somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কঠিন প্রতিযোগিতা, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য কিছু কথা।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। এই পোস্টটি মূলত পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তিচ্ছুকদের জন্য।
পরীক্ষার পর শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি। আর কোচিং ব্যবসায়িদের পোয়াবারো। নানা রঙে ঢঙে প্রসপেক্টাস ছাপিয়ে ভাড়া করা সেলসম্যানদের এইচএসসি কেন্দ্রের সামনে দাড়া করিয়ে শিক্ষার্থী নামক মুরগি শিকারে ব্যাস্ত হবে সবাই। যেহেতু মুরগির চেয়ে মুরগির বাবা-মা রা বেশি চিন্তিত তাই কান টানলে মাথা আসে ফর্মুলা অনুযায়ী প্রসপেক্টাস, ব্রোশিওর এর বন্যা বয়ে যায় অভিভাবকদের হাতে হাতে। প্রসপেক্টাস এর প্রথম পাতায় গত বছরের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রথম হওয়া দের হাসি মুখে ল্যাপটপ নেওয়ার দৃশ্য। ল্যাপটপ তুলে দিচ্ছেন কোচিং এর মাননীয় পরিচালক মহোদয়। তাঁরও দাত গোনা যাচ্ছে।
কিন্তু একি!!!!! একই মুরগির ছবি এত ফার্মের বিজ্ঞাপনে!!! তবে কোন খামারে আসল খাদ্য উৎপাদন করা হয় যা খেলে দেশি মুরগি হবে ফার্মের মুরগির মতো নাদুস নুদুস? যা খেলে দেশি মুরগি রাজহাঁস সাইজ এর ডিম ৩৬৫ দিনই দিবে?
চলুন এই বাণিজ্যিক ভাবনা একটু দূরে সরিয়ে কিছুক্ষন এর জন্য বাস্তব জগতে আসি।
আর্টস আর কমার্স পড়ুয়া দের ক্ষেত্রটা মোটামুটি নির্দিষ্ট। আর্টস বা কমার্স পড়ুয়াদের বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ বেশ কম।
তিন বিভাগের শিক্ষার্থীর মাঝে বিপদটা বেশি সায়েন্স পড়ুয়াদের। আর এই বিপদের অন্যতম কারন অভিভাবকদের স্বেচ্ছাচারী প্রত্যাশা। বাবা মা পারলে আকিকা দেওয়ার সময়ই ঠিক করে রাখে শিশু বড় হয়ে কি হবে। কেউ কেউ তো বাচ্চা হওয়ার আগেই ভাবে, মেয়ে হলে ডাক্তার আর ছেলে হলে ইঞ্জিনিয়ার।
যাই হোক, সহজ কথায় কিছু পরামর্শ শিক্ষার্থীদের জন্য।
বায়োলজিতে ভাল হলে মেডিক্যাল কোচিং করতে পারো।
ধরে নিচ্ছি মেডিক্যাল এ চান্স পেয়েছ। এবার পড়ার চিন্তা। প্রফ পরীক্ষার আগে অবর্ণনীয় পড়ার চাপ নিয়ে পড়া, কঠিন ভাইভা এ সবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আর কোন কোর্সে ফেল করা খুবই কমন। মানে হচ্ছে পরের নিয়মিত পরীক্ষার সাথে ফেল করা কোর্সের পরিক্ষাও দিতে হবে। এমবিবিএস করতে ৫ বছর। তারপর আছে ইন্টার্নশিপ। প্রায় ছয়, সাড়ে ছয় বছরের ধাক্কা। আর এখন মানুষ কথায় কথায় স্পেশালিষ্টের কাছে ছোটে। সুতরাং এফসিপিএস বা এফআরসিএস। আরও ৫ বছর। তারপর সফলতা আসবে। সুতরাং মেডিক্যাল এ চান্স পেলে দুহাতে টাকা কামাবে এমন চিন্তা থাকলে না পরাই ভাল। তবে ইন্টার্নশিপ চলার সময় থেকে উপার্জন শুরু হয়। সুতরাং শুধু চান্স পেলে নয় বরং মেডিক্যালে পড়তে গেলেও ভাল ধৈর্য আর পরিশ্রমের প্রয়োজন।
