আজব এক নিয়ম, তোমাকে হয় ডাক্তার হতে হবে না হয় ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কম করে হলেও ব্যাংকার। ঠিক যেন "3Idiots" মুভির মত, জন্মের পর পরই আত্নীয়-স্বজনরাই লক্ষ্য ঠিক করে দেয় "ফারহান কোরেশি ইঞ্জিনিয়ার বোনেগা"।
কিন্তু সেই ফারহান কোরেশির কি হওয়ার ইচ্ছা তা কেউ কোন দিন জানার চেষ্টাও করে নি।
কিছুদিন আগে দেখলাম আমার ছোট বোন গরুর রচনা মুখস্ত করছে, কারণ বইয়ে যেরকম লিখা আছে হুবহু সেই ভাবে পরীক্ষায় না লিখতে পারলে বেশী নাম্বার পাওয়া যাবে না, যদিও সে গরু সম্পর্কে মুখস্ত করা ছাড়াই ভাল ধারনাই রাখে। আহা!!! এই গরুর রচনা মুখস্ত করে তার কি কাজে আসবে তা আমার জানা নেই, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তকরা জানতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেই উচ্চ শিক্ষার জ্ঞান প্রচারের মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজি । এই যদি হয় অবস্থা তাহলে ৫২ তে ভাষা আন্দোলনের দরকার ছিল বলে আমার মনে হয় না। অনেকেই হয়তো এখানে বলবেন চাকরি জীবনে ইংরেজির দরকার আছে তাই এখন থেকেই চর্চা করানো হচ্ছে। হ্যাঁ তা আমি মানি, কিন্তু তাহলে আমরা আগের ১২ বছর শিক্ষা জীবনে কী ইংরেজি শিখলাম। হ্যাঁ আমরা ১২ বছরেও ইংরেজি শিখতে পারি নি, কারণ আমাদের ইংরেজি ভাষার পরিবর্তে ঐ ১২ বছর ইংরেজি ব্যাকরন গেলানো হয়েছিল।
ছোট বেলায় আমাদের একটা বই ছিল "কম্পিউটার শিক্ষা" । আমাদের মুখস্ত করতে হত এরকম ভাবে, মাউস: মাউস দেখতে ইদুরের মত, এটা দিয়ে কম্পিউটারকে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয়। বা, কী-বোর্ড: কী-বোর্ড দিয়ে কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া হয়। আরে ভাই একদিন কম্পিউটার ল্যাবে নিয়ে গেলেই তো সব শেষ। কলেজে আমাদের প্রোগ্রামিং শিখানো হত। কতই না ভাল খবর, কিন্তু মজার ব্যাপার হল প্রোগ্রামিং শেখানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হত খাতা-কলম কোনো কম্পিউটার নয়।
গত কিছু বছর ধরে বাংলাদেশে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাদের কাজ হল A+ ব্যাবসা। শিক্ষক-ছাত্রদের উপর নির্ধারণ করে দেওয়া হয় এই আমার এত শতাংশ A+ চাই, তাহলে বোর্ডে আমার কলেজের স্থান এত তম হবে। ফলে পরের বছর স্টুডেন্ট বাড়বে আর ব্যাবসাও হবে রমরমা।
এই যদি হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তাহলে তো শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড না হয়ে বোঁঝা হয়ে যাবে। আশা করি একদিন বাংলাদেশে একটি সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা দেখতে পাব।
©শাহাদাত শুভ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০০