somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ সমস্ত ভালোবাসা শুধুই তোমার জন্য

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি-গুগুল

গত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমরা দুজন দুজন কে প্রথম দেখেছিলাম। সামনে থেকে দুজন দুজনকে দেখছিলাম শুধু। খুব ইচ্ছে করছিল ওকে ছুয়ে দেই, কিন্তু পারিনি। কিভাবে পারব আমিতো ওকে স্কাইপিতে দেখছিলাম।

ওর অপলক চেয়ে থাকা দেখে বেশ লজ্জা লাগছিল আমার । লজ্জায় কিছুক্ষণ দৃষ্টি নত করে রেখেছিলাম। চোখ তুলে আমিও দেখে নিয়েছিলাম তাকে। যাকে এত ভালোবাসি অথচ তাকে একটাবার দেখব না তা কি হয়? অনেকদিন মেহেদি বলেছিল আমাকে দেখতে চায়। লজ্জা আর ভয়ে আমি কখনো রাজি হইনি। তবে ও জোর করেনি। ও আমার মতামতের গুরুত্ব দিয়েছে সবসময়। আমি চাচ্ছিনা ব্যাস আর জোর করেনি।

ভালোবাসা দিবসে ওকে ছোট্ট একটা উপহার দিতে ইচ্ছে করেছিল। কিন্তু কিভাবে দিব তাই ভাবছিলাম। হঠাৎ বুদ্ধি এল যে ওর সাথে ভিডিও চ্যাট করব। ও খুব খুশি হয়েছিল। যা আমি ভুলব না কখনো।

মনটা ভালো নেই কারন মেহেদির সাথে কথা হয়নি। কোন খবরই পাচ্ছিনা। অনেকগুলা ম্যাসেজ দিয়েছি কোন উত্তর আসেনি। ওর কোন বিপদ হলনাতো? অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠছে বার বার। অফিস শেষে যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা ফোন আসল। কথা বললাম কিছুক্ষণ। আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম ফোনের মানুষটার সাথে কথা বলে। কারন ফোনের অপর পাশে যিনি কথা বলেছেন তিনি মেহেদির বড় আপা। মেহেদি কখন আমার কথা ওর বোনকে বলেছে কিছুইত বলেনি আমাকে। তিনি আমার সাথে দেখা করতে চান কালই। মেহেদির সাথে কথা ছিল ও আগে দেশে আসবে দেন পরিবারের সাথে কথা বলবে। কি জানি কি করছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।

পরদিন সময় নিয়েই বের হলাম। বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুরু দুরু করে কাঁপছিল। একটা রেস্টুরেন্ট এ মেহেদির আপা দেখা করতে বলেছে। ঠিক সময়েই পৌছে গেলাম। আমি ফোন দিলাম কোথায় আছে আপা জানার জন্য। আপা আমাকে আগেই চিনেছিল। হাত দিয়ে ইশারা করে বলল এদিকে এসো। কাছে গিয়ে সালাম দিলাম। উনি সালামের উত্তর দিয়েই বলল
- বাহ! তুমিতো দেখছি ঠিক সময়েই এসেছ মোহনা?

- মুচকি হাসি দিয়ে বললাম কেমন আছেন আপা?

- ভালো, তুমি কেমন আছ?

- জ্বি ভালো আছি।

- কি খাবে বল?

- কিছু খাবো না আপা।

- না তা কি হয় কিছু একটাতো খেতেই হবে।

- আচ্ছা শুধু এক কাপ কফি হলেই চলবে।

- আচ্ছা।

আমি খেয়াল করলাম আমি ঘামছি । আপা কফির অর্ডার দিল। কফি আসার পর খেতে খেতে মেহেদির আপা কথা বলছিল। এটা সেটা অনেক কিছু। এর মধ্য সে কিভাবে আমার কথা জানলো কিভাবে চিনল তাই বলছিল।

- তোমার কথা মেহেদি আমাকে কিছুদিন আগেই বলেছিল। যে কারনে তোমাকে কিছু বলার ছিল। তাই এখানে ডেকেছি

- জ্বি, বলুন কি বলবেন?

