somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সম্পাদকের ১৩ দিনের রিমান্ডঃ সহযোগী মিডিয়া কভারেজ দিল যেভাবে

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইত্তেফাক পরদিন শুক্রবার গুরুত্ব দিয়েছে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের বিষয়টি। এ সংক্রান্ত সংবাদটি তারা তিন কলামে দিয়েছে। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের খবরটি এর নিচে আরো ছোট করে মাহমুদুর রহমানের পাসপোর্ট সাইজ ছবিসহ দুই কলামে দিয়েছে। পাশে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতি এক কলামে দিয়েছে।
সমকাল চার কলামে প্রধান শিরোণাম করেছে মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার। পুলিশ তকে আদালতে হাজির করছেন এমন একটি ছবি বড় করে সাথে দিয়েছে। ছোট করে লিখেছে ১৩ দিনের রিমান্ড। এ পত্রিকারটির সম্পাদক গোলাম সরওয়ার মাহমুদুর রহমানের সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিছু সমালোচনাও তিনি করেছিলেন। তার সাথে সুর মিলিয়েছেন সাংবাদিক নেতা ইকবাল কবির সোবহান, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও আওয়ামী এবং বাম ঘরানার সাংবাদিকরা। পরে একাধাকি সাংবাদিক সম্মেলন করে মাহমুদুর রহমান তার কঠোর জবাব দিয়েছিলেন। গোলাম সরওয়ার এর সাথে তারেক জিয়ার সম্পর্ক এবং সমকাল পত্রিকা কিভাবে ডিকলারেশন পায় সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি। একই সাথে ইকবাল কবিরের ব্যাপারে বলেছিলেন, তিনি গোলাম আযমের নাগরিকত্বের পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন আর এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা সেজেছেন। এরপর মাহমুদুর রহমানের অনুসারি কবি আবদুল হাই শিকদার একটি নিবন্ধ লিখে কবিরের এমন সমালোচনা করেছেন তা লিখে তুলে ধরা লজ্জাস্কর।
কালের কণ্ঠ চার কলামে প্রধান শিরোণাম করেছে,‘ মাহমুদুর রহমান অবশেষে গ্রেফতার।’ পত্রিকাটি হেফাজতের কর্মসূচী থেকে সরে দাড়াচ্ছেন অনেক আলেম ওলামা এ ধরনের একটি খবর ছাপে ৬ এপ্রিল লংমার্চের দুদিন আগে। আমার দেশ পরদিন, ‘কালের কণ্ঠের হলুদ সাংবাদিকতা’ শিরোণামে একটি খবর ছাপে। কালের কণ্ঠ যাদের ব্যাপারে বলেছে তারা লংমার্চ থেকে সরে দাড়াচ্ছেন তাদের বক্তব্য তুলে ধরে আমার দেশ। সেখানে ওই ব্যক্তিরা কালের কণ্ঠের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের অভিযোগ আনে।
ইনকিলাব মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেয়ার চেয়ে এ নিয়ে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া ও বিরোধী আন্দোলনকে বড় করে দেখিয়েছে। পত্রিকাটি ছয় কলামে প্রধান শিরোনাম করেছে, বিরোধী শিবিরে ঐক্য। এর নিচে বডি হরফের চেয়ে বড় করে লেখা রয়েছে, দেশ অচল করার আল্টিমেটাম : বিএনপি, ইসলামী ধারার দল, হেফাজত, পেশাজীবীদের অভিন্ন দাবি। এর নিচে আড়াই কলামে শিরোনাম করা হয়েছে, মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার।
