somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Birthday of A legend (Frank Lampard)

২০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিখ্যাত বাবার ছেলে হয়ে বেঁচে থাকা কঠিন, কিন্তু 'বিখ্যাত বাবার ছেলে' হয়ে ওঠাটা তার চেয়েও কঠিন। বাবার নামটাও তার নামের সাথে মিলে, ফ্র্যান্ক ল্যাম্পার্ড সিনিয়র, আর তার নাম ফ্র্যান্ক ল্যাম্পার্ড জুনিয়র। বাবা ছিলেন প্রাত্তন ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট হ্যাম ডিফেন্ডার। ছেলেও বাবাকেই অনুসরণ করে, তবে একটু ভিন্নভাবে, একই ক্লাবের ইউথ অ্যাকাডেমিতে খেললেও পজিশন ছিল ভিন্ন- সেন্টার মিডফিল্ডার।

১৯৯৪ সালে যখন হ্যামারদের হয়ে ইউথ ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন বাবা ছিলেন ক্লাবের অ্যাসিস্টেন্ট কোচ। তাই বেশি দেরি করতে হয়না, ওই বছরেই নাম লেখান সিনিয়র স্কোয়াডে। পরে দ্বিতীয় বিভাগের দল সোয়ানসিতে যান লোনে, যদিও তেমন কোনে লাভ হয়নি। মৌসুম শেষে যখন ফিরলেন ওয়েস্ট হ্যামে তখনো কোনো লাভ হলো না। পরের মৌসুমে খেললেন মাত্র দুটি ম্যাচ, তাও আবার বদলি হিসেবে। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে খেলেন প্রথম ফুল টাইম ম্যাচ। পা ভেঙে যাওয়ার ফলে মৌসুমটি শেষ হয়ে যায় ল্যাম্পার্ডের। মৌসুমে মোট ম্যাচ খেলেন ১৬ টি। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমটি ছিল তার জন্য ক্যারিয়ার চেন্জিঙ, প্রথম ম্যাচেই বদলি হিসেবে মাঠে নেমে গোল করে জিতান দলকে, ক্যারিয়ার প্রথম হ্যাট্রিকের দেখাও পান ওই মৌসুমেই। খেলেন সর্বমোট ৪২টি ম্যাচ, করেন ৯ গোল। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে দলের সাফল্যে তার হাত ছিল, দলকে লিগের পঞ্চম স্থানে ও ইন্টারটোটো কাপের কোয়ালিফায়িং রাউন্ডে নিয়ে যান। পরের মৌসুমে ল্যাম্পার্ড ছিলেন আরো তুখোড়, দলকে ইন্টারটোটো কাপ জিতান, ফাইনাল ও সেমি ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ গোলসহ মোট গোল করেন ৩টি। মৌসুম শেষ করেন দলের ৩য় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে।

তবে পড়ের মৌসুমেই দল নিজেদের পথ হারায়, গত মৌসুমের পঞ্চম অবস্থানে থাকা দল এবার পায় ১৫ তম স্থান। চাচা হ্যারি রেডন্যাপ আর বাবা ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়েন, সাথে ল্যাম্পার্ড নিজেও। এই বিদায়ের অন্যতম কারণ ছিল ক্লাবের সমর্থকদের সাথে তিনজনের খারাপ সম্পর্ক।

তারপর চেলসি তাকে কিনে নেয় ১১ মিলিওন পাউন্ডে। প্রথম মৌসুমেই করেন ৮ গোল। তারপর শুরু হয় চেলসির এক নতুন অধ্যায়, রোমান আব্রাহিমোভিচ অধ্যায়। এই অধ্যায়ের প্রথম মৌসুমেই লিগে চেলসি পায় লিগের ২য় স্থান,আর ল্যাম্পার্ড করেন ১০ গোল। নিয়ে যান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমি-ফাইনালে।
২০০৪-০৫ লিগে খেলেন ৩৮টি ম্যাচ করেন ১৩টি, সব মিলিয়ে করেন ১৯ গোল, আর এসিস্ট করেন ১৬টি। এসবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল ক্রিস্টাল প্যালেসের বিরুদ্ধে ৩১ ইয়ার্ড দুর থেকে করা অবিশাস্য গোলটি। সেন্টার মিডফিল্ডার হয়েও ধারাবাহিক অসাধারণ পারফরমেন্স তাকে বিশ্বসেরাদের আসনে বসায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬ এ বার্সার বিরুদ্ধে চেলসির বিখ্যাত জয়ের নায়কও এই ইংলিশ, করেন এক গোল। কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগে তিন গোল করে দলকে নিয়ে যান সেমিতে, যাদের মধ্যে ভলিতে করা ২য় গোলটি সবার মনে থাকবে। সেই বছরেই চেলসি ৫০ বছর পর প্রথম লিগ জেতে। গোল করে দলকে জেতান লীগ কাপ। আর হন ২০০৫ বর্ষসেরা ফুটবলার।

