somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ বন্দিত্ব

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বারান্দাটা এতো ছোট তার উপর এক পা ভাঙ্গা একটা চেয়ার রাখাতে একজনের বেশি দাঁড়ানো যায় না। চেয়ারটাতে বাবার অনেক স্মৃতি। বাবা মারা যাওয়ার পর এই চেয়ারটার উপর খুব মায়া পড়ে গেছে। তিনতলায় ছোট্ট ছোট্ট দুইটা ঘর, আসবাব পত্র দিয়ে ভর্তি। চেয়ারটা রাখার মত জায়গা নেই, তাই মিতু ওটাকে বারান্দায় রেখেছে। জোছনার আলোতে মিতু তার ছোট্ট বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করছে আজ জোছনার আলো তাকে গ্রাস করতে পারছে না। ঘরে অসুস্থ মা, তাঁর ওষুধ শেষ।
পরশু ছোট ভাইটার কলেজে টাকা জমা দিতে হবে, সামনে রোজা-ঈদ ছোট বোনের জামা কাপড়, গত মাসে মাকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হওয়ায় বাসা ভাড়াটা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বাড়িওয়ালা চাচা নিতান্ত ভদ্র মানুষ আর মিতুদের অবস্থা জানেন জন্য এখনো কিছু বলেননি। কিন্তু আর কত দিন?

পরিচিত প্রায় সবার কাছে হাত পাতা শেষ। কিন্তু কোনো আশার আলো নেই। মিতু সে দিন অফিসের মতিউর সাহেবকে বলছিল কিছু টাকার কথা। পান খাওয়া কুচ্ছিত দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললেন,
"বসের সুন্দরী পিএসের টাকা লাগবে তো আমার কাছে ক্যান? বসকে বলেন, সব সমস্যা সমাধান করে দেবেন! আরে আপনার টাকার জন্য এত চিন্তা করতে হয়? আপনিই তো আমাদের টাকা দেবেন! হা হা হা!"
রাগে অপমানে মিতুর মরে যেতে ইচ্ছা করছিল। আচ্ছা, মানুষ এত নির্লজ্জ হয় কেমন করে?
নাদিম চৌধুরী, মিতুর বস। মধ্য বয়স্ক, ধূর্ত মানুষ। নজর খারাপ। মিতু এই ব্যাপারটা খুব ভাল করে খেয়াল করেছে। মেয়েরা কোনো ছেলে চোখের চাহুনি দেখলেই অনেক কিছু বুঝতে পারে। কিন্তু সে নিরুপায়, অনেক কষ্টে এই চাকরীটা জোগাড় হয়েছে, ছেড়ে দিলে পুরা পরিবার পথে বসে যাবে।

গত তিন দিন থেকে মিতুর কাছে একটা এটিএম কার্ড। ইচ্ছা করলেই সে টাকা তুলে খরচ করতে পারে, যত ইচ্ছা! অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে কে জানে! তবে তার ধারনা সে ৭ দিনেও এই টাকা খরচ করে শেষ করতে পারবে না! অনেকটা নিরুপায় হয়ে নির্লজ্জের মত সে তার বসকে তার সমস্যার কথা গুলো বলেছিল। কথা গুলো শুনে নাদিম সাহেব একটা ক্রেডিট কার্ড বের করে মিতুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা নিয়ে যাও, খরচ করো... সব সমস্যার সমাধান করো। টাকা নিয়ে চিন্তা করবা না। আরও লাগলে আমাকে বলবা!

কিন্তু মিতু একটি টাকাও খরচ করতে পারেনি। সে ভেবেছিল কার্ডটা বসকে ফেরত দিয়ে দেবে, কিন্তু তিনি যদি কিছু মনে করেন। আজকে নাদিম সাহেব মিতুকে ডেকে বললেন,
"কার্ডে আরও কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে, কাল অফিসে আসার দরকার নাই, কোনো একটা ভালো শপিং মলে গিয়ে ভালো কিছু ড্রেস আর যা যা লাগে কিনে নেবে। ইচ্ছা মত শপিং কবে বুঝছো! টাকার চিন্তা করবা না..."
-কিন্তু স্যার......
-শোন, আগামী পরশু বিজনেস ট্যুরে আমি চিটাগাং যাচ্ছি। তুমিও আমার সাথে যাচ্ছো। কাজ শেষে কয়েক দিন কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসা যাবে। ছুটি কাটানোর জন্য ওয়েদারটাও অনেক ভালো! কি বলো?

মিতু কিছুই বলতে পারেনি। সারাটা পথ সে কাদতে কাঁদতে বাসায় এসেছে! চাকরীটা হয়ত ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু চাকরী ছাড়লে মায়ের ওষুধ, ছোট ভাই-বোন দুইটার লেখা পড়ার কি হবে? বাসাটা ছেড়ে দিয়ে পথে নামতে হবে হয়ত। নাহ্‌ মিতু আর চিন্তা করতে পারছে না! পৃথিবীটা অসহ্য লাগছে। জোছনার নীল আলোতেও মিতুর চারেদিকে অন্ধকার।

মিতুর হঠাৎ জানতে ইচ্ছা করল, আচ্ছা পূর্ণিমাটা কবে? পরশু? নাকি তার পরের দিন? পর দিন হলে ভাল হতো! ভরা পূর্ণিমায় সমুদ্র পাড়ে বসে জোছনা দেখার ইচ্ছাটা তার অনেক দিনের। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর ঐ নীল জোছনা খেয়াল করল কি না জানি না, মিতুর গাল বেয়ে এক রাশ কষ্ট নেমে গেল! মিতুদের মত বিত্তহীনদের জীবন সব সময় এমন বৃত্তে বন্দি; বন্দিত্বের পরিধিটা অসীম!
"বন্দিত্ব"
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×