ছুটে গিয়েছিলাম তা মনে পড়ে। সকালে আমার হুশ ফিরে আসলে আমি দেখেছিলাম বেডের উপর শুয়ে আছি। পুরো শরীর ব্যথা, আর নড়তে পারছিলাম না। আমাকে দেখে তাদের অনেক করুনা হয়েছিল যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল। সব কথা শোনার পর তারা অনেক কেঁদেছিল। আমার বাবা-মার ঠিকানা চেয়েছিল। আমি দেইনি ইচ্ছে করেই। ফিরে যেতে চাইনি তাদের কাছে। যারা আমার জীবনকে নরক করে দিয়েছিল। একটা বার ভাবেনি তারা ছোট্ট একটা মেয়ের জীবন বিসর্জন দিতে। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।

যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তারা নিঃসন্তান ছিল না। তাদের সন্তান তাদের ছেড়ে পরদেশে চলে গিয়েছিল। আর ফিরে আসেনি। তাদের দুঃখ দেখে আমি পারিনি নিজেকে শেষ করে দিতে। ২ বছর লেগেছিল স্বাভাবিক হতে। নতুন করে আমি পড়াশুনা শুরু করেছিলাম। তাদেরকেই মা-বাবা বলে জানি আমি। ভাবি কত ভাগ্যবতী আমি এমন মা-বাবা পেয়েছি।

পড়াশুনা শেষ করে আমি এখন প্রতিষ্ঠিত। নিজের নাম গোপন রেখে আমি টাকা পাঠাই আমার আসল বাবা-মা কে। বাবা অন্ধ হয়ে গেছেন। ভাই বোন-রা তেমন খোঁজ নেন না। কিন্তু আমি পারিনা তাদের খোঁজ খবর না নিয়ে থাকতে। হাজার হোক বাবা মাত। তবে আমি তাদের সামনে যেতে পারিনা। হয়ত ভেবেছেন তারা আমি মরেই গিয়েছি। আমি মৃতই থাকতে চাই তাদের কাছে। তোমাদের বেনু মরে গেছে। ভাবতে ভাবতে চোখ দুটি বয়ে চলে অশ্রু ধারা। জীবনে কত কিছু ঘটে যায়, যা আমরা প্রত্যাশা করিনা তাই ঘটে।

আমার ভাবনায় অবসান হয় আবিরের স্পর্শে। পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে আমায়।

-এই কি করছ বেনু?
-কিছুনা , ঝড় দেখি বাতাসের। আর শীতল হাওয়ায় প্রান জুরাই।
- হুম! আর আমায় কে জুরাবে শুনি?
- হাহাহা, কেন তোমার কি হল শুনি?
-বোঝ না? দাঁড়াও বোঝাচ্ছি মজা।
-এইই কি কর আবির? নামাও আমাকে , পড়ে যাবতো।
- না পড়বে না। কোল থেকে পড়ে গেলেত আমারি কষ্ট হবে বেবি! বেডরুম আমাদের ডাকছে। হাহাহা।
-পাজি, দুষ্ট! ছাড়ো।
-না ছাড়ব না। তুমি আমার বেনুবালা। আমার বেনু, আমার শুধুই আমার।

এরকম ঝড়ের রাত একসময় আমার ভালো লাগত না । কারন অসহ্য যন্ত্রনা হত আমার। পুরানো স্মৃতি মনে ভেসে উঠত। কিন্তু আবির আমাকে এত ভালোবাসে যে সেই সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে আমি আমার অতীত ভুলে যাই, ভুলে যাই সেই ভয়ানক রাত। ভুলে যাই সব ফেলে আসা যন্ত্রনাকে।

আবিরের ভালোবাসা পেয়ে আজ আমি ভীষণ সুখী। এত ভাল মনের মানুষ হয় পৃথিবীতে, আবির আমার জীবনে না আসলে জানতামই না। একসাথে কলেজে পরিচয়, তারপর পথ চলা একসাথে। সব জেনেও ও আমাকে ভালবেসেছে। প্রথম প্রথম মনে হত ও আমাকে করুনা করছে কিন্তু না পরে দেখলাম আমি ভুল। মানুষও এমন ভালো হয়?

আমি দেখলাম মানুষ দুই প্রকার,
এক-ফেরেশতা রুপি মানুষ, দুই-জানোয়াররুপি মানুষ।

শুধু বার বার মনে হয় চিৎকার দিয়ে বলি " হে বিধাতা! তুমি কত দয়াময়, জীবনটা কত সুন্দর !"


ভালবাসা মানুষের জীবনটাকে অনেক সুন্দর করে তুলতে পারে। সবার জীবন ভালোবাসাময় হোক। ভালোবাসার জয় হোক।








সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×