টেলিফোন বাজছে তো বাজছেই। এত সকালে ঘুম থেকেই না উঠতেই কেন যে মানুষ ডিসটার্ব করে বুঝে উঠতে পারে না।
অনিল বিছানায় মাথার কাছে রাখা মোবাইল হাতে নিয়ে কার ফোন বাজছে খেয়াল করে দেখে, অহনার ফোন। অনিল অহনার নামটি তার মোবাইলে সেইভ করেছে “অহনা জান” নাম দিয়ে। অনিল ইচ্ছে করেই প্রথম কল রিসিভ করেনি। দ্বিতীয় কল পেয়ে ভাবতে থাকে এত সকালে অহনা কেন তাকে ফোন করছে। এত সকালেতো তার ফোন করার কথা না। কিক্ষুক্ষণ ভেবে ফোন রিসিভ করতে করতেই ফোন কেটে যায়।
এরপর সে আবার ঘুমিয়ে পরে। এবার যেন ঘুম তাকে গ্রাস করে ফেলে। বালিশ মুখের সাথে চেপে ধরে একবারে গভীর ঘুম। এক সময় স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। অহনা তার পাশে এসে শুয়ে আছে। বারবার যেকে বলছে এই উঠো, এখনই সময়। কাছে আসো। অনিল যেন সত্যি সত্যি অহনার ডাকে সাড়া দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। সেই জড়িয়ে ধরাতেই অনিলের ঘুম ভাংগে। জেগে দেখে না তার পাশে অহনা নেই। আছে একটা গল্পের বই। সেটা সরিয়ে রেখে ফোন তাতে নেয়।
অনিলের খুব বাজে এক অভ্যাস, ঘুম থেকে জেগে প্রথমেই ফোনের স্ক্রিণে ফেইসবুক ওপেন করে দেখবে কোন নোটিফিকেশন আছে কি না। অনিল ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে জেগে তো দেখেই, মধ্য রাতেও যদি ঘুম ভাংগে তখনো একই ভাবে দেখে মোবাইলে কোন নোটিফিকেশন আছে কি না। আজ কোন নোটিফিকেশন নেই। না থাকলেও বেশ কয়েকবার মিস কল দেখা যায়। পরপর অহনা জান নামটি দেকে সে বিছানায় উঠে বসে। বসেই অহনাকে কলব্যাক করে সে।
অহনা ফোন রিসিভ করে প্রথমেই প্রশ্ন করে, এই তুমি সকালে একটু আমার সাথে দেখা করবে? আমি জরুরী ভিত্তিতে তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
বিছানার পাশে অনিলের টেবিল, টেবিলের উপর একটি কাঁচের গ্লাসে পানি রাখা। রাতে পানি খাওয়া তার অভ্যাস। আজ রাতে আর পানি তার খাওয়া হয়নি। ফোন হাতে নিয়েই একটু এগিয়ে গিয়ে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে প্রশ্ন করে কি ব্যাপার অহনা আজ তুমি এত সকাল সকাল ফোন করে দেখা করতে চাইছো। কিছু কি হয়েছে তোমার? নাকী কোন সুসংবাদ আছে?
অপর প্রান্তে অহনার ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনতে পায় অনিল। এই সাত সকালে অহনা কান্না করছে, ঘটনা কি? ঘুম ঘুম চোখে অনিল পানির গ্লাস আবার টেবিলে রেখে মোবাইল বাম হাত থেকে ডান হাতে নিয়ে কানের কাছে ধরে আবার প্রশ্ন করেন, এই তুমি কান্না করছো মনে হচ্ছে, কি ব্যাপার এই সাত সকালে কি হয়েছে তোমার? বলেই রসিক রসিক ভাব নিয়ে হাসে। হাসির শব্দ অহনা শুনতে পেয়ে কিছুটা রেগে যায়। রেগে গিয়ে রাগ রাগ ভাব নিয়ে সেও কিছুটা কর্কশ কন্ঠে বলে, আমি মরছি ভয়ে আর তুমি করছো তামসা? রাখো তোমার তামশা। বলো দেখা করতে পারবে কি না?
-আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি না কি? জাস্ট জানতে চাইলাম কি হয়েছে তোমার এত সকালে?
