somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন"

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক.
মেয়েটার নাম অস্তিত্ব। বয়স ৯ বছর। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই সে তার বাবামাকে ঝগড়া করতে দেখে আসছে। এমন দিন খুব কমই আছে তারা ঝগড়া করে না। একজন আরেক জনকে সহ্যই করতে পারে না। ছোট তুচ্ছ বিষয় নিয়েও চলে তুমুল ঝগড়া। বাবা মা যখন ঝগড়া করে তখন অস্তিত্বর খুব কষ্ট লাগে। তখন সে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কান্না করে। তার ধারনা বাবা মা দুজন দুজনকে অপছন্দ করলেও শুধু তার কারনেই এক সাথে থাকছে। মাঝে মাঝে তার মরে যেতে ইচ্ছা করে! অস্তির এক বান্ধবী লুবনার কাছে শুনেছিল হারপিক খেলে নাকি মানুষ মারা যায়। তাই আগে যখন সে হারপিকের বোতলের দিকে তাকাত তখন তার কেমন জানি ভয় ভয় করত, কিন্তু এখন আর তার তেমন ভয় করে না!

দুই.
বাসা থেকে স্কুলটা দুরেই। গ্রামের রাস্তায় কোনো গাড়িও চলে না। মাঝে মাঝে নিরিবিলি রাস্তাতে একা একা স্কুলে যেতে আসতে সাথীর ভয় করে। সামনে তার জেএসসি পরীক্ষা। ক্লাস-কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। রাস্তায় এলাকার বকাঠে ছেলেরা খুব বিরক্ত করে। ওকে দেখলেই ওরা শিস দেয়, রাস্তা আগলে দাঁড়ায়, আজেবাজে কথা বলে। সাথীর চোখে পানি চলে আসে। বাড়ি ফিরে মাকে বলে আর শুধু কাঁদে! মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে সে যে পাপ করেছে, একদিন আত্মহত্যা করে তার প্রায়শ্চিত্ত করবে! আচ্ছা সে মরে গেলে কি তার মা খুব কষ্ট পাবে?

তিন.
শিপলু ঠিক করে রেখেছে একদিন সে রেললাইনে শুয়ে থাকবে, ট্রেন এসে তার উপর দিয়ে চলে যাবে! ছোট বেলায় তার বাবা-মা প্রায়ই বলতেন যে, শিপলুকে নাকি তারা হাসপাতালের বারান্দায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন! কথাটা শুনে সে কান্না শুরু করে দিত। তখন বাবা-মা খুব হাসাহাসি করতেন। ওর কান্না দেখে মা বলতেন যে, তারা মজা করেছেন! আশ্বস্ত হয়ে সে তখন চোখ মুছে ফেলত।
এই তো কয়েকদিন আগে ক্লাস সেভেনের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হল। সে শেষ পরীক্ষাটা না দিয়ে বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতে গিয়েছিল। এই খবরটা তার বাবার কান পর্যন্ত পৌছুতে সময় লাগে নি। সন্ধ্যা বেলা বাসায় ফেরার পর তার বাবা তাকে বেদম পিটিয়েছিলেন। তার বাবার প্রচন্ড রাগ। রাগের সময় অনেক বকুনিও দেন। বাবার কাছে মার আর বকুনি খেতে খেতে তার অভ্যাস হয়ে গেছে! কিন্তু সমস্যা হল, সেদিন বকুনি দেওয়ার সময় তার বাবা তাকে কয়েকবার 'শালা' বলে গালি দিয়েছেন! তখন থেকেই শিপলুর ধারনা সে আসলেই তার বাবামায়ের সন্তান না! তাকে তারা সত্যি সত্যি কুঁড়িয়েই পেয়েছেন। সন্তানকে বাবা কখনই 'শালা' বলতে পারেন না। আর ঠিক সেই দিন থেকেই তার মনোজগৎ উল্টা-পাল্টা হয়ে গেল।

বিঃ দ্রঃ শেষ কাহিনীটার মত ঠিক এমন একটা ঘটনা পত্রিকায় পড়ার পর পরিচিত একজন আমার সাথে এমন কিছু শেয়ার করেছিল। আর 'কুড়িয়ে পাওয়া কাহিনী' শুনে শুনে মন খারাপ করা এমন এক পিচ্চির খাতাতে তার নিজের কিছু লেখা পড়ে খুব অবাক হয়েছিলাম! এত অল্প বয়সে তার মনোজগৎ এর কত বড় পরিবর্তন হয়েছে দেখে শিউরে উঠেছিলাম!
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×