নিউএইজ প্রথম পাতায় দুই কলামে খবরটি দিয়েছে। মানবজমিন খবর প্রকাশের পাশাপাশি সম্ভবত একজন এডিটর গ্রেফতার হয়েছেন ভাব দেখিয়ে আবেগ দেখাতে চেয়েছে। প্রথম পাতার ওপরে এক কলাম ছাড়া বাকি পুরোটা যায়গাজুড়ে একটি বুলেট শিরোণাম, ‘রিমান্ড।’ ১০ পয়েন্টের মোটা একটি রেখা দিয়ে পুরো স্টোরিটাকে বক্স করেছে। এর মধ্যে আরো তিনটি খবর ছাড়াও মাহমুদুর রহমানের ছবিটি বড় করে ছেপেছে। একটি স্টোরিতে এই সম্পাদকের ব্যক্তিগত জীবন আবেগঘন করে উপস্থাপন করা হয়েছে। অবরুদ্ধ ১২০ দিন- শিরোণামের প্রতিবেদনে পত্রিকা অফিসে কিভাবে কাটিয়েছেন তা তুলে ধরা হয়েছে। যেভাবে গ্রেফতার- এ শিরোণাম পুলিশি নিষ্ঠুর আচরণ উঠে এসছে।
নয়া দিগন্ত চার কলামে ছবিসহ খবরটি প্রধান শিরোণাম করেছে। আমার দেশের প্রেস সিলগালা-আলাদা শিরোণামে পাশেই দিয়েছে। প্রথম আলো করেছে সেকেন্ড লিড। তিন কলাম খবরটির শিরোণাম করা হয়েছে, মাহমুদুর রহমান ১৩ দিন রিমান্ডে। পত্রিকাটি নির্মোহভাবে গ্রেফতারের পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনটি অত্যন্ত সাবধানতার সাথে করা হয়েছে বলে মনে হবে। মাহমুদুর রহমান নিজেই এ পত্রিকার বিরুদ্ধে কলাম লিখেছেন। তাই প্রথম আলোকে অত্যন্ত সাবধান দেখা যাচ্ছে মাহমুদুর রহমান ইস্যুতে। যুগান্তর মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার খবরটি প্রথম পাতার নিচের দিকে এক কলামে দিয়েছে। ডেইলি স্টার দিয়েছে দুই কলামে।
রাতে টেলিভিশনের খবরে জানা গেছে আমার দেশের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু পরদিন পত্রিকাটি পাওয়া গেল। তবে এর কলেবর কমিয়ে ১২ পৃষ্টা করা হয়েছে। দাম রাখা হয়েছে দুই টাকা কমিয়ে ১০ টাকা। পত্রিকাটি ব্যানার হেডিং করেছে, মাহমুদুর রহমান ১৩ দিনের রিমান্ডে। গ্রেফতারের ছবিটি চার কলামে দিয়েছে।
প্রথম পাতায় তারা লিখেছে একটি বিশেষ সম্পাদকীয়। সেখানে মর্মদন্তুভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মাহমুদুর রহমানের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম এবং আমাদের দেশের বাঁচা মরার লড়াইয়ের ইতিহাস। সম্পাদকীয়য়ের শিরোণামে লেখা রয়েছে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই থামবেনা।
ইনকিলাব সরাসরি সরকার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়ে গেল। প্রথম পাতার মাঝামাঝিতে রঙ্গিন রেখায় বক্স করে তিন কলামের একটি এক্সক্লুসিভ আইটেম দিয়েছে ছাত্রদলের ওপর। গত চার বছর ধরে বিরোধী দলের এ ছাত্রসংগঠনের কোনো অস্তিত্ব দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক হরতালে এদের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। পত্রিকাটি শিরোণাম করেছে, সুদৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তি নিয়ে রাজপথে নামছে ছাত্রদল।’ বিরোধী আন্দোলনকারিদের জন্য একটি সুখবর। নিস্ক্রিয়রাও এ ধরনের খবরের পর সক্রিয় হবে। পত্রিকাটি যেন বিরোধী আন্দোলন জমাট বাধার কাজটি শুরু করেছে।
ইত্তেফাক এদিন প্রধান শিরোণাম করেছে, ফটিকছড়িতে ব্যাপক সংঘর্ষ গুলি, তিনজন নিহত। চার কলাম শিরোণামের ওপর এ নিয়ে ৫ কলামে ছবি দিয়েছে। সমকাল এটি চার কলামে সেকেন্ড লিড করেছে। শিবিরের ডাকা হরতালের ব্যাপরে সমকাল শিরোণাম করেছে, রাজধানীতে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক। এ শিরোণামের ওপরে এর সমর্থনে রাজধানীর রাস্তায় গাড়ি চলাচলের একটি বড় ছবি এবং নিচে সোয়া কলামের আরেকটি ছবি দিয়েছে বসুন্ধরা সিটির। দুজন মহিলা ক্রেতার ক্লোজ ছবি ছেপেছে তারা।