অহনা বলল, অনিল আমার একটি সমস্যা হয়েগেছে। আমি সমূহ বিপদ দেখছি সামনে। তুমি আসো আমি দেখা করে কথা বলতে চাই। বেশতো দেখা করবে এ নিয়ে এত ব্যস্ত হবার কি আছে শুনি? তোমার কি বিয়ের ঘরটর আসছে নাকী? আর গত দুই তিনদিন কোন যোগাযোগ নেই দেখে ভাবলাম গ্রামে টামে গেলে কি না?
অহনা এবার বিবিএ কমপ্লিট করেছে মাত্র। এমবিএ করার একটা পরিকল্পনা করছে। থাকে একটি মহিলা হোস্টেলে। মাঝে মধ্যেই মন চাইলে সে চলে যায় গ্রামের বাড়ি। হুট হাট করে যাবার আগে বলেও যায় না। অনেক সময় গ্রাম থেকে ফিরে এসে অনিলকে বলে এই গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। তোমার জন্য বাড়ি থেকে নাড়– নিয়ে এসেছি, কিম্বা পিঠা নিয়ে এসেছি। অনেক সময় বলে মা এ দিয়েছে, ওই দিয়েছে। সে সকল খাবার আবার অনিলকে নিয়ে খায় অনেক সময় অন্য বান্ধবীদের নিয়ে অনিলকে সহ শেয়ার করে। এবারেও কয়েকদিন যোগাযোগ না করাতে ভেবেছিল সে হয়তো গ্রামের বাড়িতেই গিয়েছে। কিন্তু সে বলল ভিন্ন কথা।
তার বান্ধবী মাহিনকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিল। হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়ে যাওয়াতে সে মাহিনের সাথে পরামর্শ করে ডাক্তারের সরনাপণ্য হয়ে জানতে পারে সে এখন অন্তসত্তা। অহনার এমন কথা শুনে অনিল আকাশ থেকে পরে যেন। পানি খাওয়ার রুচিও যেন নষ্ট হয়ে যায়। অহনা তাকে এই সাত সকালে কি বলল। অহনার সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয়। ফোন রাখার আগে বলল, সকাল এগারোটার সময় মালিবাগ যাবে সেও যেন এসে ফোন করে।
অনিল সকালের কাজ সেড়ে নাস্তা না করেই বের হয়। যাবার সময় বাসায় তার মাকে বলে আজকে ফিরতে দেরী হতে পারে। দূরে কোথাও যেতে পারে। বেশী দেরী হলে ফোন করে জানাবে সে। তার মা অনিলকে বলল শুধু, যেখানেই যাইস না কেন, ফোন করে জানায় যেন। অনিল অনেকদিন হয়ে গেল পড়াশোনা শেষ করে বসে আছে। কোথাও ভালো কোন চাকুরীর সন্ধানও করতে পারছে না। আজকাল বাসায় বলতে শুরু করছে সে পারলে বিদেশে চলে যাবে। বিদেশে গিয়ে লেবারের কাজ হলেও করবে। ভালো কোনো কাজ না করলে যে তাকে বিয়েও করানোর কথা ভাবতে পারছে না বাসায় সেটি সেও ভালো করেই জানে। নিজে থেকে তার বাবা মাকে কিছু বলতেও পারে না। মাঝে মধ্যে দূর সম্পর্কের কোন বৌদিকে কাছে পেলে হয়তো অনিল বলে, তোমরা যে কি হয়েছো না বৌদি। তোমাদের কোন বোন টনকেও বলো না আমার কথা। বাবা মাকে বলে আমার বিয়ের কথা বলো আমি বিয়ে করতে চাই শীঘ্র। এটুকুই।
অনিল জানে দেশে কোন রোজগারের পথ না হলে যে তার এই বিয়ে নামক সামাজিকতার সাথে তার দেখা হবে না। এই জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যা পিঠ থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে যে সে ঘরে বসে আছে এটা তার ভালো লাগছে না। সে যে দেশে কোন উপার্জন করতে বানিজ্য করবে সেরকম মূলধনও নেই তার। এই জন্য ভালো কোন লাইন খুঁজছে। পেয়ে গেলেই চেষ্টা করবে ধার দেনা করে পাড়ি জমাবার। তারপরেও সম্পর্ক গড়ে তুলেছে সে অহনার সাথে। অহনার সাথে তার দেখা হয় মাঝে মধ্যে। সেই দেখাই একসময় গভীর মিলনের দিকে ডাকে একজন আরেকজনকে।
একদিন অনিল খুব করে অহনাকে কাছে পেতে চায়। সেই চাওয়া থেকে চলে যায় দু’জন দু’জনের হাত ধরে অনিলের এক বন্ধুর বাসায়। সেই যাওয়ার ফলই আজকে কান্নার স্বর। অনিল সেই দিনের আনন্দর কথা মনে করতে করতেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। সময় মত সে চলে যায় মালিবাগ। অহনাও চলে আসে নির্ধারিত সময়ে। অহনাকে দেখেই প্রশ্ন করে কি ব্যাপার তোমাকে দেখতে এত পাগলের মত মনে হচ্ছে কেন?
