somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের কৃষিখাত এভাবেই নীরবে একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বাজারে গিয়ে দেখি পেঁয়াজের দাম ১৫ টাকা কেজি। খুশির খবর। যে জাতি প্রায়ই ৫০/৬০ টাকায় পেঁয়াজ কিনে খায় আর সরকারকে গাল পাড়ে, পত্রিকায় “পেঁয়াজ এর ঝাঁজে মানুষের দুর্ভোগ” মার্কা সংবাদ পড়ে ভাবে একটা সময়োপযোগী নিউজ, তাদের কাছে এটা অতি আনন্দের খবর। কিন্তু আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই আমাদের চাহিদা মিটায় ভারতীয় পেঁয়াজ । আর বাজারে এখন মাত্র উঠতে শুরু করেছে দেশি পেঁয়াজ। ঠিক এই সময়ে পেঁয়াজ এর দাম কমা মানে আমাদের দেশি কৃষকদের লোকসান। ফলে কৃষকরা পরবর্তীতে পেঁয়াজ চাষে নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। এই সুযোগে বাংলাদেশের পুরো পেঁয়াজ এর বাজার ভারতের হাতে চলে যাবে। পাঠক দয়া করে ভেবে বসবেননা আমি স্বাধীনতার বিপক্ষের প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি যে নাকি যুদ্ধপরাধিদের বিচার বানচাল করতে ব্লগে এসেছে।
প্রশ্ন হল, ভারতের রপ্তানিকারকরা সারা বছর আমাদের পেঁয়াজ খাওয়ায় ৪০/৫০ টাকা কেজি দরে, তারা হঠাত এত ফেরেশতা কিভাবে হল যে প্রতিযোগিতার বাজারে তারাও দাম কমিয়ে ১৬ টাকা দরে পেঁয়াজ রপ্তানি করে ? দুটো কারন হতে পারেঃ
১) আসলে এই দামে রপ্তানি করেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট লাভ করছে অথবা
২) প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শুধু এই সময়ের জন্য তারা লোকসানে বিক্রি করছে যাতে পরবর্তীতে গোটা বাজার দখল করতে পারে।
যদি প্রথম কারন টা সত্যি হয় তবে সরকারের উচিত কেজি ১৫ টাকার বেশিতে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করা আর দ্বিতীয় কারন সত্যি হলে সরকারের উচিত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পেঁয়াজ আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা যাতে দেশীয় কৃষকরা বাজারে টিকে থাকতে পারে এবং আরও বেশি পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ পায়।
ভারতের সেভেন সিস্টার্সে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের যে সম্ভাবনা ছিল তা ভেস্তে গেছে ভারতের সরকারের অতি রক্ষণশীল মনোভাবের কারনে। বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত সরকার এত বেশি শুল্ক আরোপ করেছিল যাতে ওই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয় বাংলাদেশ থেকে সহজে আমদানির পরিবর্তে বিপুল পরিমান ট্রান্সপোর্ট খরচের বহর নিয়ে আসা ভারতীয় পুর্বাঞ্চলীয় পণ্য ব্যবহার করতে।
আমি ভারত সরকারের এই পলিসির সমালোচনা করতে পারছিনা এই কারনে যে অভ্যন্তরীণ শিল্পকে বাঁচাতে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া রাষ্ট্রের তথা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাহলে আমাদের কৃষকরা কি দোষ করলো ? আমাদের রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে কি এটা পড়ে না? কৃষকদের বাচানোর জন্য দুই চার জন বিশিষ্ট কৃষি সাংবাদিকদের ব্যক্তিদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারের দরকার নাই। দরকার কৃষি বান্ধব নীতি ও তার প্রয়োগ।
সামুর প্রথম পাতাতেই তো বেশ কিছুদিন ধরে ঝুলে আছে তিতাস নিয়ে স্টিকি পোস্ট। পাঠক একবার ভেবে দেখুন ওই অঞ্চলে সেচের জন্য কি পরিমান অর্থ ব্যয় হবে? আর তার জন্য কি পরিমান ডিজেল আমদানি করতে হবে? সেই ডিজেলের অর্থ কোথা থেকে আসবে ? আসবে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিক ভাইদের রেমিটান্স, দেশের বিপুল গার্মেন্টস শ্রমিকদের শ্রম, ব্যবসায়িদের শ্রম, আপনার, আমার সবার ট্যাক্স থেকে।
আবার পেঁয়াজ এ ফিরে আসি। আরেক টা জিনিস লক্ষ করলাম অনেক ক্রেতা দেশি পেঁয়াজ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছেন। এর পিছনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস দায়ী। সারাবছর যা খেয়ে অভ্যাস হয়েছে বাজারে গিয়ে আমরা তারই খোঁজ করছি। যেকোনো অঞ্চলের খাবার অবশ্যই তার সংস্কৃতির মাঝে পড়ে। আর সেই সংস্কৃতিতে যদি আঘাত বা দখল করা যায় তাহলে বাজার দখল সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই ব্যাপার টা আমার কাছে ভয়ানক আগ্রাসি মনে হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিতে যা দেশীয় কৃষকদের বাজার নষ্ট করতে জন্যে যথেষ্ট।
বেশ কয়েক বছর আগে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে বিতর্ক করতে গিয়েছিলাম। বিতর্কের বিষয় সঠিক মনে নেই। তবে পররাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য টাইপের একটা কিছু ছিল। বিতর্কের পর বিজ্ঞ জাজ কথা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন “আপনারা লিখে রাখুন আজ থেকে ১০ বছর পরে বাংলাদেশে কোন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে না। আমরা মাংস খাব কি খাবনা টা নির্ভর করবে ভারতীয়রা আমাদের পেঁয়াজ রপ্তানি করবে কি না তার উপর”। হয়তো ভুল বলেননি সেই জাজ।











১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×