somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুব সমাজকে রসুল (স.) -এর নির্দেশনা

২৩ শে মে, ২০১০ ভোর ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম মানবজাতির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা, বিধানদাতা আল্লাহতা’আলার একমাত্র দ্বীন তথা জীবন বিধান। মানুষের জাগতিক জীবনে সংঘটিত জুলুম, অত্যাচার, হত্যা, সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ব্যভিচার, ইভটিজিং ও মাদকাসক্তিসহ যাবতীয় অপরাধের মূল উৎপাটিত করার ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলাম। এর জাজ্বল্যমান প্রমাণ হচ্ছে মহানবী (স.)-এর প্রতিষ্ঠিত মদীনার ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র। আজকের তথাকথিত পাশ্চাত্য সভ্যতার যুগে যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, জাহেলী যুগে এর কোন কমতি ছিল না। আর এটা দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ সমস্ত ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পেছনের মূল শক্তি হচ্ছে যুব শক্তি। এ বিষয়টি যথার্থভাবে অনুধাবন করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। তাই তিনি নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পূর্বে যৌবনের প্রারম্ভে তার সমসাময়িক যুব সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে গঠন করেছিলেন ‘হিলফুল ফুযল’ নামে একটি যুব সংগঠন। উদ্দেশ্য ছিল তদানীন্তনকালে সংঘটিত সামাজিক অপরাধসমূহের মূল উৎপাটন করার শুভ সূচনা। একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, সামাজিক অপরাধসহ যেকোন অপরাধ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন শক্তির, আর এই শক্তির আধার হচ্ছে সেই সমাজের যুবসম্প্রদায়। তাই তাদের বিবেক, বুদ্ধি, মেধা, মনন, উদ্যমসহ যাবতীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করে মহানবী (স.) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মদীনার ইসলামী সুখীসমৃদ্ধ রাষ্ট্র। ফলে স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র। যার ছোঁয়া লেগেছিল সমসাময়িক পৃথিবীতে এবং এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছিল পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনসহ অন্যান্য সময়ে।

যুব সমাজের এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামী জীবন বিধানের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহানবী (স.) পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন। অত্যন্ত সাফল্যের সাথে তিনি বাস্তবায়নও করে গিয়েছেন। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, মানুষের যৌবনকাল জীবন পরিক্রমার প্রথম সোপান নয়। বরং তার প্রথম সোপান হচ্ছে মাতৃগর্ভ, এরপর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, পৌঢ় ও বার্ধক্য ইত্যাদি। আদর্শ মানব গঠনের লক্ষ্যে ইসলাম হঠাৎ করে তার যৌবনকালের উপরই নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। তার শৈশবকালের পূর্বে মাতৃগর্ভ এমনকি তারও পূর্বে তার পিতা-মাতার যথোপযুক্ত ইসলামী শরীয়তসম্মত বিবাহবন্ধনেরও বিধান দিয়েছে। সন্তান গর্ভকালীন সময়ে পিতামাতাকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীসহ সৎ জীবন-যাপন এবং সৎ চিন্তা-ভাবনা ও কল্পনা করার জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। জন্মের পর শিশু সন্তানের ভাল ও অর্থবহ নাম রাখতে বলা হয়েছে, ‘বিকৃত নামে ডাকতে নিষেধ করা হয়েছে।’ (আল কুরআন (৪৯:১১) জন্মের পর ‘দুই বা আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর নিরাপদ পরিমিত খাবার হিসাবে মায়ের বুকের দুধ পানের বিধান দেয়া হয়েছে।’ (আল কুরআন ২: ২৩৩) যা শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। শৈশবের পর বাল্যকালের প্রারম্ভেই ‘শিক্ষা প্রদানের বিধান দেয়া হয়েছে।’ (আল কুরআন-১, ৩:৯৬) নবী করীম (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের (নর-নারী) উপর জ্ঞান চর্চা করা ফরজ।’ (বায়হাকী) বিদ্যা বা জ্ঞান ছাড়া কোন মুসলমানের পক্ষে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক জীবন-যাপন সম্ভব নয়। যখন ‘সাত বছর বয়স হয় তখন তার পিতামাতা বা অভিভাবকের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে নামাজ পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে, আর দশ বৎসর বয়সে নামাজ ঠিকমত আদায় না করলে শাসন করতে এবং তাদেরকে পৃথক বিছানায় শোয়ানোর ব্যবস্থা করতে।’ (আল হাদীস - আবু দাউদ)

শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত মানব জীবন সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হলে তা যৌবনে এসে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যার ফলে দেশ ও জাতি তো বটেই, গোটা পৃথিবী অশান্ত হতে পারে যা আজকের পত্রপত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে। খুন, হত্যা, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এর থেকে উদ্ধার পেতে হলে যুব সমাজ ও যুবশক্তিকে রসুল (স.)-এর আদর্শে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করতে হবে।

হযরত আবু উসামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যেকোন যুবক দুনিয়ার মজা ও খেলাধূলা ছেড়ে দিয়ে তার যৌবন নিয়ে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি মনোনিবেশ করবে আল্লাহ তাকে নিরানব্বই জন ‘সিদ্দীক’ এর মর্যাদা দান করবেন (তাবারানী)। এই হাদীসে দুনিয়ার মজা ও খেলাধূলা বলতে অশ্লীল ও চরিত্রবিধ্বংসী কর্মকান্ডকে বোঝানো হয়েছে। (সুস্থ বিনোদন ও শরীর চর্চামূলক খেলাধূলা নয়) মানুষ অনেক সময় আর্থিক দৈন্যতার কারণে সময়মত বিয়ে-শাদী করতে পারে না। তা অনেক সময় চারিত্রিক স্খলনসহ অনেক অপকর্মের কারণ হতে পারে। যা থেকে বাঁচার জন্য হযরত নবী করীম (স.) যুব সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে করার শক্তি-সামর্থ্য আছে তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যারা বিয়ে করতে সক্ষম নয়, তারা যেন রোযা রাখে। কেননা এটা হবে তাদের জন্য পাপ থেকে বেঁচে থাকার উপায় (বুখারী)। হযরত নবী করীম (স.) অপর এক হাদীসে বলেছেন, কঠিন হাশরের উত্তপ্ত দিনে আল্লাহর আরশের ছায়াপ্রাপ্ত সাত প্রকারের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি সেই যুবক (যুবতী), যে আল্লাহর অনুশাসন মেনে তার ইবাদত-বন্দেগীতে জীবন কাটায় এবং অবৈধ প্রেম বা কুপ্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে (বুখারী, মুসলিম)। নবী করিম (স.) অপর এক হাদীসে বলেছেন, পাঁচটি অবস্থাকে পাঁচটি অবস্থার পূর্বে মূল্যবান মনে করো: (১) বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে, (২) অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, (৩) দরিদ্রতা আসার আগে সম্পদকে (৪) ব্যস্ততা আসার আগে অবসর সময়কে, (৫) মৃত্যু আসার আগে জীবনে। তাই আমাদের যুব সমাজকে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সুনিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালনা করার মাধ্যমে আমরা শান্তিপূর্ণ আবহ তৈরি করতে অগ্রসর হই- আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন, আমীন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×