-চলো কোথাও যাই। দূরে কোথাও গিয়ে বসে কথা বলবো।
-কোথায় যেতে চাও?
ঢাকা শহরের কোথাও যে ছেলে মেয়েরা একান্তে বসে মনের ভাব প্রকাশ করবে সেই সুব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পরিকল্পনা বিহীন এই শহরের মানুষ যে হারে অট্টালিকা নির্মাণ করছে এতে বিনোদনের কোন স্থানই নেই যেন সেই পরিকল্পনার মাঝে। অনিল সেই কথাই বলে অহনাকে, আমাদের এই ঢাকা শহরে যাবার কোন ভালো পরিবেশতো নেই, তোমাকে কোথায় নিয়ে যাই, কোথায় গিয়ে তোমার কান্নার শুনবো বলো। যেখানেই যাবো মনে করি, সেখানেই যে গাড়ীর শব্দে তোমার কান্নার শব্দ বিলীন হয়ে যাবে। আমার কানে যে তোমার কষ্টের কান্নার শব্দ এসে আর পৌছবে না। বরং চলো মিরপুর ভুটানিক্যাল গার্ডেনে যাই। সেখানে বসে কথা বললে পাখপাখালির কিচির মিচির শব্দে তোমার কথাও ভালো লাগবে।
অহনা খিচিয়ে উঠে বলে, দেখো সব সময় তোমার এমন কবিতা শুনতে আমার ভালো লাগে না। এখন একটু সিরিয়াছ হউ। আগের মতন আর হেয়ালীপনা করলে চলবে না। সবসময় রসিকতা করা ঠিক না। আজকে একটা ডিসিশন নিতে হবে। আমি খুব ভয় পাচ্ছি। আমার যদি কিছু হয়েই যায় তাহলে আমি যাবো কোথায় আর কার কাছে গিয়ে আমি আশ্রয় চাইবো, কে দিবে আমাকে আশ্রয়?
-নাস্তা করে এসেছ? কিছু খাবে?
-না, কোন কিছুতেই ভালো লাগছিল না। থেকে থেকে আমার বমি হচ্ছিল। হোস্টেলের মেয়েরা বিষয়টি টের পাওয়ার আগেই আমি তোমার সাথে পরামর্শ করলে ভালো হবে মনে করেই এত সকালে ফোন করেছি।
-এখন কিছু খাবে? না খেয়ে কোথাও গেলেও যে ক্ষুধায় কস্ট পাবে। কিছু বরং খেয়ে গেলে পেট ভরা থাকবে এবং কথাও বলতে পারবে ভালো ভাবে।
-না আমি এখন খাবো না। খেলে পরে বমি হতে পারে। তবুও খেয়ে নেউ। চলো সামনে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে বসে কিছুক্ষণ গল্প করি আর নাস্তা করে নেই। এরপর যাবো।
রাস্তার পাশে রিক্সার টুংটাং ঘন্টার শব্দ, লোকের হাউ মাউ কথার শব্দ, তা ছাড়া রয়েছো প্রাইভেট গাড়ী আর বাসের শব্দ। থেকে থেকেই পে পো করে বিকট হর্ণের শব্দ বেজে উঠছে। এই শব্দের ভিরে দু’জনের কথা অনেকটা ক্ষীন হয়ে কানে পৌছায়। অনিল বলে, তুমি এটা টের পেয়েছ কি করে প্রথম?
