
শেষ পোষ্ট এসেছে ৯ টা ৩৫ মনিটে। দীর্ঘ সময়। এরপর আর পোষ্ট আসেনি। বেশ কয়েকজনকে অনলাইনে দেখলাম। সবাই কি ব্যস্ত? নাকি ছুটি শেষে ঢাকাতে ফেরেনি। দীর্ঘ সময় কোন পোষ্ট বিহীন সামু। দেখতে এবং ভাবতে খারাপ লাগে।
আমি নিজেও লেখার মত কিছু পাচ্ছি না। ভাবনার পরিসর যাদের ছোট তাদের এই সমস্যা হয়। চারিপাশে হাজার টপিক, হাজার সমস্যা । এইসব নিয়েই লিখে ফেলা যায়। কিন্তু আমার কোন ভাবেই হয়ে উঠে না। শরীরের মধ্যে কেমন কিরকির করে। দম বন্ধ হয়ে আসে। একটা সময় ছিলো, এমন পরিস্থিতিতে ফসফস সিগারেট টানতাম। দেখতে দেখতে দিনে আড়াই প্যাকেট ধোঁয়ার মত উড়িয়ে দিতাম। সিগারেট ছেড়েছি ৮ বছর হয়ে গেল। কিন্তু ইদানীং খুব খেতে ইচ্ছা হয়।
ঈদের পরে আজ বাইরে বের হয়েছিলাম। রাস্তা ঘাট ফাঁকা। 'স্বপ্ন'রা বাড়ি গেছে এখনো ফেরেনি। ফিরলে ঢাকা শহর 'দুঃস্বপ্ন' হবে। বাসায় ফিরবো। পাঁচ সাতটা সিএনজি দাঁড়ানো আছে। চালকদের আড্ডা চলছে। মোবাইলে লুডু খেলা চলছে । নিউমার্কেট এরিয়ায় কেউ যাবে না।
বললাম, রাস্তা তো ফাঁকা! একটানে চলে যাবেন।
কিন্তু কারোর মধ্যেই তেমন আগ্রহ পেলাম না। অন্য সময় এরা নাকি 'জমা'র টাকা তুলতে পারে না। জমার টাকা তোলার জন্য এরা ভাড়ার চেয়ে ১০০ বেশি দাবি করে। আমার মত এদের কষ্টে যাদের বুক ফেটে যায় তারা রাজি হয়ে যায়, অন্যেরা উপায় না দেখেই দিয়ে দেয়। এরা আবার দুপুরে গরুর গোশতো দিয়ে ভাত খায়। সে যাইহোক, এইবার কোরবানী ঈদে আমিও দুই পুটলি গরুর মাংস পেয়েছি। গত কোরবানীর পরে আর গরুর মাংস কেনা হয়নি।
গরুর মাংস আমার খুব পছন্দের। ইদানীং খাওয়া হয় না। খেলেই গা চুলকানো শুরু করে। চুলকালে আবার লাল হয়ে ফুলে যায়। তাই গরুর মাংস তেমন খাওয়া হয় না। খাসির মাংস দামে পোষায় না। মাংস বলতে দেড়শো টাকা দরের পোল্ট্রি।
আমি সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা কেজি গরুর মাংস কিনেছি। মেজচাচার সাথে পিকনিকের বাজার করতে গিয়েছিল ১৯৯৪ সালে। পারিবারিক পিকনিক। আয়োজন সামান্য। রুটি আর গরুর মাংস। রাতে খাওয়া। আমি বেশি খেতে পারিনি। ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল উপলক্ষ্যে পিকনিক ছিল। আমি খেলার টেনশনে খেতে পারিনি ঠিক মত।
সবচেয়ে মজা করে গরুর মাংস খেতাম কোরবানী ঈদে। মনে আছে, আগে আমরা গোশত/গোশ বলতাম। সেটা কিভাবে যেন মাংস হয়ে গেল। অনেক কোরবানীর মাংস জমা হতো। তখন ফ্রিজ ছিলো না তাই মাংস জাল দিয়ে সংরক্ষণ করতো। সেই জাল দেয়া মাংস মজা করে খেতাম। তাছাড়া অনেক মাংস রান্না হতো। সেই মাংস প্রতিদিন গরম করে খেতে খেতে পোড়া পোড়া আর কালো কালো হয়ে যেত। অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ বের হতো। মাংস শেষ হয়ে গেলে আমরা তেল তেল মসলা রুটির সাথে খেতাম।সেই স্বাদ ভোলার নয়! এখনকার জেনারেশন অবশ্য 'কালাভুনা' খায়।
আরেকটা জিনিস জাল দেয়া হতো। সেটা হচ্ছে চর্বি। জাল দিতে দিতে সেই চর্বি তেল হয়ে যেত। সেই তেল দিয়ে পরোটা বানাতো।
এখন আর কিছুই হয়না ।
ঈদের সকালে কালাইয়ের ডালের খিচুড়ি আর কলিজা-মাটিয়া-ফ্যাপসা ভুনা। কি আনন্দ নিয়েই না খেয়েছি। ঈদের নামাজ পড়ে এসে বড়দের সালাম। সালামী পাওয়ার সাথে সাথে বাজারে গিয়ে সবার আগে সাত টাকা দামের কাঁচের বোতলের মিরিন্ডা! আহ কি সেই ঈদ! কি সেই নির্দোষ আনন্দময় প্রতিযোগিতা।
অবশেষে ৩০০ টাকা দিয়ে একটা সিএনজি পেলাম। ফিরতি ভাড়া পাওয়া যাবে না বলে এই ভাড়া। ব্যাপারটা এমন যে ফিরতি ভাড়া ম্যানেজ করে দেয়ার দ্বায়িত্ব আমার । আমি ম্যানেজ করে দিলে ভাড়া ২০ টাকা হয়তো কম রাখতো।
ফাঁকা রাস্তায় সিএনজি ছুটে চলেছে গন্তব্যে। আমার ভাবনাও আজ সবুজ সংকেত জ্বেলে আটকাবে না। সন্ধ্যা নামছে। আরো একটা দিনের অবসান। অদ্ভুত বিষন্নতা। এই বিষন্নতা ছোটবেলাতেও গ্রাস করতো।
ছোটবেলায় মনে হতো পাঞ্জাবী খুললেই ঈদ শেষ হয়ে যাবে। পাঞ্জাবী পরে থেকেও দিনটাকে কোন ভাবেই আটকাতে পারতাম না। বিকালবেলা থেকে মনটা খারাপ হয়ে যেতো। সন্ধ্যা নামতো ভীষণ বিষন্নতায়।
আচ্ছা মরতে ইচ্ছা হয়না কেন? মৃত্যুকে ভয় পাই কেন?
এই যে যাদের সাথে এতো যোগাযোগ, যাদের সাথে কথা হচ্ছে, যাদের সাথে চলছি, যাদের কথা ভাবছি তাদের সাথে একদিন আর কোন ভাবেই দেখা হবে না। কোন কিছুই ভাবা হবে না।
বেহেশতে আল্লাহ সব দেবেন। আমি চাই আমার বেহেশতটা ইহকালের মতোই হোক। তবে শান্তিময় হোক। সন্ধ্যা নামুক ভীষণ বিষন্নতায়, সমস্যা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




