somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদে/উৎসবে শিশুকে কোন প্রশ্নটা করবেন না?

১৫ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১০ সন থেকে আমার এই লেখাটা প্রতি বছর দুবার (প্রতি ঈদে) শেয়ার দিয়ে থাকি। খুব বড় লেখা নয়। অল্প সময় লাগবে পড়তে।
-------------------------------------------------------------------------
বড় হয়ে গেছি। আর তাই ঈদ আর আগের মতো লাগেনা। কিন্তু যখন ছোট ছোট শিশুদের ঈদের আনন্দে মাতামাতি করতে দেখি মনটা জুড়ায় যায়। কি সুন্দর পোশাক, সুন্দর সাজু গুজু, নতুন জুতা, ফিতা, আবার চোখে রংএর চশমা, নানা সাজে সাজে শিশুরা। কিন্তু এই সুন্দর মনের শিশুকে আমরা বড়রা নষ্ট করি। ঈদে/উৎসবে বা ঈদের আগেই আমরা সবাই শিশুদেরকে একটা common প্রশ্ন করি। আমার মতে সেটা একদমই করা উচিত নয়।

‘সুনাতা, এবার ঈদে তুমি কয় সেট জামা কিনেছো?’
‘সুনাতা, কে কে তোমাকে কয়টা করে জামা দিয়েছে?’
‘সুনাতা, তুমি কি শুধু জামা-ই কিনেছো? জুতা কিননি?’
ইত্যাদি ইত্যাদি…

আমার এই ধরনের লেখায় অনেকেই আমাকে আঁতেল বলবেন হয়তো, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কোন শিশুকে এই ধরনের প্রশ্ন করি না, করাটা পছন্দও করি না। আমার মনে হয়, এই ধরনের প্রশ্ন (আমি ঈদকে কেন্দ্র করে বললেও আসলে বিভিন্ন সময়েই আমারা এই ধরনের কথা বলি) একটা শিশুকে ভোগ্য করে তোলে। তাকে এই শিক্ষা দেয় যে তার অনেক সেট জামা পাবার উচিত ছিলো। আর তাই বড় হবার সাথে সাথে যেন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সেই প্রস্তুতি মনে মনে শিশুটি পালন করতে থাকে। আর তাই শিশু হতে যখন কিশোর-কিশোরী হয়, তখন মা-বাবাকে চাপ দেয় অধিক সেট ঈদ পোশাকের জন্য। ‘নানু কি দিয়েছে? দাদু কি দিয়েছে? মামা-খালা কি দিয়েছে? চাচা-চাচী কি দিয়েছে? মা-বাবা কি দিয়েছে?’ এই ধরনের প্রশ্ন করে একটা শিশুকে বুঝিয়ে দেই যে ওদের সবার কাছ থেকেই কিছু একটা পাওয়া ওর অবশ্যই উচিত ছিলো। আর এই ধরনের প্রতিযোগিতায় যখন একটা শিশু বড় হতে থাকে তখন যে মা-বাবারা পারেনা তার সন্তানকে সন্তুষ্ট করতে, তারা অনেক কষ্ট পায়। আশা করি পাঠক বুঝতে পেরেছেন আমার কথা।

আমি শুধু সমস্যা নিয়ে কথা বলা পছন্দ করিনা। সাথে বলতে চাই সমাধান কি হতে পারে। আমি অনেকটা এইভাবে একটা শিশুর সাথে কথা বলে থাকি:
আমি: সুনাতা, তোমাকে এই পোষাকে খুবি সুন্দর লাগছে! এটা কি তোমার পছন্দের dress?
সুনাতা: হা, আমার পছন্দের!
আমি: (তার কয়টা পোশাক সেদিকে না গিয়ে) তো, তুমি ঈদে কেমন করে মজা করলে?
সুনাতা: অনেক কিছু খেয়েছি। খালা-মনির বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। খালা-মনি আমাকে একটা পিংকুশ জামা দিয়েছেন।
আমি: (খালা-মনি দিয়েছে সেটা অবশ্যই ভালো কথা কিন্তু আমি জানতে চাইনা আর কে কে কি দিয়েছে। শুধু ‘তাই’ বলে ঐ বিষয়টা শেষ করি) তাই।
আমি আবার বলি: কি কি খেলা করেছো?
(এভাবে চলতে পারে কথাবার্তা)

যদি কোনভাবে এমনি-এমনি সুনাতা বলেই দেয় যে, সে ৫ সেট জামা পেয়েছে তবে simply সেটাকে ignore করি। এভাবে প্রকাশ করিনা, “ও! তাই! পাঁ—চ সে—ট! তো কে কে কি দিলো সুনাতা?” বরং আমি ওর সাথে একটু অন্যভাবে কথা বলে প্রসঙ্গ পাল্টাই। যেমন:
সুনাতা: আমি ৫ সেট ড্রেস পেয়েছি!
আমি: আমি ছোট বেলায় ঈদে কি করতাম জানো?
সুনাতা: কি করতেন?
আমি: অনেকের সাথে দেখা করতে যেতাম, বন্ধুদের সাথে খেলা করতাম, আর যখন বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে যেতাম সেমাই খেতাম, এভাবে খুব্বি মজা করতাম।
সুনাতা: আপনি নতুন নতুন জামা পরতেন না।
আমি: পরতাম, তবে বন্ধুদের সাথে খেলা করেই আমরা বেশি মজা পেতাম। (এই কথাটা বলেও আমি আবারো পোশাকের উপর বা এর পরিমাণের উপর গুরুত্ব দেই না)

পরিশেষে বলি, আমি জানি আমরা সবাই আমাদের সন্তানকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আর তাই সকল শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন মা-বাবারাই তার সন্তানকে উৎসবে অবশ্যই উপহার দেয়। সেটা ঠিকও আছে। সন্তানকে দিয়ে আসলে আমরাই খুশি হই, আনন্দ পাই। কিন্তু আমি মনে করি একটা শিশুকে শুধুই ‘কয় সেট জামা পেয়েছো?’ এই ধরনের প্রশ্ন করে তাকে ভোগবাদী করে তোলার সুড়সুড়ি দেয়া অনেক বড় অন্যায়। প্রতিটি শিশুই সুন্দর, আসুন তাদেরকে সুন্দরই থাকতে দেই। আমাদের আচরণ বা শুধুই একটা কথার দ্বারা তাকে নষ্ট না করি।

সর্ব শেষ কথা। যদি কোনভাবে বুঝেই যান যে ঐ শিশুটির পোশাক নতুন নয় ভুলেও তার পোশাক নিয়ে বেশি কথা বলবেন না। ‘তোমার ড্রেসটা-তো নতুন মনে হচ্ছেনা’ – এই ধরনের প্রশ্ন-তো করবেনই না বরং তখনও বলুন যে তাকে সুন্দর লাগছে। :)

সোর্স: http://wp.me/p1aEoY-15
-------------------------------------------------------------------------
যদি এই লেখার বক্তব্য ভালো লেগে থাকে এবং যদি প্যারেন্টিং বিষয়ে আরো আলোচনা করতে চান তবে Facebook Group-এ যোগ দিন। এই গ্রুপে আমরা প্রধানত বাংলায় আমাদের সন্তানদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে থাকি।
-------------------------------------------------------------------------
আর যদি হাতে একটু সময় থাকে ২-৪-৫-১০ মিনিটের কিছু ছোট ছোট video clip দেখবার তবে অবসরে চা/কফি খেতে খেতে আমার YouTube Channel টি ভিজিট করতে পারেন। আমার বিশ্বাস এই Channel টির অধিকাংশ video clip আপনার পছন্দ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:০৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×