somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

প্রকৃতির ঘ্রাণে

২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখনও কিছু বেগুনি ফুল ফুটে আছে বাগান আলো করে। যখন জাকারাণ্ডা ফুটে উঠেছে দক্ষিণ গোলার্ধে বেগুনি আলো ছড়িয়ে। তখন ল্যাভেণ্ডার সৌরভ ছড়িয়ে হাসছে এখনও আমার বাগানে। কর্ডিলসি কাবা বেগুনি রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের ঝাড় নিয়ে জেগে আছে।
প্রতিবছর শরৎকালের শেষ থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত ফুটে থাকে এই ফুল। সব পাতা ঝরে বরফে ঢাকা পরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফুলগুলো ফুটতেই থাকে। প্রথম বরফের আস্তরণে ঢাকা পরেও দাঁড়িয়ে থাকে ক'দিন সৌন্দর্য নিয়ে। তারপর বরফের চাপে শীতল হয়ে গলে যায়। আবার জাগে বসন্তের আগমনে। ধীরে ধীরে বড় হয় ফুল ফুটায় শরৎ জুড়ে।





চারপাশে হলুদ আর লাল পাতার ছড়াছড়ি ফলের এ সময়ে। পরশু বিকালে বাইরে কাজ করছিলাম। কিছু গাছ এখন টবে তুলে রাখতে হবে। নয় তো ওরা আর ফিরবে না আগামী বসন্তে। আজকে উত্তাপ বিশের কোঠায় আর অনেকদিন পর রোদের আলোমাখা দিন। এ ক'দিন ধরে ক্রমাগত বসবাস করছিলাম বৃষ্টির সাথে। যেমন বাংলাদেশে, তেমন এখানে। এ বছর জুড়ে এত্ত বৃষ্টি কেন। একি দোষনমুক্ত পরিবেশের প্রভাব।
দোলনচাপার গাছটা এত্ত শক্ত সমর্থ শিকড় গছিয়েছে। অনেক ছোট গাছ শক্ত পুক্ত হয়ে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু ফুল ফোটার সময় পেল না। আর কিছুদিন মাটিতে থাকলে এবার ফুল ফুটতো গাছে। কিন্তু ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে উঠতে শুরু করেছে । পাতা হয়ে উঠছে হলুদ। গাছটা তুলতে গিয়ে গাছের গা ভর্তি সুগন্ধী দোলনচাঁপার ঘ্রাণ পেলাম। এটা নতুন অনুভব আগে কখনো গাছের গায়ে এমন অদ্ভুত ঘ্রাণ পাওয়ার সুযোগ হয়নি।
ডালিয়া গাছটার জন্য বড় মায়া লাগছে। এত কুড়ি, এত ফুল তরতাজা রক্ত লাল হয়ে বসন্ত থেকে এখন পর্যন্ত আলোকিত করে রেখেছিল বাগান। তার ফিরে আসা হবে না আর শীত শেষে । প্রতিদিন মিইয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। যদিও এখনো অসংখ্যা কুড়ি এবং ফুল ধরে আছে। টবে তুলে রাখলাম তাকেও যদি বাঁচে, এই আশায়। এতগাছ ঘরের ভিতর কোথায় রাখি তাদের আলো হাওয়া জায়গা লাগে।
কাজ করতে করতে মনে হচ্ছিল, লাল হলুদ এক ঘরের ভিতর আছি। চোখ ধাঁদিয়ে যাচ্ছিল রঙিন আলোয়।
পাতার ফাঁকে হারিয়ে যাচ্ছিল মাটি আর আমার জিনিসপত্র।
এক ব্যাগ ভর্তি আপেল তুলে আনলাম। কি করব এত আপেল দিয়ে তাই ভাবছি। গাছে আরো কয়েক ব্যাগ রয়ে গেলো। এত আপেল পরে থাকে মাঠে কিন্তু তা থেকে কোন গাছ হয় না আপনমনে। এটা আশ্চর্য লাগে।
ঢাকায় পার হচ্ছিলাম বেলিরোড দিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেল, গােলো সবুজ কুড়ির মাঝে। আহা কতদিন পরে দেখলাম। বড় বড় লম্বা পাতার গোল হয়ে ফুলের মতন ছড়ানোর মাঝে থোকা থোকা কুড়ি। আর ক'দিন পরেই ফুটবে ফুল, সাদা সাদা ছাতিম ফুল আর ঘ্রাণ ছড়াবে বাতাসে। আহা কি মিষ্টি সে সৌরভ। মন প্রাণ সতেজ হয়ে উঠে। এক সময় আমি রাস্তায় হাঁটতাম এই ফুলের সৌরভে স্নান করার জন্য। এক সময় আমার বাড়ির দক্ষিণ মুখি জানলার কাছে একটি ছাতিম গাছ ছিল। প্রতিবছর অক্টোবরে ফুল ফুটে সৌরভে মাতাবে এজন্য অপেক্ষায় থাকতাম। আমার ঘর ভরে উঠত ছাতিম ঘ্রাণে এই সময়টা।
একবার আমাকে ভীষণ কষ্টে ভাসিয়ে আগষ্টে গাছটির ডালপালা ছাটাই করা হলো। সে বছর আর ফুল ফুটল না সুগন্ধ পেলাম না। খুব মন খারাপ হয়ে ছিল আমার।
বাড়ি থেকে আসার পথেও অনেক ছাতিম গাছ দেখতাম হাইওয়ে জুড়ে। এখন মনে হয় সে সব গাছগুলি নাই আর।