- তুমি কিভাবে নিবে আমি জানিনা। তবে তোমাকে জানানো উচিত । মেহেদি আমাকে খুব অনুরোধ করছে তাই এসেছি। তুমি মে বি জানোনা মেহেদি অস্ট্রেলিয়াতেই বিয়ে করেছে কয়েকদিন আগে। ও তোমাকে বলেছিল বিয়ে করবে কিন্তু ও কথা রাখতে পারেনি। কিছু মনে করোনা।

মনে হল আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে, নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম

- আপা আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।

- না মোহনা ভুল হচ্ছেনা, এটাই সত্যি।

- আমি তা বিশ্বাস করিনা। কারন মেহেদি আমাকেই ভালোবাসে।

- সরি মোহনা, ও তোমাকে জানাতে পারেনি কিছুই।

আমার কন্ঠরোধ হয়ে আসল। নিরবে আমি কাঁদতে থাকলাম। এ কিছুতেই হতে পারেনা। আমি বিশ্বাস করিনা। বুকের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে আমার। কিছুটা সময় নিয়ে বললাম আপাকে
- আমি যাচ্ছি আপা।

কয়েক কদম সামনে এগিয়ে গেলাম আমি ঠিক পেছন থেকেই কে যেন আমকে ডাকল মোহনা বলে, আমি স্থির হয়ে দাঁড়ালাম

- গুল্টুকে না দেখেই চলে যাবে?

পেছন ফিরে তাকাতে ভয় হচ্ছিল আমার , কেবলি মনে হচ্ছিল এটা আমার মনের ভুল। কিন্তু আবারো আমি শুনতে পেলাম

- তোমার গুল্টু তোমার কাছেইত ফিরে এসেছে।

আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি কি মেহেদিকেই দেখছি?

আনন্দে বুকের ভেতরটা আন্দোলিত হতে লাগল, আনন্দের অশ্রু ঝরতে লাগল।
ধীরপায়ে ওর কাছে গেলাম আর বললাম

- এত্তগুলা ঘুষি খাবা। সবার সামনেই ওকে আমি জড়িয়ে ধরলাম।

- পাগলি মেয়ে একটা। এবার ছাড় সবাই দেখছেত।

লজ্জায় আমি ওকে ছেড়ে দিলাম। ওর আপা কাছে বসিয়ে বলল

- মেয়ে এত ভালোবাসো আমার ভাইটাকে? সরি আমি তোমাকে দুঃখ দেয়ার জন্য। আমার কোন দোষ নেই সব দোষ তোমার গুল্টুর, হিহিহিহি। সব প্ল্যান ওর ছিল। আজই বাসায় গিয়ে মা বাবাকে বলবে আমরা আসছি খুব শিগগির তোমাকে বউ করে নিয়ে আসব আমাদের বাড়িতে।

- আমি আপার কথা শুনে শুধুই চুপ করে ছিলাম ।

আপা আমাদের রেখেই চলে গেল। গুল্টু আর আমি বেড়াতে চলে গেলাম শহর ছেড়ে দূরে।ও আমার হাতটি ধরে চোখে চোখ রেখে বলল

- ভালোবাসি
- আমিও ভালোবাসি তোমাকে অনেক।

হঠাৎ করেই কপালে ওর ঠোঁটের ছোয়া পেলাম। লজ্জায় আমি শেষ হয়ে গেলাম। ও বলছিল
- তুমি আমার সোনা বউটা। আর কখনোই কাঁদাবো না প্রমিজ।

- আমার সমস্ত ভালোবাসা শুধুই তোমার জন্য।

ওর বুকের মাঝেই মিশে রইলাম অনেকক্ষণ ।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×