১.
অংকের স্যার বিরস মুখে ক্লাসে ঢুকলেন। তাঁর হাতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার খাতা । আমাদের ক্লাস এইটের 'ক' শাখার ৪৫ জন ছাত্র। সবার মধ্যেই উৎকণ্ঠা কাজ করছে। স্যার সবার রোল কল করে একে একে সবার হাতে পরীক্ষার খাতা দিতে লাগলেন। ৪৫ জন ছাত্রের মধ্যে ৩০ জনই ফেল করলো। আমি পেলাম ৪৩ ! ক্লাস ক্যাপ্টেনকে স্যার বেত আনতে বললেন। অন্যান্য সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন প্রবল উৎসাহে দৌড় দেয়। কিন্তু আজ চললো ধীর গতিতে। কারণ সে নিজেই পেয়েছে ৩৫। টেনে টুনে পাশ।
আমরা যারা কম মার্কস পেয়েছি তারা বেতের বাড়ি খাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিপছিপে একটা বেত নিয়ে মাথা নিচু করে হাজির হলো। আমার শিরদাঁড়ায় শীতল বাতাস বয়ে গেল।
না , স্যার সেদিন মারেননি। স্যার শুধু বললেন , "ক্লাস এইটের অংক কি খুব কঠিন ? আমি কি তোমাদের বোঝাতে পারছিনা ?"
আমরা কোন কথা বললাম না। সেদিন স্যার পুরো ক্লাস নেননি। কথা গুলো বলার কিছুক্ষন পরেই স্যার বের হয়ে যান। অন্যান্য সময় এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য ভীষণ আনন্দদায়ক হয়। কিন্তু সেইদিন ক্লাসে আমরা আর কোন কথায় বললাম না। অপরাধীর মত চুপচাপ বসে থাকলাম। পুরো ক্লাস স্তব্ধ !
২.
ফাইনাল পরীক্ষায় ৪৩ জন অঙ্কে পাশ করলো। সবচেয়ে কম নাম্বার নিয়ে যে পাশ করলো সে পেলো ৬৫। আমার মত অংকে 'অগামগা' ছাত্রও পেয়ে গেলো ৮২। মানে লেটার মার্কস !
না, স্যার সেদিন খাতা নিয়ে আসেননি। স্যার অসুস্থ ছিলেন। ভীষণ অসুস্থ। স্যারের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটাও আমাদের দেখা হলো না। স্যারকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অপারেশনের জন্য। তার কিছুদিন পরেই স্যার মারা যান। ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিলো উনার শরীরে।
৩.
স্যারের জানাজা হলো স্কুল প্রাঙ্গনে। সবাই হুহু করে কাঁদলো। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম আর ভীষণ অভিমান নিয়ে বাকি জীবনটি অঙ্কে টেনে টুনে পাশ করতে লাগলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:৫৫