আমার অদ্ভুত সব ফুল ভালোলাগে অনেকে হয়তো এদের ফুল হিসাবেও ভাবে না।
নিমফুলের বুটিবুটি তারার মতন ফুলগুলো আমার মন যত কাড়ে তারচেয়ে বেশি উতল হই তার ঘ্রাণে। ঠিক নীমের মতন একটা গাছ এবং ফুল পেয়ে গেলাম ক্যালিফোর্নিয়ায়, গত বছর। আমি ঐ গাছের নিচে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতাম প্রতিদিন। পাতার ঘ্রাণটাও অদ্ভুত লেবুঘ্রাণের মতন মিষ্টি ছিল।


সোনালু বা সোনাঝুড়ি ফুলের ঝুলে ঝুলে দোল খাওয়া দেখতে কি যে ভালোলাগে আমার। আমি অবাক তাকিয়ে থাকি তাদের দিকে, রূপে আপ্লত হই। বারবোডোসে এই গাছ দেখে আপনজন পেয়ে যাওয়ার মতন খুশি লাগছিল।
আমার খুব ভালোলাগে বেগুনি জারুল। রোকেয়া হলের সামনে এই গাছ ছিল। পাশে ছিল রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এক সাথে তিনরঙ মিলে মিশে অদ্ভুত আল্পনা আঁকত আমাদের মাথার উপর। ঝরে ঝরে পাপড়ি ফুটপাতে নানা বর্ণের আলপনায় সেজে পরে থাকত আমাদের পাশে। তা মাড়িয়ে কত প্রেম, বিরহ, নতুনের সন্ধান জীবন। সবুজ টিয়াদের ঝাঁক বাঁধা উড়াউড়ি দেখা।
রাঙ্গামাটিতে এখনো সে রাস্তাটি আছে কি না জানি না। আমাদের জিপ ছুটে যাচ্ছিল ক্যান্টনমেন্টের দিকে। দুইপাশে ঢালু সবুজ ভ্যালী। উপরে উঠে যাচ্ছিলাম ঘুরে ঘুরে। মাথার উপর নীল আকাশ,ছিটে ফোটা সাদা মেঘ আর নিচে পাহাড়ের সবুজ বিস্তৃর্ণ বনভূমি। তার ভিতর দীর্ঘ একটি রাস্তা দুপাশ জুড়ে কৃষ্ণচূড়ার সারি। গ্রীষ্ণকালে লাল কৃষ্ণচূড়া ফোটা সেই রাস্তা ছাদ হয়ে ঢেকে রেখেছে পুরো রাস্তা। আকাশ দেখা যাচ্ছে না। কি মায়াভরা একটা দৃশ্য সবুজ লালের টানেল পেরুলাম জীবনে। চোখ জুড়ে আছে মন দখল করে ওয়ালপেপার হয়ে আছে এখনও সেই পাহাড়ের উপর লাল সুরঙ্গ রাস্তা। আহা এখনকার মতন তখন হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। আর ক্যামেরা; সে ও ছিল দূর্লভ বস্তু। ছবি তোলা হয়নি তাই। কিন্তু মন জুড়ে আছে।
ঢাকায় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তাটা তখন কৃষ্ণচূড়ার বাগান ছিল। প্রায় বিকালে গ্রীষ্ণের উষ্ণতা থেকে নিবৃত্তি পেতে ওখানে যাওয়া নিয়ম ছিল। ঝরা পাপড়ি মাড়িয়ে হাঁটা। অথচ এখন সেখানে মরুভূমির খেজুর বাগান, বেশি চোখে পরে। খোলামেলা জায়গাটা কেমন যেন অন্ধকার আড়াল হয়ে আছে।