এর আগে লংমার্চের খবর প্রকাশ নয় বরং পত্রিকাগুলো নিজেদের মতাদর্শই প্রকাশ করে দিল। ইত্তেফাক, যুগান্তর, ইনকিলাব, আমার দেশ, নয়া দিগন্ত প্রথম পাতার অর্ধেকজুড়ে সমাবেশের ছবি দিয়েছে। ইত্তেফাক ঠিক যেভাবে প্রায় মাসখানেক শাহবাগ মঞ্চের ছবি ও খবর দিয়েছে হেফাজতের লংমার্চ নিয়ে রবিবার একদিন একই ধরনের কাভারেজ দিল। বিশাল ছবি তার নিচে ৮ কলাম শিরোণাম, ‘দাবি না মানলে ৫ মে ঢাকা অবরোধ’। ছবি এবং প্রধান শিরোনাম মিলে অর্ধেক পৃষ্টা শেষ। লং মার্চের লোক সমাবেশের প্রকৃত ছবি ফুটে উঠেছে ছবির মধ্যে।
যুগান্তর আরো একটু বেড়ে গিয়ে লংমার্চ ভন্ডুল করার চেষ্টাকারি সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর অপতৎপরতাকে গুরুত্ব দিয়ে ছাপল। অর্থ্যাৎ এতদিন শাহবাগের উৎসাহি কাভারেজ দিয়ে রোববার তার বিপরীত পক্ষ হেফাজতে ইসলামকে যথার্থ কাভারেজ দিয়েছে। এক্ষেত্রে পত্রিকাটি সমকাল, ডেইলি স্টার, প্রথম আলোর সাথে পরিস্কার পার্থক্য তৈরি করল। আধাপৃষ্টা ছবির নিচে আরো একটি ছবি ৫ কলামে ছেপেছে। এটি লংমার্চে বাধাদানকারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম এবং তার সন্ত্রাসি বাহিনীর সশস্ত্র মহড়ার। আসলাম অস্ত্রহাতে হেফাজতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন এমন ছবি তারা দিয়েছে। যুগান্তর সম্পাদক জাতীয় পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
সমকাল পত্রিকাটি এদিন ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। তারা এদিন ব্যানার হেডলাইন করে, ‘গণজাগরণ মঞ্চ দখলের চেষ্টা’। এর সাথে ৫ কলামে ছাপিয়েছে গণজাগরণের কর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া। পত্রিকাটির মোটিভ ছিল এটা দেখানো যে গণজাগরণ মঞ্চের তরুণরা অত্যন্ত সাহসী। অন্যদিকে একই ভঙ্গিতে ছবি ছাপিয়ে পত্রিকাটি সাধারণত জামায়াত-শিবিরকে তান্ডবকারি সহিংসতাকারি হিসেবে তুলে ধরতে চায় নিয়মিত। এর নিচে হেফাজতের খবর। সেটির শিরোণাম করেছে, ‘সরকারকে ‘নাস্তিক’ বলল হেফাজত’। তার নিচে ৫ কলামে হেফাজতে ইসলামের সহাসমাবেশের ছবি। কালের কণ্ঠ ব্যানার হেডলাইন করেছে লংমার্চ নিয়ে। তবে তারা ছবিটি দিয়েছে ৬ কলামে।
ডেইলি স্টার বুধবার বড় করে একটি কার্টুন ছেপেছে। প্রথম পাতায় ৫ কলামে দেয়া এ কার্টুনে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের অগ্নিশিখাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তার মাঝে সাধারণ জনগণ। এরা অনেকে আহত নিহত। তাদের পরণের পোশাক নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এই জনগণ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন কি না সেটা নিয়ে পাঠক প্রশ্ন তুলতে পারেন।
জনগণ যখন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তখন তাদের মাথার ওপর ভয়ানক অস্ত্র নিয়ে হাজির হেফাজত, বিএনপি এবং জামায়াত। হেফাজত এবং বিএনপির হাতে জবরদস্ত লাঠিটির গায়ে লেখা রয়েছে ‘হরতাল’। অন্যদিকে জামায়াত শিবিরে হাতে রয়েছে একটি অগ্নিশিখা। আরো রয়েছে ‘প্রগ্রেসিভ গ্রুপ’। তাদের হাতে থাকা লাঠিটি নেহায়েত গোবেচারা টাইপের। সেটির গায়েও লেখা রয়েছে হরতাল। এই কার্টুনটি মোটামুটি জানিয়ে দিল দেশের জ্বালাও পোড়াও পরিস্থিতির জন্য হেফাজত, বিএনপি