রাস্তার ধার দিয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে হাটতে হাটতে কথা বলে দু’জনে। কয়েকদিন ধরেই আমার খুব শরীর খাপার করছিল। আমার একটু ভয়ও লাগছিল এই মাসে আমার শরীর খারাপ করে নি তাই। অহনার এই শরীর খারাপ না করার কথা প্রথমে অনিল বুঝতে পারে নি। তাই বোকার মত প্রশ্ন করে অহনাকে, শরীর খারাপ মানে? অনিলের প্রশ্ন শুনে অহনা অনিলের চেয়েও অবাক হয়ে বলে, তুমি এখনো অনেক ছেলে মানুষ আছ? মেয়েদের বিষয়ে কিছুই জান না? মেয়েদের যে প্রতি মাসে শরীর খারাপ করে সেটাও তুমি জান না? ভেংগে ভেংগে বুঝিয়ে দিতে হবে?
-ওমা তুমি কি বলছো, আমিতো ছেলে মানুষই। আমি যা জানি না সেটা কি করে বলি যে জানি। খুলে না বললে আমি বুঝবো কি করে তোমার সমস্যা। আমি কি এর আগে বিয়ে করেছি যে তোমার মত এতটা পাকা হবো?
অহনা হাটা বন্ধ করে অবাক চোখে তাকায় অনিলের দিকে। এ তুমি কি বলছো? আমার কি আগে বিয়ে হয়েছে? আমার কি অভিজ্ঞতা আছে?
-তাহলে তুমি এত কিছু জানলে কি করে?
-এসবতো বান্ধবীদের সাথে কথা বললেই জানা যায়। তা ছাড়া বয়সের সাথে এসব মেয়েরা এমনিতেই জেনে যায়। বিয়ে হতে হয় না। বুঝছো? চলো এবার এতটা ভনিতা করতে হবে না। বাপ হচ্ছো যে সেটা মাথায় রেখো।
দেশটা এখন আর পিছিয়ে নেই। ছেলেমেয়েরা এখন যত্র টত্র খোলামেলা মেলামেশা করছে। এই মেলামেশা থেকে ঘটছে মনের অজান্তে দুর্ঘটনাও। এসবের সমাধান করতেও গড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আর এই সুযোগে কিছু কিছু ডাক্তারও অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের জিম্মি করে বা ব্লেকমেইল করার কথা বলে টু পাইস কামিয়েও নিচ্ছে। এধরনের একটি প্রতিবেদনও পড়েছিল কোন এক ম্যাগাজিনে অনিল। তাই সেই প্রতিবেদনের কথা মনে করে অহনাকে বলে, শোন আমার মাথায় একটি বিষয় চলে এসেছে।
-কি বিষয়।
-বলবো চলো রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে বলবো।
সামনেই রেস্টুরেন্ট। মৌচাক মার্কেটের সামনে অভারব্রীজ ক্রশ করে সামনেই সারি সারি রেস্টুরেন্টের একটিতে ঢুকে ওরা। ঢুকতেই একজন বয় এসে বলে মামা উপরে দোতলায় চলে যান। সেখানে নিড়িবিলি বসে মামীকে নিয়ে কথা বলতে পারবেন। ছেলেটির মুখে এভাবে মামা-মামী ডাক শুনে রাগ করবে না হাসবে তা নিয়ে দু’জন বলাবলি করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। তখনই উপর থেকে অন্য একজন বয় নামছিল। অনিল ওকে বলে এই তাড়াতাড়ি করে আমাদের কিছু খেতে দেওতো। সময় নেই।
ছেলেটি পিছন ফিরে প্রশ্ন করে, মামা কি ভাত দেবো নাকি রুটি দেবো।
-তাড়াতাড়ি যা দেওয়া সম্ভব হবে সেটাই দেও।
ছেলেটি আর কোন কথা না বলে নীচে নেমে যায়। তারাও উপরে উঠে বসে একটি খালি টেবিল দেখে। বসেই অহনা কিছু বলার আগেই খুব আবেগী হয়ে কানতে থাকে। অনিলের কাছে বিষয়টি অনেকটা অভিনয়ের মত মনে হয়। তাই প্রশ্ন করে, হঠাৎ আবার কি হলো তোমার? তুমি এভাবে কিছু না বলে কানতে শুরু করেছ কেন? আশেপাশের মানুষ দেখলে কি বলবে বলো?
