somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অলস দুপুরে আমার আত্মমগ্ন চিন্তা

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অলস দুপুরে অস্থির মনটাকে কোথাও আটকাবার জন্য পাতা উলটাচ্ছিলাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দূরবীন। প্রত্যেক বার বইটা পড়ার সময়ই মনে হয় নতুন কিছু পড়ছি, নতুন কিছু আবিস্কার করছি। আজ হঠাত একটা লাইনে এসে থমকে গেলাম।
“একটি সদ্যোজাত শিশু মাতৃহারা হবে।”

কি নিষ্ঠুর একটা বাক্য লেখক কি অবলীলায় লিখে ফেলেছেন। জানতে ইচ্ছা করছে লেখক কি শুধু কাহিনীর প্রয়োজনেই বাক্য সাজিয়েছিলেন নাকি এর পিছনে কোন গভীর কারণও ছিল। আবার এটাও মনে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা বিশীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকদের হয়ত পরম করুনাময় বিশেষ কিছু গুণ দিয়েই পৃথিবীতে পাঠায়। যে কারনে তাদের কলম থেকে অবলীলায় বেরিয়ে আসা আপাত সাধারন কোন বাক্য নিয়ে চলে নিরন্তর গবেষণা। অর্জিত হয় শত সহস্র এমফিল, পিএইচডি। আর তারা ওপারে বসে আড়চোখে আমাদের অকারন মহাযজ্ঞ দেখে নীরবে মুচকি হাসে।

আবার সেই বাক্যে ফিরে যাই। “একটি সদ্যোজাত শিশু মাতৃহারা হবে।”

একটা নিষ্ঠুর মহাসত্য লুকিয়ে আছে এখানে। যারা জন্মের সময় মাতৃহারা হয় তারা কেউই নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ি নয়। প্রকৃতিই বলি বা স্রষ্টাই বলি তাদের এই দুর্বোধ্য নিয়তির সবচেয়ে বড় ফলভোগকারি হল সেই শিশু যে নিজের মা হারিয়েও জানতে পারে না অনাগত ভবিষ্যৎ কি নিষ্ঠুরতা নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য। কোন কোন সৌভাগ্যবানরা হয়তো বেঁচে যায় নিজেরাও মায়ের সাথে চলে গিয়ে, আবার কেউ কেউ বাবা কিংবা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের মহানুভবতায় যাপন করে স্বাভাবিক জীবন। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয় বলেই মনে হয়।

নিজের জন্ম, জন্মস্থান, মা বাবা এ বিষয়ে কোন মানব সন্তানেরই পছন্দসই কিছু গ্রহন বা বর্জনের সুযোগ নেই। এই সত্যই বা কয়জনে অনুভব করি?

কর্মসূত্রে কয়েকবছর আগে এক সেফ হোমে গিয়েছিলাম। যৌনকর্মীদের সন্তানদের লালন পালন করা হয় সেখানে। ৪ বা ৫ বছরের এক ছেলে আমাদের অনেকগুলো কবিতা আর গান শুনিয়েছিল। ওই বয়সের যে কোন শিশুর তুলনায় যা অসাধারণ। তবে আমি নিশ্চিত পরিবেশ ও সময় তাদের বাস্তবতার নির্মম আঁচড়ে ছেলেটিকে ঠিক বুঝিয়ে দিবে “তুই ব্যাটা নটির ছেলে তোর এত শিখার দরকারই বা কি?” এই বাস্তব কাউকে দৃঢ় হতে শেখায় আর কাউকে ধ্বংস করতে শেখায়।
সেফ হোমের পরিচালক ও কর্মচারীদের কাছে শুনেছি ৪০-৫০ জন শিশুর মাঝে মাত্র একজনের বাবা তার সন্তানের সাথে দেখা করতে যায়। সমাজের কাছে সেই বাবা নিজের সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দেবার সৎসাহস হয়ত রাখে না তবে নিজের বিবেকের আদালত থেকে জামিন পেতে তাকে কিছুদিন পর পর ঢাকা থেকে কয়েকশ কিমি. দূরে গিয়ে দেখা করে আসতে হয় নিজের উত্তরসূরির সাথে। ওই মুহূর্তে মনে হয়েছিল এই ভালো কাজটুকুর জন্য সেই বাবার সহস্র অপরাধ ক্ষমা করা যায়। রাস্তাঘাটে, স্কুলে বা সমাজে অন্যান্য যায়গায় সেফ হোমের শিশুদের সাথে আমি বা আমরা যে আচরন করি সেটা যখন তাদের মুখ থেকে শুনি তখন নিজেকে সভ্য সমাজের কেউ ভাবতে ঘেন্না হয়। ঘেন্না টুকু সাময়িক। ওই পরিবেশ থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক পরিমণ্ডলে আসার পর আবার আমরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হই আর এই ভেবে স্বস্তি খুঁজি “আমি নিজেই শতেক সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছি অন্যের সমস্যার কি সমাধান করব?”।

প্রসঙ্গ অবতারনা করেছিলাম “একটি সদ্যোজাত শিশু মাতৃহারা হবে” দিয়ে। উপরের উদাহারন আর কথাগুলো হয়তো প্রসঙ্গের সাথে যায় না। কিন্তু তবুও দিলাম।

আমিতো আর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় নই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৭
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×