somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কার দরদ কত বেশি..?

০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

View this link View this link View this link

একটু আগেই কালের কন্ঠের মুক্তধারায় ৩ এপ্রিল ২০১১ তারিখে প্রকাশিত "মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি" শিরোনামের লেখাটি পড়লাম। আবেগ ভরা একটি লেখা। বাংলাদেশী নাগরিক ড: ইউনুসের নোবেল জয় লেখককেই শুধু নয়, আরো অনেককেই আনন্দে ভাসিয়ে ছিল। ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতি করে আসা আমার কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু্ও আনন্দ আর গর্ব নিয়ে সেদিন ফেস বুকের স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। থিওরিটিক্যালী যারা সবসময়ই ক্ষুদ্র ঋনের সমালোচনা করে আসছেন তারা্ও বাদ পড়লেন না। নোবেল প্রাইজ বলে কথা, তাছাড়া জাতীয়তা বোধ ব্যাপারটি আমাদের অনেক গভীরে প্রোথিত হয়ে আছে। বিশ্বকাপ জয়ের পর হরভজন সিংয়ের কান্না ভেজা চোখে, "আই লাভ ইউ ইন্ডিয়া " বলার মধ্যে যে আনন্দ ছিল। জাতি হিসেবে আমরা আমাদের দেশকে এমন গলা ফাটিয়ে আই লাভ ইউ বাংলাদেশ বলার উপলক্ষ এনে দিতে পেরেছি খুবই কম। স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ এমন এক উপলক্ষ দিয়েছে আমাদের। এখনো কোথা্ও জাতীয় সঙ্গিত বাজলে নিজের অজান্তে অনেকেরই ঠোঁট মিলে যায়, আমি জানি। আমারও এমন হয়।

২০০৬ সালের শেষদিকের কথা, আমি তখন পত্রিকা ছেড়ে কিছুদিন হলো একুশে টেলিভিশনে জয়েন করেছি। বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রনে টেকনাফে নিউজ ট্যুর করার সুযোগ হয়েছিল আমার। যার খরচ টেলিভিশন বহন করবেনা। নিউজ রুম আমাকে সাপোর্ট করায় আমি সফরটি করেছিলাম। নিসর্গ নামের সরকার অনুমোদিত একটি প্রকল্প টেকনাফের পাহাড়ে ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট এবং বনের সম্পদে কমিউনিটির অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় কাজ করছিল। আমি তাদের একটি পাহাড়ে, ভারী মিলার ট্রাইপড নিয়ে ওঠতে গিয়ে ক্লান্ত । তখন গ্রামের এক লোক এগিয়ে আসে আমাকে সাহায্য করার জন্য। পরে ওই লোকটি গর্বভরে আমাকে একটি ছবি দেখায়। ড: মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে তার হাসি মুখের ছবি। তখন্ও নোবেল প্রাইজ পাননি ড: ইউনুস। লোকটি, ইউনুস ভাই তাকে কত ভালোবাসেন সেই গল্প আমাকে শুনিয়েছিলেন। তার গর্ব ভরা সেই মুখ আমার মনে আছে। অচেনা ও্ই লোকটি যখন তার ভাই, ইউনুসের নোবেল জয়ের খবর জানলেন তখন তার মুখের রঙ কেমন হয়েছিল আমার জানা নেই।
নোবেল জয় করলেন বাংলাদেশী এক নাগরিক। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন তখন খারাপ হচ্ছে। তত্বাবধায়ক সরকার এলো। দুই নেত্রীকে জেলের ভাত খা্ওয়ানো হলো। আরো কত কি হলো। একটি জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম এলো নোবেল জয়ী মানুষটার রাজনৈতিক একটিভিটি নিয়ে " হাতে খড়ির আগেই পাঠ শেষ"
তখনো আমি তার বিষয়ে এতটা আগ্রহী ছিলামনা, এখন যতটা। নরওয়ের এক সাংবাদিক টম হেইনমান বাংলাদেশে এলেন। তিনি ডকুমেন্টারী্ও বানালেন ড: ইউনুসকে নিয়ে। সেটি প্রচারিত হলো তাদের জাতীয় টেলিভিশনে। "দি মাইক্রো ক্রেডিট ডেবট" নামের ওই ডকুমেন্টারীতে আন্তর্জাতিক গবেষক, অর্থনীতিবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ দের সাথে কথা বলে ওই সাংবাদিক প্রমান করলেন মাইক্রো ক্রেডিট কখনোই দারিদ্র দুর করতে পারেনা, দেখালেন, থিওরিটিক্যালী্ও ড: মুহামম্দ ইউনুসের মাইক্রো ক্রেডিট দারিদ্র নিরসনে ভুমিকা রাখতে পারেনা বরং অনেক ক্ষেত্রেই ঋনের জালে আটকে যায় দরিদ্র ঋণ গ্রহিতা। প্রচলিত হিসাব অনুযায়ী গ্রামীন ব্যাংকের ঋণ নিয়ে দেশের প্রায় দুই লাখ দরিদ্র নারী এখন সুইসাইডের অপেক্ষায়। টম হেইনমান দেখালেন, ১৯৯৬ সালে দরিদ্র মানুষের জন্য নরওয়ে থেকে আসা প্রায় একশ কোটি ডলার গ্রামীন ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে গ্রামীন কল্যাণ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। ১৯৯৭ সালে তা আবার ফাঁস হয়ে পড়ে। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য তখন দেনদরবারও হয়েছে। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর শ্রীলংকা গার্ডিয়ান পত্রিকায় সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর করা এক রিপোর্টে নরওয়েজিয়ান সেই সাংবাদিকের একটি সাক্ষাতকার বের হয়। ড: ইউনুসকে নিয়ে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে ব্লাড সাকার বলে আমার আগ্রহ আরো উসকে দেন। আমি ড: ইউনুসকে নিয়ে ঘটতে থাকা ঘটনাবলী উপভোগ করতে থাকি। একদিন নরওয়েজিয়ান পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী্ও ঘোষনা দিয়ে বিষয়টি অস্বীকার করলেন। তখন ফেস বুকে কার একটি স্ট্যাটাস আমাকে চমকে দিল...স্ট্যাটাসটি ছিল অনেকটা এইরকম " সাংবাদিকরা কে কি বলে, এখন এটাই হবে সবচেয়ে মজার খেলা"।
সকলেরই জানা "গ্রামীন" বাংলাদেশের বড় বাজার। মিডিয়ারতো বটেই। ফলে মজার খেলা হতেই পারে।
সর্বশেষ এটিএন নিউজে মাহমুদুর রহমান মান্নার মাথা ঠান্ডা করা এঙ্করিংয়ের "সময়ের ভাবনা" অনুষ্ঠানটি দেখি। যাতে দেশের এক সাংবাদিক যার রাজনৈতিক পরিচয় ঢাকার অন্তর্গত কোন চেষ্টা নেই, তিনি নারী জাগরনে গ্রামীন ব্যাংকের অবদান স্বীকার করে বলেন, "তারপরও ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আনা একটি স্বাধীন দেশকে ড: ইউনুস যেভাবে তার ব্যাক্তিগত পেশী শক্তির প্রদর্শন দেখালেন তাতে দেশের অধিকাংশ মানুষের আর তার প্রতি সহানুভুতি থাকার কথা নয়।"
বিকল্প নতুন প্রকল্প আসছে....আমাদেরও চোখে ধুলা জমবে...আমরা প্রকৃত ঘটনার আড়াল হয়ে থাকবো আবার। ( এডিট হবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১২:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×