-অনিল আমি প্রেগন্টে হয়ে গেছি। আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। বাবা মাকে আমি কি বলে বোঝাবো তাও বুঝতে পারছি না। এই বিষয় যদি বাবা মাকে বলি আমাকে আর ঢাকাতেই রাখবে না। সব কিছু বাদ দিয়ে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে বসিয়ে রাখবে।
শোন মাহিনকে তুমি কি বলেছ আমাকে বলো আগে। মাহিনকে আমি এখনো তেমন কিছু বলি নি। আমি ওকে বিষয় গুলি ইনিয়ে বিনিয়ে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ে নিজেই রুমে বসে চেকআপ করিয়েছি। ও আমাকে যে বাবে বিষয়টি বুঝিয়েছি সেভাবে কয়েকবার পরীক্ষা করিয়ে দেখলাম রেজাল্ট বারবার একই দেখায়। তাই ওর পরিচিত এক ডাক্তারের সাথে আমি ফোনে কথা বলে বিষয়টি কনফার্ম হবার জন্য আবারো টেস্ট করে দেখেছি, কিন্তু কোন পরিবর্থন না হওয়াতে তোমাকে ফোন করলাম।
আশে পাশে কয়েকটি টেবিলে কাস্টোমার খাচ্ছে। অনিল অহনাকে বলে, দেখ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমিও আমাকে ভালোবাস। এতে তো কোন সন্দেহ নেই। সেই ভালোবাসার কারণেই যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটেও থাকে সেটাতো ভালোবাসার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। সেটা না করে কান্নাকাটি করলে কোন ভালো সমাধান হতে পারে না। তবে তুমি যেহেতু এত কিছু জানই তাহলে সতর্ক করা উচিৎ ছিল।
-আমিতো তোমার কথা মনে করেই সতর্ক হতে পারি নি। তোমাকেও সতর্ক করতে চাই নি। চাইলেতো পারতাম। এখন যা হয়ে গেছে এটার সমাধান তুমি কি ভাবে দিতে চাও শুনি।
-আমার বিয়ের বয়স হয়েছে। একদিন আগে আর পরে বিয়ে যেহেতু করতেই হবে তাই আমি বিষয়টিকে আনন্দ সংবাদই মনে করছি। কিন্তু তোমারতো এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। তুমি এখনো পড়াশোনা করছো। আরো পড়তে চাও। এই মুহুর্তে কিছু হয়ে গেলে তোমার কেরিয়ারের ক্ষতি হবে। এখন তুমিই ভেবে দেখো কি করবে। ক্যারিয়ারের কথা ভাবলে এখন এটাকে তুমি আর সুসংবাদ বলতে পারো না। বরং দৃসংবাদই বলতে পারো। আর যদি মনে করো ক্যারিয়ারের দরকার নেই তাহলে চলো আমরা বিয়ে করি। তবে আমাদের এই বিয়ে কেউ মেনে নিবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। আমার কোন রোজগার নেই। তুমিও কিছু করতে পারবে না। এই মুহুর্তে বিয়ে করলে কোথায় যাবো কি করবো। ঢাকা শহরে যেখানে আমরা দুজনের কেউই শক্ত ভাবে দাঁড়াতে পারি নি এখনো।
অহনা বিষয়টি খুব খেয়াল করে শুনতে থাকে। অনিলের কথার মাঝে কোন কথাই বলে না সে। সে বুঝতে পারে অনিল যা বলছে সেটা তার ভালোবাসাকে অস্বীকার করার মত কিছু বলছে না। বরং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত যে কারো জন্য হবে না সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারে। তাই অনিলের কথার শেষে বলে, দেখো যা কিছুই করতে চাই আজকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেরী করলে বিষয়টি জানাজানি হতে পারে। তা ছাড়া আমার জন্যই হয়ে যাবে কষ্টের।
দুজন খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নেয় সেখান থেকেই দুজনে মিলে যাবে হাসপাতালে। হাসপাতালে গিয়ে গাইনী ডিপার্টমেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যত দ্রুত পারে কাজ করে ফেলবে। কাছেই একটি হাসপাতাল। তখন আর কোথাও ঘুরতে না গিয়ে দুজনে মিলে চলে যায় হাসপাতালে। সেখানকার গাইনী বিভাগের একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে। ডাক্তার অহনার সব কথা শোনার পর পরামর্শ দেন পারলে পরেরদিন তাকে আসতে। আসলে সব কিছু ব্যবস্থা করে দিবে। এজন্য তার লাগবে পাঁচ হাজার টাকা।