২০০৫-০৬ মৌসুমটা ছিল আরো চমত্‍কার, লীগে মিডফিল্ডার হয়ে করেন রেকর্ড ১৬ গোল। হন বিশ্ব একাদশের গর্বিত সদস্য। অসাধারণ পারফরমেন্সের জন্য ব্যালন ডি'অর ও বর্ষসেরা খেলোয়ারের রানার্স আপ হন। টানা ১৬৪ ম্যাচ খেলে ভাঙেন টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড। মরিনহো ল্যাম্পার্ডকে বিশ্বসেরা বলে ঘোষণা করেন।

২০০৬-০৭ মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ক্যাপ্টেন্সি করেন জন টেরির অনুপস্থিতিতে। এই মৌসুমে একজন আদর্শ সেন্টার-মিডের মতো কাজ করেন, দ্রগবা-কালুদের জন্য অসংখ্য এ্যাসিস্ট করেন তিনি। ২০০৭ সালের এফএ কাপের ফাইনালের তার এ্যাসিস্টেই দ্রগবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে গোল করে চেলসিকে জেতান শিরোপা। পরের দুই মৌসুমেও চালান তান্ডব, করেন শততম প্রিমিয়ার লিগ গোল, সাথে খেলেন দলের হয়ে ৪০০ তম ম্যাচও। মৌসুমে ১৯ ম্যাচে করন ২০ গোল। টানা ৪ মৌসুমে ২০ বা এর বেশি গোল করেন, যা ছিল শুধুই অসাধারণ।

পরের মৌসুমেও একই রূপ, গোলের পর গোল, এ্যাসিস্টের পর এ্যাসিস্ট, করেন অবিশ্বাস্য ২৭ গোল। দলের হয়ে জেতেন লিগ শিরোপা ও এফএ কাপ। পরের মৌসুমে করেন ১১ ও ১০ গোল, জেতেন চেলসির পরম আরাধ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। পরের মৌসুমে জেতেন ইউরোপ লিগ। ২০১৩-১৪ মৌসুমেও মরিনহোর চেলসির মিডফিল্ড আগলে রাখার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গত ১৩ মৌসুমে চেলসির হয়ে জিতেছেন তিনটি লিগ শিরোপা, চারটি এফএ কাপ, দুটি কমিউনিটি শিল্ড, দুটি লিগ কাপ, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও একটি ইউরোপা লিগ, ১৪৭ গোল করে হয়েছেন চেলসির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

২০১৪-১৫ মৌসুমে চেলসির সাথে ১৩ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেবেন নিউ ইয়র্ক সিটি এফসি তে। তবে ক্যারিয়ার শেষে একজন ব্লুজ হিসেবে।

জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ১০৫ ম্যাচ, করেছেন ২৯টি গোল। বাকি জাতীয় দলের যা হয়েছে তা সবাই জানেন, দলটার নাম ইংল্যান্ড। তিনি সেই ইংল্যান্ড দলের সোনালি প্রজন্মের যোদ্ধা যারা হয়তো ট্রফিলেস হিসেবেই শেষ করবেন নিজেদের ক্যারিয়ার।

একজন সেন্টার মিডফিল্ডার এতগুলো গোল করেন কিভাবে? কিভাবেই বা এতটা ফিট থাকেন? কিভাবে পারেন সেট-পিস থেকে এতগুলো অসাধারণ গোল করতে? কিভাবে পারেন মিডফিল্ডার হয়েও এতটা নিখুঁত ফিনিশিং দিতে? কিভাবে পারেন এতগুলো যাদুকরী পাস দিতে, এ্যাসিস্ট করতে? কিভাবে???

চরম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এই সেন্টার-মিডফিল্ডার যেদিন ক্যারিয়ার শেষ করবেন, কমপক্ষে এইটুকু বলতে পারবেন, তিনি 'বাবার আদর্শ ছেলে' হতে পেরেছেন।

The one to keep the blue flag high...

শুভ জন্মদিন ♥ ফ্র্যান্ক ল্যাম্পার্ড ♥

A legend to remember!!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×