কলিংবেল টিপতেই একজন ভদ্র লোক দরজা খুলে দিলেন। আমি প্রথমে বললাম - নমস্কার।
- নমস্কার।
আমি একজন সাংবাদিক। এই পরিবারের সদস্যদের সাথে ক্ষানিকক্ষণ আলাপচারিতায় সময় কাটাতে চাই। যা আমাদের ইলেট্রনিক পত্রিকায় ছাপা হবে।
- জ্বি, আচ্ছা । আসুন। এ আমার ছেলে - রবি সঙ্কর।
পাশে দাড়ানো একজন কিশোরের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন গৃহকর্তা।
- খুব খুশি হলাম। আচ্ছা , রবি সঙ্কর, বলোতো তোমার বয়স কতো ?
- তেত্রিশ।
- তেত্রিশ! কিন্তু, তোমাকে সরি, আপনাকে দেখলেতো এতো বয়সের মনে হয় না।
- আমি আবৃত্তি করি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যাযের ‘ কেউ কথা রাখেনি’ কবিতাটা আমার খুবই প্রিয়। এ বলেই সে আবৃত্তি করতে শুরু করলোঃ
‘‘ কেউ কথা রাখেনি
তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি।
ছেলে বেলা এক বোষ্টমী হঠাৎ তার আগমনী গান বন্ধ করে
বলেছিলো শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে।
তারপর, কতো চন্দ্রভূক আর অমাবশ্যা গেলো
সেই বোষ্টমী আর এলোনা।
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . ..
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বুকের তলে সুগন্ধী রুমাল রেখে বরুনা বলেছিলো,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
এমনি আতরের গন্ধ আমারও বুকে পাবে।
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় নিয়েছি প্রাণ;
দুরন্ত যাড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন কওে খুঁজে এনেছি
একশ’ আটটি নীল-পদ্ম।
. . . . . . . . . . .
- ও, বুঝেছি। যতোদিন তুমি, সরি, আপনি এ কবিতা আবৃত্তি করবেন, ততদিন আপনি এ কিশোর বয়সেও তেত্রিশ বছরের পড়ন্ত যুবক থাকবেন, ধন্যবাদ।
এই বলে গৃহকর্তার দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে কিছু নেবেন না, আপনার বয়স কতো?
- আমার বয়স ? আঠারো। আসলে মানুষের বয়স দেহে নয়, বয়স হলো মনের। আমি মনের দিক থেকে সব সময় আমি কবি শুকান্ত- এর ‘আঠারো বছর বয়স’ এর কবিতার মতো । এই বলে তিনিও ছেলের ন্যায় আবৃত্তি করা শুরু করলেনঃ
আঠারো বছর বয়স কী দূঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি;
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দূঃসাহসেরা দেয় যে উকি।
আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়,
পদাঘাতে চায় ভাঙ্গতে পথের বাঁধা;
এ বয়সে কেই মাথা নোয়াবার নয়;
আঠারো বছর বয়স জানেনা কাঁদা।
এ বয়স জানে রক্ত দানের পূণ্য
বাষ্পের বেগে ষ্টীমারের মতো চলে;
প্রাণ দেয়া-নেয়ার ঝুলিটা থাকেনা শুন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।
. . . . . . . . .. . . . . . . . . .
- বেশ, বেশ। আপনার বযস আজীবন আঠারো থাকুক আমরা কামনা করি।
এমন সময় একটি মেয়ে পাশের কক্ষ হতে এলো। আমি তাকে ডেকে বললাম- আচ্ছা বলোতো খুকি, তোমার বয়স কতো?
- আমার বয়স আশি বছর।
এ কথা শুনে আমার চক্ষু চড়ক গাছ, মাথা এলোমেলো। তবুও মনের ভিতর সাহস সঞ্চয় করে বললাম, আশি বছর !
- জ্বী, মা আমাকে ‘বুড়ি’ বলে ডাকেন, বাবাও। আশি বছর না হলে কি কোন মেয়ে মানূয বুড়ি হতে পারে?
- তা ঠিক, তা ঠিক। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিতে উঠছি, এমন সময় গৃহকর্তৃ এক থালা জল-খাবার নিয়ে এলো। আমি খেতে খেতে এ কথা ও কথা বলতে বলতে গৃহকর্তৃকে প্রশ্ন করলাম - আচ্ছা, আপনার বয়স কতো?
- নয়।
- নয় !
- জ্বী, আমি কোন কাজ করলেই রবি শঙ্করের বাবা বলেন – যার হয় না ‘নয়’ বছরে, তার হয়না নব্বইতে। তুমি একজন নয় বছরের খুকির মতো কাজ করেছো। তাই আমি সব সময় আমাকে নয় বছরেরর বয়সেরই ভাবি। এতেই শান্তি।
বিরাট অশান্তি নিয়ে আমি ফিরে এসে ঘটনাটা তুলে দিলাম সামুর পোষ্ঠে। কেমন করলাম?
( বিঃদ্রঃ কবিতা দু'টি অনেক আগের মুখস্ত থেকে লেখা। বিন্যাসে এবং বানানে ভুল হতে পারে। ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৫