এবং জামায়াত দায়ি। এখানে তৃতীয় একটি চরিত্র হিসেবে ‘প্রগ্রেসিভ গ্রুপ’ দেখানো হলেও ক্ষমতার রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় পাটনার আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে উহ্য রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রধান শিরোণাম আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদের বক্তৃতা। তিনি বলেছেন, সরকারের কাছে ১৩ দফার একটিও গ্রহণযোগ্য নয়। তিন কলাম এ স্টোরিটির পাশে চার কলাম একটি ছবি। একেবারে ইঞ্জিনের সামনে দাড়িয়ে রয়েছে দুজন সশস্ত্র পুলিশ। মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতে বাগানো অস্ত্র পায়ে গার্ডস। প্রথম আলো ছবিটি দিয়ে হয়ত মিন করতে চাইছে রেল নিরাপদ হয়ে গেছে। কিন্তু এটা বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থার নিরাপত্তাকে পরিহাস করছে। এভাবে সামনে পুলিশ বসিয়ে শত শত মাইল যাত্রাকে কিভাবে নিরাপদ করা যাবে।
যুগান্তর এদিন প্রধান সংবাদ করেছে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল নিয়ে। প্রথমেই তিন কলামে একটির নিচে আরেকটি ছবি। একটিতে দেখা যাচ্ছে গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করছে পিকেটাররা। অন্য ছবিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ গুলি ছুড়ছে পিকেটারদের লক্ষ্য করে। পিকেটার এবং পুলিশের মাঝখানে স্কুল ফেরত এক শিশুসহ তার মা। এ গুলি যেকোনো সময় দুর্ঘটনাবশত বিদ্ধ হতে পারে শিশু এবং মায়ের শরীরে।
পাশে তিন কলামে একটি শিরোণাম, ‘সংকট মোকাবেলায় বিএনপির প্রস্তুতি’। এ সংবাদে প্রতিবেদক যেন বিএনপির সমর্থকদের জন্য কিছু আশা জাগাতে চাচ্ছেন। প্রতিবেদনে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে খালেদা জিয়া একাই অনেক কাজ করছেন। তিনি একটা সেটআপ তৈরি করছেন শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতিতে। যারা আন্দোলনকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে সমর্থ হবেন। এমনকি খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলেও সে আন্দোলন সফল হবে। এ পত্রিকাটি শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে অন্যান্য পত্রিকার মতই উগ্র কাভারেজ দিয়েছিল।
বিপ্লবী বিনোদ বিহারীর মৃত্যুর খবরটি তারা শেষের পাতার এক কলামে দিয়েছে। এ খবরটি ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ, প্রথম আলো প্রথম পাতায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দিয়েছে। সমকাল খবরটি প্রধান শিরোণাম করেছে। প্রথম পাতার উপরে কালো মোটা রেখায় একটি বক্স করে তিন কলামে দিয়েছে। সিটিং প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান মারা গেলে ডেইলি স্টার আড়াই কলাম কাভারেজ দেয়। অন্যদিকে প্রথম আলো দিয়েছিল তিন কলাম কাভারেজ। শাহবাগ নিয়ে মাসাধিককাল পত্রিকাগুলো ব্যানার হেডিং এবং অর্ধেক পৃষ্টা বা পুরো পৃষ্টা ছবি ছাপানোর পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর নিয়ে এ ধরনের দুর্বল কাভারেজ পাঠকদেরর মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। বিনোদবিহারী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী। পত্রিকাটি হরতাল নিয়ে একটি পোস্টমর্টেম করেছে। শিরোণাম- হরতালে ককটেলবাজি। হরতালের প্রধান অস্ত্র ককটেল বানানো নিয়ে প্রতিবেদন আবর্তিত হয়েছে। এই হালকা অস্ত্রটি বানানোর উপাদান সংগ্রহ করা একেবারেই সহজ। সেজন্য দেশে হরতাল সফল করে ফেলছে বিরোধী দল। এ হলো প্রতিবেদনের মূল বিষয়।
