মমিনুল ইসলাম:
পৃথিবীর বুকে আমরা বাঙালিরা অবাক করা এক জাতি।সহজেই আমরা যে কোন কিছু গ্রহণ করি। কোন কিছু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা কখনো তা তলিয়ে দেখি না।আমরা কখনো বিবেক দিয়ে বিচার করে দেখি না, যেটা আমরা গ্রহণ করছি তা কি আমাদের জন্য উপযুক্ত বা গ্রহণযোগ্য কি-না, এটা আমাদের মূল্যবোধ ও সত্যিকারের ঐতিহ্যের সাথে খাপ খাই কি-না।
কথাগুলো আজ এমন এক সময় বলতে হচ্ছে যখন বাংলাদেশ শুধু রাজনৈতিকভাবেই বিপর্যস্ত না, সাংস্কৃতিকভাবেও চরম দেওলিয়াপনা। অপসংস্কৃতি আজ কুরে করে খাচ্ছে বাংলার তরুণ সমাজকে। গোটা বাঙালি জাতি আজ অপসংস্কৃতি আর ধার করা সংস্কৃতির ধোকায় পড়ে ধুকে ধুকে মরছি অথচ আমাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছেনা।সত্যিকারের বাঙালি সংস্কৃতি ও ধার করা অপসংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে কার্যত আমরা ব্যর্থ। যার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের নিজেদেরই। এভাবে চলতে থাকলে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাই আমাদের ভবিষ্য প্রজন্ম কোন অজানা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে আসা এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ আমাদের নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে এটা আজ নতুন নয়। এর আগেও পহেলা বৈশাখে শ্লীলতাহানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।তবে এবারের অভিযোগ আগের যে কোন ঘটনার তুলনায় খুবই ভয়ঙ্কর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে আমরা কতটা অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছি।
অভিযোগে বলা হয়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাবিতে আগত ভ্রমণার্থীদের মধ্য থেকে প্রথমে একজন নারীকে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী বিবস্ত্র করার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়। এসময় নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে।তাদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দুষ্কৃতিকারীরা আরও হিংস্র হয়ে এরূপ আরো কিছু ঘটনা ঘটায়।
ঘটনাচলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী আক্রান্তদের সাহায্যে এগিয়ে যায়। দুষ্কৃতিকারীদের বাধা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি লিটন নন্দীসহ বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন।
এর আগেও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে আসা এক তরুণীর উপর ঢাবির কতিপয় বখাটে ছাত্রের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছিল। তখন বিষয়টা মিডিয়াতে হট টপিক থাকলেও তা কার্যত আমাদের কোন শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মানবতাবাদি, নারীবাদি ও প্রগতিশীল সমাজের লোকেরা অনেক কথা বলেছিলো। আমাদের প্রশ্ন হলো তারা কি কোন এর সমাধান দিতে পেরেছে। প্রশাসনও কি পেরেছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে আসা ঐ সমস্ত নারীদের নিরাপত্তা দিতে? তাহলে এর সমাধান কোথায়?
আজ যখন বাংলাদেশের আলেম সমাজ সংস্কৃতির নামে এইসব অপসংস্কৃতির বিরদ্ধে কথা বলছে, নারীদের নিরাপত্তার জন্য অবাধ মেলামেশার বিরুদ্ধে কথা বলছে তখন আমরা তাদের মৌলবাদি, নারী বিদ্বেষী ও জঙ্গিবাদি বলে কণ্ঠস্বর রোধ করছি।তাই আমাদের সাধারণ মানুষের আজ ভেবে দেখার সময়, যারা আজ গণতান্তিক, মানবিক, আধুনিক ইত্যাদি অধিকারের নামে আমাদের উপর অপসংস্কৃতিকে চাপিয়ে দিয়েছে তাদের উদ্যেশ্য সৎ নয়।তারাও হয়ত বিদেশী কোন প্রভুর এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
ওই সমস্ত ঘটনার জন্য আজ আমরা অবাধ মেলামেশা ও বাঙালি সাজের নামে নগ্নভাবে নিজেকে উপস্থাপন করাকেই একমাত্র দায়ি করতে পারি।এই সমস্ত ঘটনার পেছনে দুস্কৃতকারিরা যেমন দায়ি তেমনি যারা ভুক্তভোগী হচ্ছি তারাও সমানভাবে দায়ি। কেন আমরা নারী পুরুষের জৈবিক পার্থক্য ভুলে একই সাথে উম্মাদনায় মেতে উঠছি। এই সংস্কৃতি যে বাঙালির তাই বা কে বললো। তাই যদি হতো তাহলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা একই দিনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে না কেন? জানি কেউ এর সদোত্তর দিতে পারবে না।
তাই আজ বোনেদের প্রতি অনুরোধ; যাদের কথায় আপনারা অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে নিমজ্জিত হয়ে নিজেদের সম্মান-সম্ভ্রম হারাতে বসেছেন তারা আপনাদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং তারা কখনো নিরাপত্তা দিতে পারবে না। বরং তাদের দ্বারা নারীদের লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা অহরহ। তাই নিজরো নিজেদের রক্ষা করার জন্য ইসলামী অনুশাসন মেনে চলুন, যা আপনার উপকার ছাড়া ক্ষতি করবে না। ইহকালীন সফলতার পাশাপাশি পরজগতেও পেতে পারেন চূড়ান্ত সফলতা।
অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। ছেলে মেয়েদের ইচ্ছা স্বাধীন অপসংস্কৃতির স্রোতে ছেড়ে দেয়া যাবে না।তাদেরকে অন্তত ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও ইসলামী শিক্ষা দিন। তাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়তে ইসলামি আদর্শে গোড়ে তুলুন। তাহলেই হয়তো আমরা পেতে পারি সুন্দর বাংলাদেশ।