somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রায়বেত ভার্সিটির ভাইভা!চ্রম মজা পাইলাম! =p~ =p~ =p~

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার মতো পাবলিক আমি নই। অতএব, প্রাইভেটই ভরসা। জিপিএ ভালো হওয়ায় ভাইভা নামক আনুষ্ঠানিকতার পরই ভর্তি হয়ে যাব। পরীক্ষা দিতে হবে না। আমি মহা আনন্দে ভাইভা দিতে এসেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চায়। এ জন্য বিভিন্ন স্থানে তাদের ক্যাম্পাস রয়েছে। ফরম কেনার সময় আমাকে বলা হয়েছিল, ‘কোন ক্যাম্পাসে ভর্তি হবেন? ধানমন্ডি নাকি সিদ্ধেশ্বরী?’ আমি বলেছিলাম, ‘দেখুন, আমরা ১০-১২ জন মিরপুরবাসী আছি। খুঁজলে আরও কয়েকজন পাওয়া যাবে। মিরপুরে একটা ক্যম্পাস করা যায় না?’ ভদ্রলোক বললেন, ‘ফান করছেন?’
—ফান করব কেন? ফান করার জন্য ফান ম্যাগাজিন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ফান করার জায়গা না।
ভেবেছিলাম প্রাইভেট জিনিস, নিয়মকানুন খুব কড়া। তেমন কিছু চোখে পড়ল না। ১০টায় পরীক্ষা, এখন বাজছে ১০টা ৩৩। কয়েকজন সাধারণ জ্ঞানের বই ভাঁজছে। এক ছেলে প্রবেশপত্রের ছবির দিকে তাকিয়ে দেখছে ছবিটা আসলেই তার নিজের কি না। :-*আমি চুপচাপ বসে আছি। পাশের মেয়েটি হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, আমাকে দেখে কি খুব নার্ভাস মনে হচ্ছে?’ তাকিয়ে দেখলাম ভাইভা উপলক্ষে তিনি বিশেষ মেকআপ নিয়েছেন। তাকে দেখতে অদ্ভুত লাগলেও নার্ভাস মনে হচ্ছে না:D। আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম, ‘অবশ্যই। আপনাকে দেখে যে কেউ ভাববে একটু পরই আপনার ফাঁসি! কোন সাবজেক্টে পরীক্ষা দেবেন?’ মেয়েটা আমার কথা শুনেই নার্ভাস হয়ে বলল, ‘ল।’
—ল-এর প্রশ্ন কিন্তু খুব কঠিন হয়। সংবিধান, বিচার বিভাগ এসব নিয়ে টান দিতে পারে।
—সংবিধান তো পড়িনি।
—প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, এঁদের নাম জানেন?
—না, একজন জেনারেলের নাম জানি, আতাউল গনি ওসমানী।:P:P
—তাহলে তো নার্ভাস না হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।
—আমি কী করব?
—জীবনে যত দোয়া শিখেছেন টানা পড়া শুরু করেন।
এই সময় দরজা ঠেলে এক মহিলা রুমে ঢুকেই মোটা গলায় বললেন, ‘প্রবেশপত্র, মার্কশিটসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঙ্গে থাকা বাধ্যতামূলক। আর ভাইভা বোর্ডে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি থাকবেন। তাঁদের সঙ্গে ভদ্রভাবে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবেন, সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকবেন, বসতে না বললে বসবেন না।’
বাহ! ভাইভায় কেমন আচরণ করতে হবে তাও বলে দিচ্ছে। আশা করি, এরপর প্রশ্নও বলে দেবে। আমি নড়েচড়ে বসলাম। মহিলা বললেন, ‘আপনাদের ইংরেজিতে উত্তর দিতে হবে। অবশ্যই ফরমাল ড্রেসে ভেতরে ঢুকবেন। স্মার্টনেস একটা বড় ব্যাপার। স্মার্টলি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।’ তাঁর কথা শেষ হতেই কয়েকজন শার্ট ইন করা শুরু করল। কাণ্ড দেখে আমি হেসে ফেললাম। মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি এই ড্রেসে কেন?’
