এ পর্যন্ত শুধুমাত্র শারীরিক যৌন হয়রানীর কথা গুলো আমরা শুনেছি, তবে অফিস এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে, নারীরা প্রতিনিয়ত যেই মানুষিক যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন, সেটাও কিন্তু সহনীয় নয়। দেহের আকৃতি, চলা ফেরা, পোশাক নিয়ে, এমনকি প্রোমোশন নিয়ে যেই কটূক্তি গুলো নারীরা শুনে থাকেন, সেই কথা গুলোর জন্য #me_too হতে পারে একটি প্ল্যাটফর্ম। সমাজে এমনও কিছু মানুষ দেখেছি, যারা নারীর যেকোনো অর্জনের পেছনে, তার যোগ্যতার স্বীকৃতি না দিয়ে, আকার-আকৃতি এবং রূপ সৌন্দর্যকেই প্রধান কারণ মনে করেন, যেটা এক প্রকারের এবিউস।
#me_too এর ক্ষেত্রে পুরুষেরা অনেক সরব না হলেও, নীরবও কিন্তু নন। এবং অবশ্যই এই ক্ষেত্রে পুরুষের অনেক বড় একটি ভূমিকা আছে। পুরুষদের মাঝে যদি সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, তবে হয়তো একটা সময় #me_too আর প্রয়োজনই হবে না। আপনার পাঁশে থাকা নারীটির জীবনে যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, অন্তত তার হাতের উপর হাত রাখার সাহস অর্জন করুণ। পুরুষত্ব শুধু বিশেষ কোন অঙ্গে নয়, আপনার মানোসিকতা, মনুষ্যত্ব এবং দৃঢ় মনোবলও আপনার পুরুষত্বের পরিচেয়।
‘এমন জামা কাপড় পইরা হাটলে এমন তো হবেই’ আপনি যদি এই গোত্রের হওয়ে থাকেন, তবে একটু চিন্তা করে দেখুন, আপনার সামনে কেউ যদি বিষ খায়, আপনিও কি বিষ খাবেন? আমি যদি ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বলি, পর্দার বিধান কিন্তু মানুষের উপর আরোপ করা হয়েছে, মানুষ বলতে নারী-পুরুষ উভয়ই। নারীর জন্য শারীরিক পর্দা এবং পুরুষের জন্য চোখের পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে, তাই বেপর্দা নারীর কি কি শাস্তি হবে সেটা জানার পাশাপাশি, চোখের পর্দা না করলে কি কি শাস্তি হবে সেটাও একটু জেনে নিবেন।
ইউসুফ (আঃ)-এর গল্পটি আমরা মোটামটি সবাই জানি, তৎকালীন আজিজে মিসরের সুন্দরী স্ত্রী বানু জুলেখা যখন ইউসুফ (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলেন, তিনি তার সর্ব শক্তি দিয়ে, নিজের সম্মান বাঁচানোর স্বার্থে পালানর চেষ্টা করেছিলেন। এবং এই ঘটনা চক্রে, ইউসুফ (আঃ)-কে কারাগারে অসহনীয় শাস্তিও পোহাতে হয়েছিল। তাই, ‘নষ্টা’, ‘এঁটো’, ‘পিওর না’, ‘ইউজড’, ‘অসতী’, এই ভাষা গুলো কিন্তু শুধু নারীর জন্যই প্রযোজ্য নয়, পুরুষের জন্যও বৈকি। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই ধরণের ভাষা কোন মানুষের জন্যই প্রযোজ্য নয়।
এবার আসি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে। একবার এক ছেলে বাচ্চাকে অর্ধ উলঙ্গ (গেঞ্জি আছে, প্যান্ট নাই) দেখে, বাচ্চার মা কে একজন বলেছিলেন, ‘এই বাচ্চাকে প্যান্ট পরাও না কেন?’। বাচ্চার মা উত্তরে বলেছিলেন, ‘তাতে কি হইসে, ছেলে তো’। আমাদের সমাজে চিরাচরিত একটি ধারণা হচ্ছে, ছেলে সন্তান মানেই সে যৌন হয়রানীর ঊর্ধ্বে। আমির খানের, ‘সাত্তিয়ামেভ জায়েতে’ অনুষ্ঠানটির সাথে নিশ্চয়ই অনেকে পরিচিতি, এই অনুষ্ঠানটির একটি পর্ব ছিলো চাইল্ড এবিউস নিয়ে, যেখানে বলা হয়, মেয়ে শিশুর পাশাপাশি, ছেলে শিশুরাও কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে যৌন হয়রানীর শিকার হয়, তফাৎ হচ্ছে ছেলেদেরটা রিপোর্ট করা হয় কম এবং অনেক অংশেই সন্তানের অভিভাবক ধারণাই করতে পাড়েন না যে, তার ছেলে সন্তানটিও যৌন হয়রানীর শিকার হতে পারে। আমাদের সমাজে নারীর পাশাপাশি অনেক পুরুষকেও খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা শৈশবে কোন না কোন ভাবে যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন। তাই #me_too শুধুমাত্র নারীদের প্ল্যাটফর্ম না হওয়ে পুরুষদের প্ল্যাটফর্মও হতে পারে, যা কি না ছেলে সন্তানের প্রতি অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে।
পরিশেষে এতটুকুই বলতে চাই, #me_too এর মাধ্যমে, যারা এই পর্যন্ত অপরাধীদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন, তাদের কাছে এই সমাজের কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, কারণ মুখোশ খুলে যাওয়ার ভয়ে, আগামীতে হয়তো আমি, আমার সন্তান এবং আমার আপনজনদের প্রতি কেউ ছোবল বসাতে পিচপা হবে।
#me_too –এর মাধ্যমে যেই সম্মানিত এবং ‘পূজনীয়’ মানুষ গুলো আজ বিতর্কিত, তাদের প্রত্যেকের অশালীন আচরণ গুলো পরে মনে হয়েছে; দোষ গুণের সমন্বয়য়ে মানুষ, তবে সমাজে কোন ব্যক্তিকে সম্মানিত এবং ‘পূজনীয়’ করার আগে আমাদের একটু চিন্তা করে দেখা উচিত, তিনি কি সাধারণ দোষ গুণের বিচারে একটি মানুষ নাকি মনুষ্যত্বহীন একটি অমানুষ?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৭