ডেইলি স্টারে অনেক গুরুত্ব পেয়েছে শ্রমজীবী নারী আর পহেলা বৈশাখ। প্রথম পাতার উপরে ৫ কলাম ছবিতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাহারি রঙ্গিন পোশাকের সমাহার দেখানো হয়েছে। পাতার নিচে ৫ কলামে আরেকটি ছবি। এ ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোদাল নিয়ে বসে আছেন শ্রমজীবী নারীরা। পত্রিকাটি ক্যাপশনে লিখেছে হরতালের কারণে চাহিদা কমে গেছে। তারা বিমর্ষ বদনে বসে আছেন।
মানবজমিন অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের একটি একটি কার্টুন দিয়ে দুই শব্দে শিরোণাম করেছে, ‘মুমূর্ষু অর্থনীতি’। তার মুখের সামনে যেন একটি উন্মত্ত আকাশ। এটি যেন টর্নেডোর মেঘ। মুহিতের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে, ‘১ মাসের মধ্যে সঙ্কটের সমাধান’।
আমার দেশের নিচে দুই কলামে একটি বক্স দেখা যাচ্ছে। বক্সের ওপরের অংশ উইকিলিকস এর লোগোর পাশে শেখ মুজিবের একটি স্ট্যাম্প ছবি। তার পাশে রঙ্গিন জমিনের ওপর শিরোণাম করা হয়েছে, ‘উইকিলিকসে শেখ মুজিবের শাসনকাল’। পত্রিকাটি লিখেছে. অতি গোপনীয় নথি ফাঁস করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারি ওয়েবসাইট উইকিলিকস এবার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালের নানা দিক।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এসব গোপন নথিতে উঠে এসেছে ১৯৭৩-৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির চালচিত্র। গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক। এতে স্থান পেয়েছে সে সময়ের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের নানাদিক। শেষে এসে লিখেছে, আগামীকাল পড়ুন ‘শেখ মুজিব : দ্য নিউ মোগল’। কিন্তু বৃহস্পতিবার (যেদিন ঘোষণাটি পত্রিকায় দিল) সকাল নয়টায় পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন শুক্রবার ‘শেখ মুজিব : দ্য নিউ মোগল’ আর প্রকাশ হতে দেখা গেল না।
বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের ঢালাও গ্রেফতারের বিষয়টি নজিরবহিীন হলেও মিডিয়া এটি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। ইত্তেফাক বৃহস্পতিবার প্রধান শিরোণাম করেছে। সব বিবেচনাতেই শীর্ষ নেতাদের জামিন দিতে পারতেন আদালত- শিরোণামে পত্রিকাটি লিখেছে, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আটক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সকল বিবেচনায়ই নিম্ন আদালত জামিন দিতে পারতেন। ফৌজদারি কার্যবিধিতেও জামিন দেওয়ার নিদেশনা রয়েছে। সম্ভবত ইত্তেফাকই একমাত্র পত্রিকা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আটকের পর এই বিষয়টি নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন ছাপল।

একজন সম্পাদকের ১৩ দিনের রিমান্ডঃ সহযোগী মিডিয়া কভারেজ দিল যেভাবে

তথ্য সূত্র: http://www.comillardak.com
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×