আমি সাধারণ শার্ট-প্যান্ট পরে আছি। সমস্যাটা বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম,
—এই ড্রেসে সমস্যা কোথায়?
—আপনি শার্ট ইন না করে ভাইভা দিতে এসেছেন? আমাদের ইউনিভার্সিটির রুলস জানেন না?
—এখনো তো ভর্তি হইনি। রুলস জানব কী করে? তা ছাড়া ফরমের সঙ্গে দেওয়া নির্দেশাবলি আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। শার্ট ইন না করে ভাইভা দেওয়া যাবে না—এমন কথা কোথাও লেখা নেই।
—সব জায়গায় ভাইভা দিতে গেলে ফরমাল ড্রেস পরে যেতে হয়। এই নরমাল রুলসটা জানেন না? বেশি স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন না।
—আপনিই বললেন স্মার্টলি উত্তর দিতে। এখন বলছেন স্মার্ট হওয়া যাবে না। আমি যাব কই?
—আপাতত ওয়াশরুমে যান। শার্ট ইন করে আসুন।
—ম্যাডাম, ইন করা যাবে না। ভুলে ছোট ভাইয়ের শার্ট পরে এসেছি। সাইজে ছোটB-)
—আপনি ইন করে আসুন।
—দেখেন, আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি, ফ্যাশন শো করতে আসিনি। পরীক্ষার সঙ্গে পোশাকের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা না। আপনি সাদি সাহেবের গল্পটা জানেন না?
—সাদি সাহেবটা কে?
—শেখ সাদি। বিশিষ্ট দার্শনিক। উনি বলেছেন, পোশাক বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে যোগ্যতা। গল্পটা হলো, একদিন সাদি সাহেব...
—স্টপ। ওয়াশরুমে যান।
আমি সুন্দর করে হেসে বললাম, ম্যাডাম, ইন করব না।
তিনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। মহিলার সঙ্গে তর্কযুদ্ধ করায় আমি বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেলাম। পেছন থেকে এক ছেলে বলল, ‘শাবাশ। ভালো টাইট দিয়েছ। কিন্তু যদি তোমার ভাইভা না নেয়?’
—দূর। ভাইভা নেওয়ার জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আছেন। তাঁরা পোশাক নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করবেন না।
—শুক্রবার দেখে পাঞ্জাবি পরে এসেছি। পাঞ্জাবিও কি ইন করতে হবে? জিজ্ঞেস করলে কী বলব?
—বলবা, জাতীয় পোশাক পরে এসেছি। জাতীয় জিনিসের ভাবই আলাদা।:P:-*
একটু পর ভাইভা বোর্ডে আমার ডাক পড়ল। আমি সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে বিদায় নিলাম। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কক্ষে ভাইভা হবে। দরজাটা সামান্য ফাঁক করে মধুমাখা কণ্ঠে বললাম, ‘স্যার, আসব?’ পরিচিত একটা কণ্ঠ বলে উঠল, ‘আসুন।’ ভেতরে ঢুকে দেখি আমার তর্কযুদ্ধের সহযোদ্ধা, সেই মহিলা ডিনের পাশের চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে ডিন বললেন, ‘এই সেই ছেলে?’ মহিলা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে ফিসফিস করে কি যেন বললেন। ডিন আমাকে বসতে বললেন। এরপর শুরু হলো পোশাকসংক্রান্ত প্রশ্ন। মনে হলো আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং সাবজেক্টে ভর্তি হচ্ছি। সার্টিফিকেট, মার্কশিট কোনো কাজেই এল না। আমি ভাইভায় বাদ পড়ে গেলাম। বের হয়ে মনে মনে বললাম, শেখ সাদি সাহেব, দেখে যান। যোগ্যতা কোনো ব্যাপারই না, পোশাকই আসল জিনিস।

রসালো থেকে নেয়া!!
৩১টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×