লকডাউনের এই মাস সময়ে আমার ছানাটা বড় হয়ে গেছে। জামা গুলো আটোসাটো লাগে। ছোট হয়ে নাভীর উপরে উঠে আসতে চায়। ন্যাপকিনের ফাঁক গলে 'নুনথুন পাখি' বের হয়ে আসে । ওর তাতে যায় আসে না, পা দুটো নাড়াতেই থাকে-- নাড়াতেই থাকে।
এই দুই মাসে অনেক কিছু শিখে ফেললো। বাবার সাথে একান্ত সময় কাটালো। এই নাগরিক ব্যস্ততায় এটা বিশেষ ভাগ্যের ব্যাপার । আব্বুর সাথে খেলতে খেলতে 'আগ্গু আগ্গু' বলে ডাকা শিখে ফেললো। হাগু করার আগে দুই পা উচু করে আগ্গু আগ্গু করা শিখে ফেললো। ওর কাছে আব্বুও 'আগ্গু' আবার হাগুও 'আগ্গু '। শিখেছে ঐ একটা শব্দই। ছোট তো!
আনমনে খেলে চলে। জানালার উপরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাদের সাথে যেন কথা বলে অনবরত। কল্পনার অদৃশ্য বন্ধুদের নিয়ে একটা হয়তো জগত তৈরি করেছে।
মাঝে মাঝে তাকায় , হাসে । কান্না পেলে ঠোঁট বাঁকা করে, ঠোঁট ফোলায়। আচ্ছা আমি কি ছোটবেলায় এমন করতাম? --আম্মাকে জিজ্ঞেস করলে আম্মা শুধু হাসে।
ওর মা ওর যাবতীয় কার্যবিধি চরম আগ্রহ নিয়ে ভিডিও করে রাখে। ক্যামেরা ধরলে আই কনট্রাক্ট করতে পারে। সেই সাথে বেড়ে যায় যাবতীয় কসরত । সব কিছু হয় ক্যামেরা বন্দী।
ও যেদিন বড় হবে ভিডিও গুলো দেখবে নিশ্চয়ই । কি করবে তখন ? আমি আর ওর মা, ভাবি আর হাসি। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের সময় তো এমন কোন অপশন ছিলনা । ইচ্ছা হলেই কিছু দৃশ্য সংরক্ষণ করা যেত না ইলেকট্রনিকস ব্রেন সেলে। চলমান একের পর এক দৃশ্যপট অরক্ষিত ভাবে কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে।
তবু কিছু কিছু দৃশ্যপট মানবিক ব্রেনসেল থেকে নিমিষেই দৃশ্যমান করা যায় ভীষণ শক্তিশালী মানবীয় কল্পনা শক্তির মাধ্যমে । এই যেমন-----
"আব্বার স্কুল থেকে আসার সময় হয়েছে । পড়ন্ত বিকেলের আলো নেমে এসেছে বাড়ির পাশের রাস্তায়। আমাকে কোলে নিয়ে দাদা তাকিয়ে আছেন । তাকিয়ে আছেন রাস্তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত । আমি দাদার কোলে 'আব্বু গো গো গো ' করে কাঁদতে থাকি। কমতে থাকে দিনের আলো। রাস্তার শেষ প্রান্তে এখনই কাঙ্খিত জন দৃশ্যমান হবে। আমরা অপেক্ষায় থাকি। আমি আব্বার অপেক্ষায় আর দাদা আমাকে কোলে নিয়ে ছেলের অপেক্ষায়। কি অদ্ভুত অপেক্ষা! কি প্রশান্তির অপেক্ষা! !"
স্বপ্নবাজ সৌরভ
১৮ই মে ২০২০
এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
ছবিঃ বাইসাইকেল থিফ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ২:১১