তৃতীয় নাম্বার গোল্ডলিফ
সিগারেটের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে
নির্বিকার ভাবে টানছে আর
ধোঁয়ার গোলক বানাচ্ছে নয়ন।
সেটেনশনে থাকলে এরকম করে। আজ
একটি টেনশন খুব ভালোভাবেই পেয়ে
বসেছে তাকে। যদিও এই টেনশন
মোটামুটি প্রায় সব মানুষেরই থাকে
তা হল টাকার টেনশন। এরকম টেনশন
তাকে আগে কখনো ছুঁতে পারেনি।
কারন বাড়িথেকে যা টাকা আসতো
তা দিয়ে ভালভাবেই চলে যেত
তার।মাস ছয়েক আগের কথা, আদ্রিতা
নামে একটি মেয়ের সাথে তার
পরিচয় হয় ফেইসবুকে। আদ্রিতা একটি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন
ডিজাইনিং এ পড়ে আর নয়ন পড়ে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি
কলেজে। তারপর লাইক, কমেন্টস, ফটো
শেয়ারিং, চ্যাট এসব দিয়েই বাড়তে
থাকে তাদের ঘনিষ্ঠতা। একটা সময়
নয়ন বুঝতে পারে সে আদ্রিতার
প্রেমে পড়েছে। প্রপোজ করার
পরদুইদিন ঘুরিয়ে আদ্রিতাও নয়নের
প্রেমে সারা দেয়। তারপর তো যা হয়
আর কি !!! কফিশপ থেকে শুরু করে
লিটনের ফ্ল্যাট পর্যন্ত তাদের ঘন ঘন
পায়ের ছাপ পড়তে থাকে।কিন্তু আজ
নয়নের একটু বেশি টেনশন হচ্ছেকারণ
এতোদিন যা গিয়েছে তা তার
সাধ্যের মধ্যেই ছিলো কিন্তু গতকাল
আদ্রিতা বলেছে তার বার্থডেতে
নয়ন যেন তাকে হীরের দুল গিফট করে।
তার এক বান্ধবীকে ওর বয়ফ্রেন্ড
দিয়েছে তাই তারও লাগবে। কিন্তু
নয়নের কাছে এই মুহুর্তে এতোটাকা
নেই। নয়নদের আর্থিক অবস্থা
নিম্নমধ্যবিত্তের মতই। তার বাবা মা
গ্রামে থাকে।আর কোন উপায় না
দেখে নয়ন তার বাড়িতে ফোন করে।
আর বলে যে কলেজ, প্রাইভেট এর
বেতন, সেশন ফী আর হেনতেন
মিলিয়ে তিনদিনের মধ্যেই তার
১০০০০টাকার প্রয়োজন। পরের দিন নয়ন
সকালের ট্রেনে গ্রামের বাড়ি চলে
যায়, ফিরে আসে একদিন পরই। এসেই
সে খুব ফুরফুরে মনে আদ্রিতারজন্য সেই
হীরের দুল কিনতে যায়। পছন্দ মতো দুল
কিনে ফেরার সময় ট্রাফিক
সিগন্যালে তার রিকশাটা দাড়ায়,
এমন সময় পাশের একটি হুড তোলা
রিকশা থেকে সে একটি মেয়ের গলা
শুনতে পায়, সাথে একটি ছেলের কন্ঠ।
সে বিশ্বাস করতে চাইছেনা, তবু কেন
জানি তার মনে হচ্ছে এটা
আদ্রিতারই গলা। সে আদ্রিতাকে
ফোন দেয় আর সাথে সাথেই পাশের
রিকশায় বেজে উঠে সেই চিরচেনা
রিংটোন। আদ্রিতা ফোন কেটে
দিচ্ছে নয়নের কিন্তু তবুও নয়ন কেন
জানিবার বার ফোন করছে। তারপর
নয়ন একটু উকি দিয়ে যা দেখলো
তাতে তার চোখ অন্ধকার হয়ে এলো।
সে যাকে পাগলের মতো
ভালোবাসে যার জন্য সে মিথ্যে
বলে বাবা মাকে ঠকিয়ে টাকা
এনে হীরে কিনেছে আজ তার বুকে
অন্যকারো হাত খেলা করছে। এসব
ভাবতে ভাবতে ততক্ষণে রিকশা
সিগন্যাল কেটে বেড়িয়ে গেছে।
রিকশা থেকে নেমে সে কিছু
ভাবতে পারছে না, তার চোখ
জোড়া নোনা জলের স্রোত ধরে
রাখতে পারছে না। হাতে হীরের দুল
দুটিকে সে রাস্তায় ছুড়েমারলো।
তারপর রুমে গিয়ে অনেক কেঁদেছে
নয়ন। রাতে একফোটা ঘুম আসেনি তার
চোখে শুধু কান্না ছাড়া।তার চারদিন
পরের কথা, হঠাৎই নয়নের ফোন বেজে
উঠে। সে ডিসপ্লেতে দেখে একটি
অচেনা নাম্বার। রিসিভ করেই শুনতে
পায় তার বাবা খুবই অসুস্থ, সে যেন
এখনি রওনা দেয়। আর কিছু না ভেবে
সাথে সাথেই সে বাড়ির উদ্দেশ্যে
রওনা দেয় কিন্তু যখন সে পৌছলো
ততক্ষণে তার বাবা পৃথিবীরমায়া
কাটিয়ে চলে গেল। তার চোখে
কান্নারফোয়ারা ছুটতে থাকে। দাফন
শেষে বাড়ি এসেসে যা শুনতে পায়
তাতে সে তার বাবার মৃত্যুর জন্য
নিজেকেই দায়ী করে। সে জানতে
পারে, তার বাবা অনেকদিন ধরেই
অসুস্থ ছিলো। আর যে টাকাগুলো সে
মিথ্যেবলে নিয়ে গিয়েছিল
আদ্রিতার জন্য এগুলো আসলে তার
বাবা নিজের চিকিৎসার জন্য
জমিয়েছিলো। পাছে ছেলের কষ্ট
হবে তাই নিজের চিকিৎসার কথা না
ভেবেই নয়নকে টাকা গুলো
দিয়েছিলো………