এবারে আসি কোচিং এর কথায়। মাথায় রাখ মেডিক্যাল কোচিং করলে অন্য কোন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে যাওয়া বেশ কঠিন। কারন মেডিক্যাল এর ভর্তি পরীক্ষায় কোন ম্যাথ নাই। সায়েন্স এর সব সাবজেক্টের ভর্তি পরিক্ষাতেই কম বেশি ম্যাথ থাকে। তার মানে দাঁড়ায় মেডিক্যাল এ চান্স না পেলে অন্য কোথাও চান্স পাওয়াটাও বেশ কঠিন। অনেকেই কঠিন ভাবে ডিটারমাইন্ড যে মেডিক্যালেই পড়বে। তারা প্রথম বার চান্স না পেয়ে এক বছর কঠিন পরিশ্রম করে শুধু মেডিক্যাল এর জন্য। বর্তমানে চান্স পাওয়াদের মাঝে এদের সংখ্যা বিপুল। আর নিয়মিত ছাত্র ছাত্রি তো আছেই। তাই যে সিদ্ধান্তই নাও ভেবে চিন্তে নাও।
যদি ম্যাথ এ ভাল দখল থাকে তবে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করতে পারো। অনেকেরি আজীবন লালিত স্বপ্ন বুয়েট এ পড়ার। উত্তম স্বপ্ন। তবে কোচিং এ ভর্তি হওয়ার আগে এইচএসসি পরীক্ষা কেমন হয়েছে এই বিষয়টা বার বার ভেবে দেখ। এ বছত সম্ভবত শুধু আবেদন করতেই ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ আর ইংলিশ চার বিষয়ের মাঝে ন্যূনতম তিনটিতে এ+ আর একটিতে এ পেতে হবে। অনেককেই দেখেছি কোচিং এ ভর্তি হয় পরে কাঙ্খিত রেজাল্ট না হওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেনা। এর দৃশ্যমান ফলাফল এর চেয়ে অদৃশ্য ফলাফল টা অনেক বেশি ক্ষতিকারক। স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় অনেকেই অন্যান্য পরীক্ষা ঠিকমত দিতে পারেনা। আর বর্তমানে এ+ এর যে ছড়াছড়ি তার মাঝে ভাল পরীক্ষা দিলেই যে চান্স পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং অভিভাবক আর শিক্ষার্থী উভয়কেই সতর্ক পদক্ষেপে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বুয়েট ছাড়াও অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যথেষ্টই ভাল (রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট)। এর যে কোন একটাই হতে পারে সফলতার সিড়ি যদি ব্যবহার করা যায়।
এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি। ভাল শিক্ষার্থীদের কাছে মনে হতে পারে তুলনামুলক সহজ। আর এই সহজ ভাবাটাই সবচেয়ে কঠিন ভুল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর চেয়ে তুলনামুলক কম জিপিএ চাওয়া হয়। তাই একটু কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা জান লড়িয়ে দেয় একটা সিটের জন্য।
আবার অনেকের ইচ্ছা থাকে কোন নির্দিষ্ট ভার্সিটিতে বা নির্দিষ্ট সাবজেক্টে পড়ার। অনেক সময়ই ইচ্ছা পুরন হয়না। পছন্দের সাবজেক্টে পড়ার তীব্র ইচ্ছার জন্য অন্য ডিপার্টমেন্টে চান্স পেয়েও ভর্তি হয়না। বরং প্রস্তুতি নেয় পরের বছরের জন্য। তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ এমন ভুল যেন না করে। আল্লাহ্‌ না করুন হয়তো পরের বছর এই সিট টাও পেলে না তখন ?? সুতরাং চান্স পেলে অবশ্যই কোথাও ভর্তি হয়ে থাকা উচিত। একাধিক জায়গায় চান্স পেলে তখন দেখা যাবে কোনটা সবচেয়ে ভাল।
অন্যান্য কিছু কথা না বললেই নয়। ঢাকার বাইরে থেকে অনেক ছাত্র ছাত্রী কোচিং করতে এসে জড়ো হয় ফার্মগেট এ। থাকে ফার্মগেটেরই আশেপাশে কোন মেসে বা বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে একত্রে বাসা ভাড়া করে। অনেকেরই এটা এমন লম্বা সময়ের জন্য পরিবার থেকে প্রথম দূরে থাকা। সুতরাং মাথার উপর ছাতা ধরার কেউ নেই। নাকে লাগাম পরানোরও কেউ নেই। স্বাধীনতা। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা। আর বয়সটা ঠিক নিয়ম মানার জন্য না, তার চেয়ে নিয়ম ভাঙ্গার দিকেই বেশি ঝোঁকে। তাছাড়া ফার্মগেটের কাছেই সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান। বহু আকাঙ্খিত এই স্বাধীনতার ব্যবহারটা তাই সাময়িক আনন্দের জন্য ভাল ঠেকে। কিন্তু জীবনটা তো ১০০ মিটারের স্প্রিন্ট না বরং ২৬ মাইলের ম্যারাথন। তাই অনেকের ক্ষেত্রে এই আনন্দের মূল্য কখনও ১ বছর আবার কারও জন্য সাড়া জীবনেও শোধ হয় না। অনেক ব্রিলিয়ান্ট বন্ধুদের দেখেছি বখে যেতে।
পরীক্ষার্থীদের বলবো আবেগ নয় বরং বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নাও। তোমার সামর্থ্য অন্য যে কারও চেয়ে তুমিই ভাল জান এবং বোঝো। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ সিনিয়র কারও পরামর্শ নাও। এই সময় প্রচুর আজাইরা উপদেশ দাতা আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে যারা বর্তমান প্রতিযোগিতা সম্পর্কে খবর রাখে না, তাদের থেকে কিঞ্চিৎ দূরে থাকাই উত্তম।
আর অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দিবেন না। চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের ফলাফল খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আপনার নিজের স্বপ্ন সন্তানকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাতে চান ভাল কথা। তবে সন্তানের চাওয়া এবং তার সপ্নের কথাও গুরুত্ব দিন। নাহলে বাকি জীবন হয়তো আফসোস করতে হতে পারে।
আর সরকারের জন্য দুইটা ফ্রী উপদেশ।
১। কোচিং বন্ধ করার জন্য বড়বড় কথা না বরং প্রয়োজন সদিচ্ছা আর সামান্য মাথা খাটানোর। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর পরীক্ষা তাড়াতাড়ি নিয়ে নিন। তাহলে সময়ের অভাবে হলেও কোচিং বন্ধ হবে, অর্থের অপচয় কমবে আর প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হবে ।
২। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর পরীক্ষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সিরিয়াল মেনটেইন করুন। প্রায় প্রতি বছরই রাজশাহী ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা হয় সবার আগে। হাস্যকর। যে ছেলেটা রাজশাহিতে চান্স পেয়ে ভর্তি হবে, সে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তে চান্স পেলে রাজশাহির এর ভর্তি বাতিল করবে। তারপর ডি.ইউ. তে ভর্তি হবে। আর তার বাতিল করা সিটে ওয়েটিং থেকে ডাকবে যেখানে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে। ইউজিসি এর উচিত দেশের সব ভার্সিটির রাঙ্কিং করা, রাঙ্কিং অনুযায়ী শীর্ষ ক্রম থেকে পরীক্ষা নেওয়া।
কথাগুলো ধার করা নয় বরং আমার উপলব্ধি ও স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকেই বলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:৩৯
১১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×