পরেরদিন হাসপাতালে যাবার সময় সাথে করে যেন টাকা নিয়ে যায়। টাকা না দিলে কোন কাজই করবে না তারা হাসপাতালে। অনিল কোন কথা বলে না। অহনা বলে টাকা নিয়ে আসবে তবে পুরো টাকা সে দিতে পারবে না। হোস্টেলের অন্য মেয়েদের কাছ থেকে ধার দেনা করে টাকা নিয়ে আসবে। নিজে নিজে হিসাব করে, সতার কাছে আছে এখন নগদ এক হাজার টাকা। আর এখন চাইলেও দুই তিন হাজার টাকা সংগ্রহ করতে পারে হয়তো। তাই ডাক্তারকে বলল, আমি সব মিলিয়ে চার হাজার টাকা দিতে পারবো। এর বেশী সম্ভব না।
ডাক্তার অহনার কথা শুনে অনিলের দিকে তাকালে অনিল বলে, ডাক্তার আমার কোন রোজগার নেই এই মুহুর্তে। আমার দিকে চেয়ে আশা করলে এই মুহুর্তে ছিনতাই করা ছাড়া যে কোন বিকল্প দেখছি না। সুতরাং আপনার কাছে আমার অনুরোধ অহনা যা বলছে সেই টাকাতেই করে দেন আপাতত। ডাক্তার দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ঠিক আছে যাও কাল সকাল সকাল চলে এসো। আমি থাকবো।
অহনা ডাক্তারকে বলে আসলে আমি একাই আসবো। যদি সম্ভব হয় আমাকে আগে আপনাদের ওটি দেখান প্লিজ। না দেখলে মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করবে। অনিল অহনার কথা শুনে বলে তার চেয়ে বরং তুমি এখন আবার ডাক্তারকে দিয়ে ফাইনাল পরীক্ষা করে নিতে পারো। এমনওতো হতে পারে তুমি যা করেছ সেটি ভুল। কিম্বা তুমি যেহেতু ভয়ে ভয়ে টেস্ট করেছ সেই ভুলের কারণেই রেজাল্ট দেখেছ ভুল।
অনিলের কথা শুনে ঠিকই ডাক্তার আবার নিজে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার কথা বলে অহনাকে ভিতরে অন্য রুমে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে ভালো ভাবে টেস্ট করে দেখেন অহনা এতক্ষণ যা বলেছে, এখনকার রেজাল্ট পুরো উল্টো। পুরোটা ছিল ভুল। বিষয়টি তাদেরকে বললে দুজনেই আনন্দে কেঁদে ফেলে।
এরপর ডাক্তার তাদের অনেকটা মায়ের আদর দিয়ে বুঝিয়ে বলেন, তোমরা এখনো অনেক ছোট। এই বয়সে তোমরা অনেক ভুল করতেই পারো। আর এই বয়সে এমন ভুল করাটাই স্বাভাবিক। অনেক কিছুই করার ইচ্ছা হবে। এটা দোষের নয়। তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমান এই উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞান তোমাদের জন্য কত কিছু তৈরী করে রেখেছে, ওসবের ব্যবহার জানতে হবে। ইচ্ছা হলেই কোন কিছু করা ঠিক না। নিজেদের প্রতি নিজেরা সচেতন হলে তোমাদের ভবিষ্যৎই হবে ভালো।
আজকে তোমরা যাও। কাল আর আসার দরকার হবে না। টাকাও লাগছে না। তবে আগামীতে আর এমন ভুল করো না।
ডাক্তারের পরামর্শ শুনে অনিল আর অহনা আনন্দে ফুরফুরা বাতাস গায়ে লাগিয়ে চলে আসে।
আলোচিত ব্লগ
রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তির কোরাস দল
ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!
নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী
আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্ব কবি
বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।
কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।
সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।
যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন