somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউশনি রঙ্গ

০৩ রা আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত দুটো টিউশনি করিয়েছি। দুটোরই অভিজ্ঞতা চরম উদ্ভট।
প্রথমটা ছেলে। আমার চেয়ে ছাত্রের ওজন দ্বিগুণ আর আয়তন তিনগুন। পড়াশুনার বেলায় খালি কলসি, তাই বাজে বেশি। ছাত্রের উপর আবার নাকি মাঝে মাঝে পরী ভর করে। ছাত্রের বাবা ডাক্তার। খরচের হাতও উন্মুক্ত। শুধু আমার বেলায় হাত মুষ্ঠিবদ্ধ। যাই হোক সে আরেক কাহিনি। আমার ছাত্রের ঘটনা বলি।

আমি বেশ হালকা পাতলা গড়নের। ঢাকাইয়া আলট্রা মডার্ন ছাত্র আমারে কয় স্যার আপ্নের কি হইছে? আপ্নের শইলে কিছু নাই। কি খান? পড়াবেন ক্যামনে?

কয়েক সেকেন্ড ভাবলাম। ইজ্জতের উপর হামলা। এই প্রশ্নের উপর নির্ভর করবে আমি ছাত্রের উপর কর্তৃত্ব করব নাকি ছাত্র আমার উপর কর্তৃত্ব করবে।

বললাম “আসলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবাইকে সব কিছু দেয় না। যেমন তোমার দিকে দেখ। তোমার যা আছে সব গিয়ে জমেছে তোমার শরীরে, পেটে। মাথাটা খালি। আর আমার হয়েছে উল্টা ঘটনা। আমার যা আছে বেশিরভাগ গিয়ে জমেছে মাথায়, তাই শরীরে একটু টানাটানি চলছে। সেটা কিভাবে বাড়াতে হবে তাও প্রয়োজনের সময় মাথা খাটিয়ে বের করব”।
বলাই বাহুল্য ছাত্র আমার পুরাই ক্লিন বোল্ড।

যাই হোক বেশি দিন পড়াইনি। দুই মাস পড়িয়েছিলাম, দ্বিতীয় মাসের বেতনও নেইনি

ভার্সিটির এক বড়ভাইয়ের রিকোয়েস্টে আরেকটা টিউশনি। এবারে ছাত্রী, বাসা মগবাজার। ভিকারুন্নিসাতে পড়ে ক্লাস এইটে। গাড়ি দিয়ে স্কুলে যায়, নিজের বেড রুমের সাথে কালার ম্যাচ করা এসি ছাড়া ঘুম হয়না টাইপ পুতুপুতু মেয়ে।

সচেতন ভাবেই আমি খুব সিম্পলি যেতাম আর বহু কষ্টে অভ্যাসের বাইরে গিয়ে কথা কম বলার চেষ্টা করতাম।
আমাকে দেখে আধাগাঁইয়া আধাশহুরে মনে হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। ইন ফ্যাক্ট আমি চেয়েছিলাম সেভাবেই নিজেকে প্রেজেন্ট করতে।

তাতেও বিপদ। পড়াতে যাবার ২য় বা ৩য় দিনে ছাত্রী আমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে বসলো স্যার ফিজিক্যাল রিলেশন করা কি খারাপ?? আমি পুরাই টাশকিত। ক্লাস এইটের মেয়ে বলে কি? জ্ঞান বৃক্ষের যাবতীয় ফল এর মধ্যেই খাওয়া শেষ করেছে নাকি?

ছাত্রীর অ্যাটিচুড বোঝার চেষ্টা করলাম। গরম মাথা ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য ব্রেন সেল গুলোকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সময় দিলাম রিলাক্স করার জন্য। তারপর সাজিয়ে নিলাম কি উত্তর দিব। উত্তরের উপর নির্ভর করবে আমার ইজ্জত।

আসলে ব্যাপারটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। বয়স, পরিবেশ, সম্পর্ক আরও অনেক কিছু। তুমি যদি কোন নববিবাহিত দম্পত্তিকে গিয়ে বল ফিজিক্যাল রিলেশন করা খারাপ আপনারা বিরত থাকুন আর এর বদলে তারা যদি তোমার দুই গালে দুই থাপ্পড় দেয় তাহলে তাদের খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় না। তারপর তুমি যদি তোমার মাকে গিয়ে বল ফিজিক্যাল রিলেশন করা খারাপ না, তুমিও তা করতে চাও, শুনে তোমার মাও যদি তোমার গালে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে দেয় তাকেও দোষ দেওয়া যায়না। দুই যায়গায় থাপ্পড় খেয়ে তুমি যদি আমাকে গিজ্ঞাসা কর সব দোষ কি তোমার, তাহলে আমি বলব নাঃ, তোমাকেও খুব বেশি দোষ দেওয়া যায়না”।

যাই হোক প্রথম সাময়িক পরিক্ষায় গনিতে ফেল করা ছাত্রী আমার দ্বিতীয় সাময়িক পরিক্ষায় ৬৫ পেয়ে পাস করে। অবশ্য পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন হাতে পেয়ে। পাঠক কি থমকে গেলেন ? আমিও গিয়েছিলাম। স্কুলের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়লে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন বলে দেওয়ার কালচার যে ভিকারুন্নিসার মত প্রতিষ্ঠানে হতে পারে তা আমারও ধারনার বাইরে ছিল। কিন্তু এটাই সেখানকার নিয়মিত কালচার।
জ্বি, প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় প্রশ্ন পেয়েও ছাত্রী আমার ফেল করেছিল। সেই ফেল করা ছাত্রী দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ৬৫ পাওয়ার পর ছাত্রীর মা আমাকে বলে মাত্র ৬৫ পেল কেন? টিউশনির ওইখানেই ইতি। কন্যা আপনার পাস করেছে এটাই তো যথেষ্ট। তাই নয় কি?

ওটাই ছিল শেষ টিউশনি। তার পর আর পড়াইনি, পরানোর ইচ্ছাও নেই।

যাই হোক, টিউশনি নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু মতামত/অভিমত আছে। সেগুলো হয়ত বলব অন্য কোন সময়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২১
৫৪টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×