এই না হলে বৃষ্টি !
চায়ের দোকানে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছি। মাঝে মাঝে বাতাসে জলের ঝাপ্টা গায়ে লাগছে। ভালো লাগছে। আসে পাশে সবার মধ্যে কেমন যেন তাড়াহুড়ো , সবাই ব্যস্ত। বৃষ্টি এড়াতে সবাই খুঁজছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। আমার মধ্যে কোন ব্যস্ততা নেই , নেই কোন তাড়াহুড়ো। পরম আয়েশে তৃপ্ত চুমুক পড়ছে চায়ের কাপে , চোখ বুঁজে আসছে যেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি ভীড় থেকে একটু ফাঁকে। দোকানটা বেশ বড়। সবাই আশ্রয় খুঁজছে আসে পাশে। আশা করা যায় , খুব শিগ্রী দোকানে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যাবে না।
“দেখি একটু সাইড দেন তো !”
চেয়ে দেখি কাক ভেজা এক তরুণী সাইড চাইছে ।
কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখ ফেরাতে পারলাম না। কাক ভেজা তরুণীও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হলো কয়েক যুগ কেটে গেছে । গ্রীষ্ম , বর্ষা , শরৎ শেষে শীতে পাতা ঝরা ডালে দেখা দিলো সবুজের সম্ভার। নাহ , আমি ইদানিং বেশি আশা রাখি না।জানি বৃষ্টি থামলেই এই মায়া কেটে যাবে। আকাশের কালো মেঘ গুলো সরে দেখা দেবে নতুন আলো , ঝলকানি দেবে রোদ। । আমি চায়ের কাপটা দোকানির দিকে বাড়িয়ে দেই। বৃষ্টি থেমে গেছে। ফিরে যাচ্ছে যে যার গন্তব্যে। আবার ব্যস্ততা , আবার তাড়াহুড়ো। কাক ভেজা তরুণী চলে যাচ্ছে। আমি তাকিয়ে থাকি। আমার কোন তাড়াহুড়ো নেই , নেই কোন ব্যস্ততা।
এই যা !
আবার বৃষ্টি চলে এলো।আবহাওয়ার মর্জি বোঝা মুশকিল । এই বৃষ্টি এই রোদ। আমি আসেপাশে তাকায় , চোখ খুঁজে ফেরে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ঠিক করলাম একদৌড়ে রাস্তার পার হব। নিউ মার্কেটের গেটের নিচে দাঁড়ালে আপাতত রক্ষা পাওয়া যাবে। এক দৌড়ে এসে দাঁড়ায় নিউ মার্কেটের গেটের সামনে । চারিদিকে কোলাহল বাড়ছে , বাড়ছে যানবাহনের চঞ্চলতা। ভেপু বাজিয়ে ছুটে চলেছে আজিমপুর টু মিরপুরের সিটিং সার্ভিস। বৃষ্টি ব্যস্ততা বাড়ায় , চঞ্চলতা বাড়ায় বহুগুনে। হটাৎ সব কিছু স্থবির হয়ে গেলো , স্তব্ধ হয়ে গেলো। যানবাহনের হর্ন নিমেষেই হয়ে গেলো নীরব। নিউমার্কেট গেটটার ছাউনির নিচে তুমি দাঁড়িয়ে আছো। তাকিয়ে আছো আমার দিকে। ভাবলাম চোখ সরিয়ে নেবো। তবে কেন জানি সম্ভব হলো না। বৃষ্টি বাড়ছে। ভিজিয়ে দিচ্ছে পুরো শরীর , চুল , চোখ , আপাদমস্তক। দূরে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করি তোমার চোখের গভীরতা।
আচমকা পুরোনো অনুভূতি গুলো তরল হয়ে আমার চোখে জমা হতে থাকে। সেটা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার আগেই নিজেকে সংবরণ করি। বহুকাল আগে বলাকা সিনেমা হলের সামনে থেকে যে ভুল বাস ধরে ছিলাম , যে বাস পৌঁছে দিয়েছিলো ভুল কোন গন্তব্য। আজ আর ভুল করতে চাই না। আজিমপুর টু মিরপুরগামী সিটিং সার্ভিস হর্ন দেয় , আমি ফিরে চলি নিজ গন্তব্যে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। দুয়েক পা এগিয়ে তুমিও ভিজতে থাকো।ভিজতে থাকে কান্নার এ শহর!
মামা , হুড টা নামিয়ে দেন !
আমি মুখ কাচুমাচু করে তোমার পাশের সিটে বসে থাকি।আমার শরীরে অসুখ , বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে নিশ্চয় ঠান্ডা লাগবে। তারপর সর্দি আর খক খক কাশি। এই ঠান্ডা , সর্দি , কাশি নিয়ে আমার একটা ছড়া আছে।
“মুখ খিঁচিয়ে নাক উঁচিয়ে
দিচ্ছি হ্যাঁচচ্চো হাঁচি
একটু পরেই আসবে বোধহয়
খকর খকর কাশি!”
-- আরে , ভিজে যাবো তো !
-- ভেজার জন্যই হুড নামাতে বললাম।
-- জানোনা , আমার শরীরে অসুখ।
-- ওই অসুখ সেরে যাবে।
-- যদি না সারে ?
-- আরে , সারবে সারবে। আমি আজ ভিজবোই , দেখছো না আমি আজ নীল শাড়ী পরে এসেছি।
বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা তুমি ধরার চেষ্টা করছো। ছিটিয়ে দিচ্ছ আমার গায়ে। আমি আলোড়িত হয়। ইচ্ছে হচ্ছে ট্রাফিক সিগন্যালে লাল বাতি জ্বালিয়ে সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিই। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে দুজনে ভিজি। রাস্তার পাশের ফুল বিক্রেতা মেয়ে গুলো বাড়িয়ে দেবে বকুল ফুলের মালা। গন্ধ নিবো আর ভিজব , বকুল ফুলের মালা তুলে দেব তোমার খোঁপায়। আমার শরীরে অসুখ , সে অসুখ আজ সেরে যাবে।
আমি তোমার উচ্ছলতা উপভোগ করছি। উপভোগ করছি পুরো পরিবেশ। আসে পাশের মানুষের কপট কথাবার্তা আমার কানে আসছে না। শুধু আমাদের হৃদয়ের ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ টুকু , সুবাস ছড়ায় হৃদয় থেকে অন্য কারো হৃদয়ে।
ছবি : ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২৩