অনেকদিন পর অশ্বথের লাল লাল ফল গুলো দেখলাম এবার। বিশাল গাছ ঝুড়ি মেলে বাড়িয়ে যাচ্ছে নিজের বিস্তৃতি। কলকাতা থেকে কিছু দূরে তেমন এক ঝুড়ি বিস্তৃত বটগাছ আছে একবার সেটা দেখতে গিয়েছিলাম, আজ থেকে প্রায় পাঁচিশ বছর আগে। মূল গাছটা কোথায় তা আর পাওয়া যায় না। ঝুড়ি মেলে মেলে হাতের উপর হাতে, ভর রেখে ছড়িয়ে পরেছে এক ফুটবল মাঠের সমান জায়গা জুড়ে গাছটা। সেই গাছের গল্প শুনে তাকে দেখার ইচ্ছা জানালাম চিত্রাদির কাছে, কলকাতা গিয়েছিলাম যখন । চিত্রাদি / চিত্রা লাহিড়ী নিয়ে গেলেন সেখানে। অন্ধকার ছায়া ছায়া হয়ে আছে জায়গাটা গাছের বিস্তারে। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস বোটানিক্যাল গার্ডেনের বিশ্ববিখ্যাত দুইশ পঁচাত্তর বছরের বুড়ো বটের সাথে দেখা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার ।



ফেরার পথে গঙ্গার ধার ঘুরে, বসে সময় কাটিয়ে, নতুন হাওড়া ব্রীজ হওয়া দেখে, ফিরে এসে নিজামের দোকানের বিরিয়ানি খেয়েছিলাম, মজা করে ।
বেগুনী রঙের আরো একটি ফুল আমার মন কেড়েছে তার নাম উইস্টারিয়া জাপান এবং চীন দুই জায়গাতেই তাদের সাথে দেখা হলো। তবে আমার যাওয়া সময়ের একটু আগে হওয়ায় ফুলের সম্ভার মেলে তখনো সেজে উঠেনি বাগান। তাই বিখ্যাত জাপানের কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে উইস্টারিয়া টানেল দেখতে যাওয়া হলো না। তবে যতটুকু দেখেছি তাদের অনেকটা হলুদ সোনালু ফুলের মতন ঝুলে থাকা আর বাতাসে দোল খাওয়া দেখে মন তাদের সাথে এক মন হয়ে গেছে।
তাদের এখন প্রায় দেখি ইউরোপ গেলে। লুকিয়ে একটা ডালও এনেছিলাম ব্রুস বেলজিয়াম থেকে কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। তবে উইস্টারিয়ার সাদা রঙের ভাই যে আমার বাড়িতেই বসে আছে সেটা বুঝতে পারলাম এই বসন্তে । ঘ্রাণ ছড়িয়ে আর ভ্রমরের আকুল হয়ে ছুটে আসার এই সময়টা হয়ে উঠে স্বর্গ যেন।
বাংলাদেশে ছোটছোট নয়নতারা ছাড়া আর কোন বেগুনি ফুল আগে দেখেছি বলে মনে পরে না।
রঙে রঙিন দুনিয়া সময়ের সাথে সময় কাটে আনন্দ।



ছবিগুলো আমার তোলা বট অশ্বত্থ ছাড়া
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:১৩
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×