somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বজলুল হুদা

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন অন্তর্ভুক্ত একটি শান্ত, পরিশিলিত গ্রাম "হাটবোয়ালিয়া"। সেই গ্রামে জন্ম হয়েছিলো এক ভয়ংকর খুনীর, নাম যার বজলুল হুদা। পিতা ছিলেন মরহুম ডাক্তার রিয়াজ। তার চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মেজর (অব.) বজলুল হুদা সেজ। বড় ভাই কামরুল হুদা ঢাকা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করেন। মেজ ভাই নাজমুল হুদা সাবেক সচিব। তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন। ছোট ভাই নুরুল হুদা ডিউক প্রভাতী ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। বড় বোন কোহিনুর বেগমের বিয়ে হয়েছে গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের সাবেক প্রধান শিক্ষক আকবর আলীর সাথে। ছোট বোন লিজা হুদা স্বামীর সাথে ঢাকাতে বসবাস করেন। মেজর (অব.) বজলুল হুদা নারায়ণগঞ্জে বিয়ে করেন। স্ত্রী নাফিজা বেগম ছোট মেয়ে আনিকা হুদাকে নিয়ে ঢাকায় পিতার বাসায় থাকেন। আর বড় মেয়ে হেলেন হুদা আমেরিকায় বসবাস করছেন।

মেজর (অব.) বজলুল হুদার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে রফিকুল হুদার ভাষ্যমতে, বজলুল হুদা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তান আর্মি থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি ক্যাপ্টেন ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে চাকরিতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে মেজর হন। তার পৈত্রিক নিবাস আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় হওয়া সত্বেও জন্মস্থান গাংনী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় মেহেরপুরের গাংনী এলাকায় তার আধিপত্য বিস্তার লাভ করে। তার রাজনীতি হয়ে পড়ে গাংনী কেন্দ্রিক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর মেজর (অব.) বজলুল হুদা আত্মগোপন করেন। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের এমপিরা পদত্যাগ করলে পার্লামেন্ট ভেঙে যায়। সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সাথে আঁতাত করে তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। শর্তানুযায়ী ১৯৮৮ সালে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে গাংনী আসনে এমপি নির্বাচিত করানো হয় মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে। এরশাদ সরকারের পতন পর্যন্ত তিনি ফ্রিডম পার্টির একমাত্র এমপি হিসেবে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা ও গাংনী এলাকায় শাসন শোষণ করেছেন।

১৯৮৮ সালে তার নির্বাচনী জনসভায় গাংনী বাসস্ট্যান্ড শহীদ রেজাউল চত্বরে কয়েক শ জনতার সামনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেছিলেন এদেশে শেখ মুজিব হত্যার বিচার সেই দিন হবে যেদিন আমার হাতের তালুতে লোম গজাবে। পাতানো নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বর্জন করে। মেজর (অব.) বজলুল হুদা গাংনী ও ঢাকার ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গাংনী আসনে তার প্রতিদ্বন্দী ছিলেন জাতীয় পার্টির জালাল উদ্দীন এবং কুষ্টিয়ার মিরপুরের আব্দুস সামাদ জাসদ (রব) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটাররা নির্বাচন বর্জন করলেও বামন্দী, রামনগর ও বাদিয়াপাড়া গ্রামের জনগণ ভোট কারচুপি প্রতিরোধ করেন। জনতার প্রতিরোধে ফ্রিডম পার্টির কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। এসময় পুলিশের হাতে একজন ফ্রিডমকর্মী অস্ত্রসহ ধরা পড়ে। ভোট গণনা না করেই সমঝোতার মাধ্যমে ঢাকার ওই আসনটি জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং গাংনী আসনে বজলুল হুদাকে এমপি ঘোষণা দেয়া হয়। নির্বাচনের পর ফ্রিডম পার্টি ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রমৈত্রী অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

শেষ পর্যন্ত বিচার হলো। মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলো, ফাঁসি কার্যকরও হলো। কিন্তু তার হাতের তালুতে লোম গজিয়েছিলো কিনা জানা যায়নি।



তার হাটবোয়ালিয়াস্থ পৈতৃক ভিটায় বলতে গেলে কেউই থাকে না। পুরাতন একটি ঘরের সামনে সাইনবোর্ড টানানো আছে "রিয়াজ ডাক্তার ফাউন্ডেশন" নামে। জরাজীর্ণ ভবনে একটি পরিবার ভাড়ায় থাকে। গতবছর যখন দেখতে যাই সেই ঘৃণ্য পশুর জন্মস্থান, ভাড়াটিয়া জানান, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এলাকার গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি দেয়ার সময় পরিবারের অনেকেই বাড়িতে আসেন। বাকি সময়ে পরিবারের কেউই বাড়িতে থাকেন না।এলাকার সাধারণ মানুষ মেজর হুদা এবং তাদের পরিবার সম্পর্কে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

লাশ দাফন করতে দিচ্ছেনা স্থানীয় জনগনঃ মাত্র কথা হলো বাড়িতে। আম্মু (দৈনিক সংবাদের জেলা রিপোর্টার ছিলেন ১০ বছর) জানালেন, বজলুল হুদার লাশ দাফন করতে দেয়া হচ্ছেনা হাটবোয়ালিয়া গ্রামে। স্থানীয় জনগনের ভাষ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনির লাশ এ এলাকায় দাফন করলে এলাকা কলঙ্কিত হবে। নরপশু ঘাতক খুনির লাশ বোয়ালিয়াবাসী কখনও এ এলাকায় দাফন করতে দেবে না। তবে পুলিসহ ও RAB পাহারায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় লাশ দাফনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানেও চলছে চরম প্রতিরোধ। জনগন বলছে, জাতির শত্রুর লাশ গাংনী এলাকায় দাফনের কোনো রকম সুযোগ দেয়া হবে না।

দীর্ঘদিন পর রায় কার্যকর হওয়ার শেষ প্রান্তে এসে বজলুল হুদার ফ্রিডম পার্টি সম্পর্কে গাংনী আবারও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৩:২৬
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×